সার্জেন্ট মহুয়ার মামলা তদন্ত প্রতিবেদন ২০ জানুয়ারি

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২১ ডিসেম্বর ২০২১, ২৩:১৩

পুলিশ সার্জেন্ট মহুয়া হাজং এবং তার বাবা মনোরঞ্জন হাজং। ছবি: সংগৃহীত
রাজধানীর বনানীতে সড়ক দুর্ঘটনায় ট্রাফিক সার্জেন্টের বাবা পা হারানোর মামলার তদন্ত প্রতিবেদন ২০ জানুয়ারির মধ্যে জমার আদেশ দিয়েছেন আদালত।
গত ১৭ ডিসেম্বর মামলার এজাহারের কপি ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে আসার পর মহানগর হাকিম শহিদুল ইসলাম এ আদেশ দেন। এর আগে ১৬ ডিসেম্বর মামলাটি বনানী থানায় রেকর্ড করা হয়।
রাজধানীর বনানীতে চেয়ারম্যানবাড়ি সংলগ্ন ইউলুপের পাশে প্রাইভেটকারের ধাক্কায় পা হারান ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সার্জেন্ট মহুয়া হাজংয়ের বাবা মনোরঞ্জন হাজং।
মনোরঞ্জন হাজং এদিন মোটরসাইকেল চালিয়ে ইউলুপ পেরিয়ে মূল রাস্তায় ওঠার আগ মুহূর্তে হঠাৎ একটি প্রাইভেট কার ইউলুপে প্রবেশ করার সময় মোটরসাইকেলটিকে ধাক্কা দেয়। এতে গুরুতর আহত হন মনোরঞ্জন হাজং।
গত ২ ডিসেম্বর রাত ২টা ১৮ মিনিটে দু্র্ঘটনার পর মনোরঞ্জনের মেয়ে সার্জেন্ট মহুয়া বনানী থানায় মামলা করতে গেলে মামলা নিতে টালবাহানা করে পুলিশ। বিষয়টি নিয়ে ফেসবুকসহ গণমাধ্যমে সমালোচনার ঝড় ওঠে।
ঘটনার দুসপ্তাহ পর বনানী থানায় মামলা রেকর্ড করে ১৭ ডিসেম্বর সেটি ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে পাঠানো হয়। তবে সার্জন্ট মহুয়া হাজংয়ের মামলা রেকর্ড করার দুদিন আগে প্রাইভেটকারটির চালক হাইকোর্টের একজন বিচারপতির ছেলে সাঈদ হাসান বনানী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।
বিভিন্ন সামাজিক ও মানবাধিকার সংগঠন এবং ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সংগঠন পথসভা, মানববন্ধন করে এর প্রতিবাদ জানায়।
এসব প্রতিবাদ কর্মসূচি থেকে সার্জেন্ট মহুয়া হাজংয়ের চাকরি ও তার পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাসহ কয়েক দফা দাবি জানানো হয়।
তারা বলছেন, উল্টো পথে আসায় মনোরঞ্জন হাজং অপরাধ করেছেন। ট্রাফিক আইন ভঙ্গকারী হলেই তাকে চাপা দেওয়ার দায় থেকে রেহাই পাওয়া যায় না। গাড়িটি গতিসীমার চেয়ে দ্রুত বেগে চলছিল কি না এবং লেন ঠিকমতো মানা হয়েছে কি না, তা-ও দেখতে হবে। আর এসব কারণে গাড়ির চালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছিলেন কি না, সেটাও বিবেচ্য।
দুর্ঘটনার সময় সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, প্রাইভেটকারের চালক দ্বিতীয় লেন থেকে প্রথম লেনে দ্রুত চলে আসেন এবং ডান পাশে টার্ন নেওয়ার সময় দুর্ঘটনা ঘটে। তবে ওভারস্পিডের বিষয়টি এখনও নিশ্চিত হতে পারেনি বনানী থানা পুলিশ।
এই দুর্ঘটনার দুই সপ্তাহ পর কারো নাম-ঠিকানা উল্লেখ না করে মামলাটি দায়ের করা হয়েছে।
বনানী থানার আদালতের সাধারণ নিবন্ধন শাখার কর্মকর্তা পুলিশের উপ-পরিদর্শক মো. আলমগীর হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা মামলার নথি গত ১৭ ডিসেম্বর শুক্রবার বন্ধের দিনে পেয়েছি। মহানগর হাকিম শহিদুল ইসলাম মামলার এজাহার ও নথিটি দেখেছেন এবং ২০ জানুয়ারি তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দিতে আদেশ দিয়েছেন।’
২০১৮ সালের সড়ক ও পরিবহন আইনের ৯৮ এবং ১০৫ ধারায় মামলাটি দায়ের করা হয়েছে। এই ধারায় তিন বছর ও পাঁচ বছরের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ৩ লাখ ও ৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডের কথা বলা আছে।
গাড়ির চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকলে, তিনি মদ্যপ বা নেশাগ্রস্ত থাকলে আলাদা ধারা যুক্ত হবে।
তবে তদন্ত-সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, সড়কে ইচ্ছাকৃতভাবে কেউ কাউকে আঘাত বা চাপা দিয়ে আহত বা মেরে ফেলতে চায় না। পরিস্থিতির কারণে ঘটে থাকে। তদন্তে সব বিষয় উঠে আসবে। কেন দুর্ঘটনা ঘটল তা বের করাই তদন্তের প্রধান উদ্দেশ্য থাকে।
গত ১৬ ডিসেম্বর মামলাটি বনানী থানায় দায়ের হওয়ার পর থেকে তদন্ত করেছেন বনানী থানার উপ-পরিদর্শক সালাউদ্দিন মোল্লা। আর সাঈদ হাসানের করা জিডি তদন্ত করছেন একই থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আলমগীর গাজী। তারা কেউই তদন্তের বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি।
মামলার এজাহারে বলা হয়, ‘গত ২ ডিসেম্বর চেয়ারম্যানবাড়ি ইউলুপে মোটরসাইকেল নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় একটি প্রাইভেট গাড়ির ধাক্কায় মারাত্মক আহত হন অবসরপ্রাপ্ত বিজিবি সদস্য মনোরঞ্জন হাজং। তাকে প্রথমে পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তার ডান পা প্রথমে গোড়ালি পর্যন্ত, পরে সংক্রমণ হওয়ায় হাঁটু পর্যন্ত কেটে ফেলতে হয়।