কম্পিউটার প্রশিক্ষণে স্বাবলম্বী হচ্ছেন নারীরা

এইচ আলিম, বগুড়া
প্রকাশ: ২৬ ডিসেম্বর ২০২১, ১৬:০২
-09-61c83d98e706c.jpg)
সরকারি কম্পিউটার প্রশিক্ষণ প্রকল্প
বগুড়ার নারীরা সরকারি কম্পিউটার প্রশিক্ষণ প্রকল্প থেকে প্রশিক্ষিত হয়ে জীবন যুদ্ধে এগিয়ে যাচ্ছেন। দক্ষ জনশক্তি গঠনে ভূমিকা রেখে যাচ্ছে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক পরিচালিত জাতীয় মহিলা সংস্থাধীন জেলাভিত্তিক মহিলা কম্পিউটার প্রশিক্ষণ প্রকল্প (৬৪ জেলা)। বগুড়ার এ কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে গত ৬ বছরে ৬৬৫ জন প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। প্রশিক্ষণার্থীরা বিভিন্ন দপ্তরে চাকরি করছেন। প্রশিক্ষিত হয়ে অনেকে স্বাবলম্বী হয়েছেন।
জানা যায়, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় পরিচালিত ও জাতীয় মহিলা সংস্থাধীন জেলাভিত্তিক মহিলা কম্পিউটার প্রশিক্ষণ প্রকল্পটি বগুড়াসহ দশটি জেলায় ২০০২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। পরবর্তিতে পর্যায়ক্রমে সারাদেশে প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে ৬ মাস মেয়াদি কম্পিউটার প্রশিক্ষণ শুরু করে। বগুড়া প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে কম্পিউটার অফিস অ্যাপ্লিকেশন সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত। গ্রাফিক্স ডিজাইন অ্যান্ড মাল্টিমিডিয়া বেলা ২টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত। এক হাজার টাকায় কোর্স ফি দিয়ে ৬ মাসের প্রশিক্ষণ প্রদান করে থাকে। প্রশিক্ষণ শেষে মেধার ভিত্তিতে পরবর্তী ৬ মাসের জন্য প্রতি মাসে ৩ হাজার টাকা করে চারজনের ইন্টার্নশিপ করার সুযোগও রয়েছে। এসএসসির পর থেকে যে কোনো নারী এই প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে পারবেন। এ ছাড়া প্রশিক্ষণ শেষে কারিগরি শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক সনদ প্রদান করে থাকে।
জেলাভিত্তিক মহিলা কম্পিউটার প্রশিক্ষণ প্রকল্পের বগুড়া প্রশিক্ষণ কেন্দ্র সূত্রে জানা যায়, গত ২০১৪ সাল থেকে ছয় বছরে ৬৬৫ জন প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। এর মধ্যে ৮২ জন চাকরিজীবী। ঘরে বসে আয় ও আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে উপার্জন করছেন ৫ জন। আর উদ্যোক্তা হয়েছেন ৩ জন এবং বাকিরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তিগত স্কিল ডেভেলপমেন্ট ও পারিবারিক কাজ সম্পাদন করছেন।
প্রশিক্ষণ গ্রহণকারী কামরুন নাহার দিপা জানান, তিনি ২০১৩ সালে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। বর্তমানে তিনি পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডে ডাটা এন্ট্রি অপারেটর হিসেবে চাকরি করছেন। সংসারে বাড়তি আয়ের আশায় তিনি প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। প্রশিক্ষণ শেষে চাকরি পান। চাকরির আয় দিয়ে সংসার পরিচালনায় সহযোগিতা করছেন।
তিনি জানান, তার নিজের অন্যান্য বোনদেরও তিনি সেখানে ভর্তি করেছেন।
প্রশিক্ষণার্থী নুসরাত জাহান জানান, তিনি ২০১৮ সালে অফিস অ্যাপ্লিকেশন ও পরে গ্রাফিক্স ডিজাইনের উপর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। তার কোনো কম্পিউটার বিষয়ে জ্ঞান ছিল না। এখন প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে অনেক কিছু শিখেছেন। কম্পিউটার জানার আগে চাকরির আবেদন করতে পারতেন না। এখন তিনি তা সহজেই করতে পারেন।
বগুড়া কালেক্টরেট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের সহ শিক্ষক রেজোয়ানা নাসরিন জানান, তিনি তার স্কিল ডেভেলপমেন্ট হিসেবে প্রথম কম্পিউটার প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। সেই প্রশিক্ষণটি এখন চাকরিজীবনে কাজে লাগছে। করোনাকালে অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার সময় তার বেশি উপকার হয়েছে। তাছাড়া আইসিটি বিষয়ে পড়াতে তার কোনো অসুবিধা হয় না। চাকরিজীবনে এখন অনেক কিছুই অনলাইনে করতে হয়। টেকনোলজির ওপর প্রশিক্ষণ নেওয়ার কারণে তাকে এগিয়ে রেখেছে বলে মনে করেন।
প্রশিক্ষণগ্রহণকারী লায়লা আজমেরী জানান, তিনি এক সময় প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন এবং আজ তিনি তৃণমূল পর্যায়ের নারী প্রশিক্ষত হিসেবে কাজ করছেন। প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে তিনি বিজনেস-ই-কমার্স সাইটে তিনি ভালো কাজ করতে পারছেন।
জেলাভিত্তিক মহিলা কম্পিউটার প্রশিক্ষণ প্রকল্পের বগুড়া প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের প্রশিক্ষক (কম্পিউটার) মোছা. খাদিজাতুল কোবরা জানান, এক সময় সাইবার ক্যাফে গিয়ে নারীরা প্রশিক্ষণ নিত। সেখানে নারীদের জন্য ততটা ভালো পরিবেশ থাকতো না; কিন্তু সরকারিভাবে এখানে শুধু নারীদের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এখানে নারীদের জন্য অত্যন্ত মনোরম নিরিবিলি পরিবেশে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। প্রশিক্ষণ শেষে অনেক প্রশিক্ষণার্থী বিভিন্ন স্থানে চাকরি করছেন। নারীরা এখন এগিয়ে যাচ্ছে সামনের দিকে। প্রশিক্ষিত যখনই হবে, তখনই সে নিজে কিছু করার প্রেরণা পাবে। সেটা পরিবারই বা নিজে থেকে হোক। এ কারণে যারা প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন তাদের বড় অংশই চাকরি বা উদ্যোক্তা হয়ে কাজ করে নিজের সংসার পরিচালনায় এগিয়ে যাচ্ছে।