সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন-ভাতা দ্রুত ছাড়ে নতুন সিদ্ধান্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৩ ডিসেম্বর ২০২১, ১৪:০৯

ফাইল ছবি
সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ও পেনশনসহ অন্যান্য ভাতা সরাসরি গ্রাহকদের ব্যাংক হিসাবে জমা করার জন্য গভর্নমেন্ট ই-ট্রাঞ্জেকশন প্রোসেসিং হাব (জিইটিপিএইচ) নামে অত্যাধুনিক একটি সফটওয়্যার চালু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
নতুন এ সফটওয়্যারের মাধ্যমে আগের থেকে দ্রুততর সময়ে সরকারের হিসাব থেকে গ্রাহকের হিসাবে বেতন-ভাতার টাকা পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হবে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
সোমবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরকারের পেমেন্ট গেটওয়ে হিসেবে কাজ করায় তুলনামূলক কম খরচে গ্রাহকদের হিসাবে অর্থ স্থানান্তর করা যাবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিজস্ব আইটি জনবল দিয়ে ডেভেলপ করা এই সফটওয়্যারটি পরীক্ষামূলক পরিচালনা শেষে গত রবিবার আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়।
আরও জানানো হয়, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ও পেনশনের পাশাপাশি মুক্তিযোদ্ধা ভাতা, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় বিধবা, বয়স্ক, পঙ্গুত্ব, প্রতিবন্ধী প্রভৃতি ভাতা, বিভিন্ন স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের বিল, জাতীয় সঞ্চয়পত্রের মুনাফা ও মূলধন, শিক্ষার্থীদের বৃত্তি ও উপবৃত্তির অর্থ সরাসরি গ্রাহকদের ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তর করা যাবে এই সফটওয়্যারের মাধ্যমে।
জানা গেছে, ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফারের (ইএফটি) মাধ্যমে সরকার থেকে ব্যক্তি (জিটুপি) পদ্ধতিতে সরাসরি প্রাপক বা উপকারভোগীর নিজ নিজ ব্যাংক হিসাবে বেতন বা ভাতা দ্রুত পৌঁছে দিতে এই সফটওয়্যারটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে ডাটা প্রসেস করবে।
সফটওয়্যারটির উদ্বোধনকালে অনুষ্ঠানে গভর্নর ফজলে কবির বলেন, ‘২০১২ সালে চালু হওয়া সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতাদি ও অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পেনশন জিটুপি পদ্ধতিতে ইএফটির মাধ্যমে প্রাপকের হিসাবে জমা করা হতো। তবে সে পরিসর ছিল সীমিত। দৈনিক ১ লাখ ১৫ হাজারটির বেশি ইএফটি করা যেত না। ২০১৯ সালে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতাদির সঙ্গে সামাজিক নিরপত্তা বেষ্টনীর ভাতা, শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির ভাতা, ইএফটি’র মাধ্যমে সরাসরি গ্রহীতাদের ব্যাংক বা মোবাইল ব্যাংকিং হিসাবে জমা করার উদ্যোগ নেওয়া হয়।’
তাছাড়া স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন বিল ও জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর কর্র্তৃক বাস্তবায়িত অনলাইন সঞ্চয়পত্র বিক্রয় ও মুনাফা নগদায়নের অর্থ সরাসরি বিনিয়োগকারীর হিসাবে জমা করার উদ্যোগ নেওয়া হলে এত ব্যাপক পরিমাণ ইএফটি ডাটা স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে প্রক্রিয়া করার জন্য নতুন এই সফটওয়্যার বাস্তবায়ন করা জরুরি হয়ে পড়ে বলে জানান গভর্নর।
সফ্টওয়্যারটির পরীক্ষামূলক পরিচালনার সময়ে গত ২০২০-২০২১ অর্থবছরে প্রায় সাড়ে নয় কোটি গ্রহীতার ব্যাংক হিসাবে সরাসরি সরকারি অর্থ প্রেরণ করা হয়েছে বলে জানায় বাংলাদেশ ব্যাংক।
অনুষ্ঠানে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, সরকারি বিভিন্ন সেবা স্বল্প সময়ে জনসাধারণের কাছে পৌঁছে দেওয়াই ডিজিটাল বাংলাদেশের অন্যতম লক্ষ্য। আগে বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা ব্যক্তির কাছে পৌঁছতে ৩-৬ মাস সময় লাগত। কিন্তু ইএফটির মাধ্যমে এখন তা মুহূর্তে পৌঁছে যাচ্ছে।
অনুষ্ঠানের সভাপতি ডেপুটি গভর্নর কাজী ছাইদুর রহমান বলেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও অগ্রগতি সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সমন্বয়ের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। বাংলাদেশ ব্যাংক নিজস্ব লোকবল দ্বারা উদ্ভাবিত ১২৯টি সফটওয়্যারের মধ্যে ১২৪টি বর্তমানে কার্যকর রয়েছে। তৃতীয় পক্ষ থেকে কেনা ১০টি সফটওয়্যারের বিকল্প নিয়েও বাংলাদেশ ব্যাংকের আইটি টিম কাজ করছে।
এছাড়াও বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আহমেদ জামাল, আবু ফরাহ্ মো. নাছের বাংলাদেশ ব্যাংক মতিঝিল অফিসের নির্বাহী পরিচালক মো. মোশাররফ হোসেন খান অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।