
প্রতীকী অনশন
কক্সবাজারের মহেশখালীতে যুদ্ধাপরাধ মামলার বাদী ও সাক্ষী বীর মুক্তিযোদ্ধা আমজাদ হোসেনসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারদের ওপর নৃশংস হামলা-নির্যাতনের বিচারসহ চার দফা দাবিতে প্রতীকী অনশন কর্মসূচি পালন করেছে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ।
রবিবার (৫ ডিসেম্বর) সকাল ১১টায় শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে নিয়ে এ কর্মসূচি পালন করা হয়। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মো. আল মামুনের সঞ্চালনায় উক্ত কর্মসূচিতে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল।
কর্মসূচিতে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চে চার দফা দাবি উত্থাপন করেন, দাবিসমূহ হলো-
১. যুদ্ধাপরাধ মামলার বাদী ও সাক্ষী বীর মুক্তিযোদ্ধা আমজাদ হোসেনের ওপর নৃশংসভাবে হামলাকারী কক্সবাজার মহেশখালী পৌরসভার মেয়র মকছুদকে দ্রুত বহিষ্কার ও গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।
২. সমগ্র দেশে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁদের পরিবারদের ওপর হামলা-নির্যাতন বন্ধ করার জন্য অবিলম্বে বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবার সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করতে হবে।
৩. মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি আওয়ামী লীগ এবং প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে অনুপ্রবেশকারী স্বাধীনতা বিরোধী রাজাকার ও তাদের বংশধরদের চিহ্নিত করে দল ও প্রশাসন থেকে দ্রুত বহিষ্কার করে এদের নাগরিকত্ব বাতিল করতে হবে।
৪. অবিলম্বে বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারদের হয়রানি বন্ধ করে একটি স্বচ্ছ তালিকা প্রকাশ এবং স্বাধীনতা বিরোধী রাজাকার, আলবদর ও আলশামসদের তালিকা দ্রুত প্রণয়ন করতে হবে।
সংগঠনের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল বলেন, মহেশখালী প্রশাসন তাদের দায়িত্ব পালনে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। এখনো পর্যন্ত মামলার আসামি মেয়র মকছুদসহ তার ছেলেকে গ্রেফতার করা হয়নি যা আইনের শাসন পরিপন্থী। অবিলম্বে বীর মুক্তিযোদ্ধা আমজাদ হোসেনের ওপর হামলাকারীদের গ্রেফতার করার দাবি জানাচ্ছি৷চার দফা দাবি দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। অন্যথায় দেশব্যাপী কঠোর আন্দোলনে যাবে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ।
কর্মসূচির বক্তব্যে বীর মুক্তিযোদ্ধা জহির উদ্দিন বিচ্ছু জালাল বলেন, কিছুদিন আগে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বোচ্চ সম্মান দেয়া আমাদের কর্তব্য। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, দেশের বিভিন্ন জায়গায় প্রতিনিয়ত বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁদের পরিবারদের ওপর হামলা-নির্যাতন চলমান রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভিতরে ঘাপটি মেরে থাকা স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তির দোসররা প্রতিনিয়ত বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁদের পরিবারদেরকে হত্যা, হামলা, নির্যাতন ও রক্তাক্ত করে যাচ্ছে। এমনকি যুদ্ধাপরাধ মামলার বাদী ও সাক্ষীদেরকেও রক্তাক্ত করা হচ্ছে যা রাষ্ট্রের জন্য অনেক বড় অশনিসংকেত।"
বীর মুক্তিযোদ্ধা রুহুল আমিন মজুমদার বলেন, চলতি বছরে যুদ্ধাপরাধ আদালতের প্রায় ১০ জন বাদী ও সাক্ষীর ওপর হামলা হয়েছে। এছাড়াও এই বছরে প্রায় ২০ জন বীর মুক্তিযোদ্ধার ওপর হামলা ও নির্যাতন হয়েছে। দুইজন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। অধিকাংশ হামলা ও নির্যাতনের ঘটনার ক্ষেত্রে প্রশাসন ও আওয়ামী লীগ নীরব ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে যা কখনোই কাম্য নয়।
যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা জিকে বাবুল বলেন, ঘুষ আর মনোনয়ন বাণিজ্যের কারণে স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তিরা দল ও প্রশাসন ঢুকে মাথা চাড়া দিয়ে ওঠার সুযোগ পেয়েছে। এরা প্রশাসন ও দলে ঘাপটি মেরে বসে থেকে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তির মানুষদেরকে কোণঠাসা করে রেখেছে। এদেরকে চিহ্নিত করে প্রশাসন ও দল থেকে দ্রুত বের করে না দিলে আওয়ামী লীগকে এজন্য একদিন চরম মূল্য দিতে হবে৷
উক্ত প্রতীকী অনশন কর্মসূচিতে আরও উপস্থিত ছিলেন- মুক্তিযোদ্ধা ঐক্য মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা জহির উদ্দিন বিচ্ছু জালাল, সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা রুহুল আমিন মজুমদার, একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধা সংসদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আবীর আহাদ, মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ড. এএসএম জাহাঙ্গীর, যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা জিকে বাবুল, ভাস্কর শিল্পী রাশা প্রমুখ।