হাঁস-মুরগি ও মাছের খাবারের জোগান দেবে কালো সৈনিক পোকা

শাহীন সরদার, বাকৃবি (ময়মনসিংহ)
প্রকাশ: ৩০ নভেম্বর ২০২১, ১৫:১৫

কালো সৈনিক পোকা
কালো সৈনিক পোকা বা ব্লাক সোলর্জাস ফ্লাইয়ের লার্ভা বিভিন্ন বর্জ্য ভক্ষণ করে বেড়ে ওঠে। হাঁস-মুরগি ও মাছের বিকল্প খাবার হিসেবে ব্যবহৃত হবে এই লার্ভা। পোকা, বর্জ্য ও মাছ এই তিনটির সমন্বয় করে গবেষণায় সাফল্য পেয়েছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) অ্যাকোয়াকালচার বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আব্দুস সালাম।
সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের গ্যালারিতে আয়োজিত ‘মৎস্য খাদ্যের বিকল্প হিসেবে কালো সৈনিক পোকার চাষ ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক এক কর্মশালায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে তিনি এসব তথ্য জানান।
গবেষক ড. মো. আব্দুস সালাম বলেন, কালো সৈনিক পোকা পরিবেশবান্ধব এবং কৃষকের বন্ধু। ময়লা-আবর্জনা, পচনশীল ফলমূল, শাক সবজি, হাঁস মুরগির বিষ্টা এবং গৃহপালিত প্রাণীর মল ভক্ষণ করে কালো সৈনিক পোকার লার্ভা। এই পোকা জৈব আবর্জনার ৭১.৫ শতাংশ পর্যন্ত ভক্ষণ করে হজম করে থাকে। বর্জ্যর অবশিষ্ট অংশ বায়োডিজেল, প্রোটিন এবং কম্পোস্ট সারে রূপান্তরিত হয়। শুষ্ক অবস্থায় এই পোকার লার্ভা থেকে ৪০-৫০ শতাংশ আমিষ, ৩০-৩৬ শতাংশ স্নেহ এবং ২০-২২ শতাংশ শর্করা পাওয়া গেছে। এ ছাড়া পর্যাপ্ত পরিমাণ ফসফরাস, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও সোডিয়াম এই পোকার লার্ভাতে রয়েছে। গবেষণা চলাকালীন আহরিত লার্ভা থেকে মাছের খাদ্য প্রস্তুত করে তেলাপিয়া মাছের ওপর গবেষণা করে বাজারে প্রাপ্ত বাণিজ্যিক খাদ্যের চেয়ে অনেক ভালো ফলাফল পাওয়া গেছে।
আমাদের চাষিরা কালো সৈনিক পোকার চাষ পদ্ধতি অবলম্বন করে কম খরচে মাছ এবং হাঁস-মুরগির খাদ্যের অনেকটাই জোগান দিতে পারেন। ফলে তাদের আর্থিক সাশ্রয়ের পাশাপাশি বাড়ির বর্জ্য পরিশোধন করে তারা গুণগত মানের সারও পেতে পারেন। পোলট্রি বা ডেইরি ফার্মে কালো সৈনিক পোকার লার্ভা চাষ করে একদিকে প্রোটিনসমৃদ্ধ জীবন্ত খাদ্য পাওয়া যায়, অপরদিকে ফার্মের বর্জ্য পরিশোধন করাও সম্ভব। চায়না, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও আমেরিকার মতো উন্নত দেশসমূহে ক্যাটফিস, তেলাপিয়া ও হাঁস-মুরগির খাদ্য হিসেবে এ পোকার লার্ভা ব্যবহার করে আশানুরূপ ফল পেয়েছে।
আমাদের দেশের জলবায়ু এ পোকার উপযোগী হওয়ায় এর ব্যাপক উৎপাদন সম্ভব। ফলে এর চাষের মাধ্যমে আমরাও কম খরচে মাছ এবং হাঁস-মুরগির ভেজাল মুক্ত খাবার উৎপাদন করে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধি অর্জন করতে পারি।
পোকাটির লার্ভা বাজারজাতকরণ সম্পর্কে গবেষক জানান, এ পোকার লার্ভা মাছ চাষিদের মাঝে ইতিমধ্যে মাঠ পর্যায়ে কার্যক্রম শুরু হয়েছে। পোকাটির লার্ভা কেজিপ্রতি ৩ হাজার টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। তবে এটি ব্যাপক পরিমাণে উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ এখনো শুরু হয়নি। এক্ষেত্রে বিভিন্ন বাণিজ্যিক কোম্পানিগুলোকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।
কর্মশালায় মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মাহফুজুল হকের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. লুৎফুল হাসান।
তিনি বলেন, শহরের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য এই কালো সৈনিক পোকাটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। মাছের খাদ্যের পাশাপাশি মুরগি, হাঁস ও অন্যান্য গৃহপালিত পশু-পাখির বিকল্প খাদ্য হিসেবে স্বাস্থ্যসম্মত, পরিবেশবান্ধব ও সুলভমূল্যের হতে পারে এই পোকার লার্ভা। এ ছাড়াও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পরিবেশ দূষণ রোধে এটি পরোক্ষভাবে ভূমিকা পালন করতে পারে।