গাড়ির ধাক্কায় পঙ্গু মনোরঞ্জন হাজংয়ের জন্য ন্যায়বিচার দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২০ ডিসেম্বর ২০২১, ১১:২৫

ছবি: সংগৃহীত
সড়ক দুর্ঘটনায় পা হারানো সাবেক বিজিবি সদস্য মনোরঞ্জন হাজংকে পরিকল্পিতভাবে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে বলে অভিযোগ এনে ন্যায় বিচার নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছে ‘নিপীড়নের বিরুদ্ধে শাহবাগ’ নামে একটি সংগঠন।
গতকাল রবিবার (২০ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীর শাহবাগে অবস্থিত জাতীয় জাদুঘরের সামনে আয়োজিত এক সমাবেশে এই দাবি জানান সংগঠনটির নেতারা।
লেখক ও প্রকাশক রবিন আহসানের পরিচালনায় সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, যুব ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক খান আসাদুজ্জামান মাসুম, ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক দীপক শীল, নিপীড়নের বিরুদ্ধে শাহবাগ আন্দোলনের নেতা আকরামুল হক এবং মানবাধিকার কর্মী দীপায়ন খিসা।
সমাবেশে রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, মহুয়া হাজং পুলিশের সার্জেন্ট হয়ে দেশের সেবা করছে এবং তার পিতা মনোরঞ্জন হাজং বিজিবিতে থেকে দেশ সেবা করেছেন। আজ তারাই যখন এইরকম একটা ঘটনার শিকার হলো, তখন তাদের মামলাটি পুলিশ নিচ্ছিল না। এই রকম সীমাহীন অবিচার বাংলাদেশে দেখতে হবে?
তিনি বলেন, আমরা দেখেছি গুলশানে একটি ত্রিপুরা মেয়েকে রিকশা থেকে ফেলে দেওয়ার ঘটনায় মাত্র ১০ হাজার টাকা দিয়ে তা মীমাংসা করতে চেয়েছিল জড়িতরা। তারা প্রান্তিক জনগোষ্ঠী বলেই কি এই অবস্থা? নাকি একজন বিচারপতি, একজন এলিট তিনি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার উপরিভাগে থাকেন আর হাজংরা তলানিতে থাকে তাই এই অবস্থা। বিভিন্ন জাতি, ধর্মের মানুষদের নিয়ে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক রাষ্ট্র গঠনের স্বপ্ন ছিল আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের। সেটি যে ব্যর্থ হয়েছে, তার প্রমাণ এই মনোরঞ্জন হাজং।
এই ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার বিভাগীয় তদন্ত হতে হবে এবং বিচার করে এমন একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করা হোক, যাতে মানুষ মনে করে অপরাধী যেই হোক তারা বিচার পাবে।
খান আসাদুজ্জামান মাসুম এই ঘটনার বিচারের দাবি জানিয়ে বলেন, এই ঘটনার ১৫ দিন পর গণমাধ্যমের মাধ্যমে এ সম্পর্কে জানতে পারি। একজন পুলিশ সদস্য হয়েও যখন মহুয়া হাজং তার বাবাকে হত্যাচেষ্টার মামলা করতে পারছেন না, তখন আমাদের মতো সাধারণ মানুষের কী হবে? এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত একজন বিচারপতির সন্তান। এ কারণেই কি সে বিচারের ঊর্ধ্বে? আমরা এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি।
দীপক শীল বলেন, সার্জেন্ট মহুয়ার বাবা বিজিবির সাবেক সৈন্য মনোরঞ্জনের ডান পা কাটা গেছে, বাম পায়ের অবস্থাও ভালো নয়। তিনি জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রয়েছেন, কিন্তু বিচারপতির ছেলে অপরাধী হওয়ায় তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা তো দূরের কথা, মামলাই নেওয়া হচ্ছে না। ঐক্যবদ্ধভাবে এই বিচারহীনতার সংস্কৃতি দূর করতে হবে।
গত ২ ডিসেম্বর রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কের চেয়ারম্যান বাড়ি ইউটার্নে দ্রুতগতির ব্যক্তিগত গাড়ির ধাক্কায় গুরুতর আহত হন পুলিশের সার্জেন্ট মহুয়া হাজংয়ের বাবা মনোরঞ্জন হাজং। দুর্ঘটনার পর অস্ত্রোপচার করে তার ডান পায়ের হাঁটুর নিচ থেকে কেটে ফেলা হয়। এখন রাজধানীর বারডেম জেনারেল হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন বিজিবির সাবেক এই হাবিলদার। ঘটনার পর মামলা করার জন্য কয়েক দফা চেষ্টা করেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সেন্ট্রাল কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সেন্টারে কর্মরত এই নারী কর্মকর্তা। কিন্তু বিচারপতির ছেলের বিরুদ্ধে অভিযোগ হওয়ায় মামলা নেয়নি পুলিশ।
উল্টো মনোরঞ্জন হাজংয়ের বিরুদ্ধে বনানী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন তাকে ধাক্কা দেওয়া গাড়িচালক। দুর্ঘটনার জন্য মনোরঞ্জন হাজংকেই দায়ী করেছেন সাঈদ হাসান নামের ওই ব্যক্তি। এ দুর্ঘটনায় পা হারানো মনোরঞ্জন হাজংকে আসামি করে মামলা দেওয়া উচিত বলেও জিডিতে লিখেছেন তিনি। দুর্ঘটনার পর আহত মনোরঞ্জনকে ‘পর্যাপ্ত’ আর্থিক সহযোগিতা দেওয়া হয়েছে বলেও দাবি সাঈদ হাসানের।
সংবাদমাধ্যমে ঘটনাটি প্রচার হলে ঘটনার দুই সপ্তাহ পর মামলা নিয়েছে পুলিশ। গত বৃহস্পতিবার চালকসহ অজ্ঞাতনামা তিনজনকে আসামি করে বনানী থানায় মামলাটি হয়।