ভেস্তে গেছে পাখির ‘অভয়াশ্রম’ গড়ার উদ্যোগ

কামাল উদ্দিন টগর, নওগাঁ
প্রকাশ: ০৮ জানুয়ারি ২০২২, ১২:২১

ছবি: সংগৃহীত
নওগাঁয় ভেস্তে গেছে পাখির জন্য ‘অভয়াশ্রম’ গড়ে তোলার ব্যতিক্রমী উদ্যোগ। তদারকির অভাবে গাছ থেকে ভেঙে পড়েছে হাঁড়ি-পাতিল। ফলে নিরাপদ আশ্রয় ও প্রয়োজনীয় খাদ্যের অভাবে পাখির সংখ্যা কমছে বলে মনে করছেন গবেষকরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০১৮ সালে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পাখিদের নিরাপদ অভয়াশ্রম গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। জেলার বিভিন্ন উপজেলার হাট-বাজারে সরকারি বড় গাছগুলোতে হাঁড়ি-পাতিল বেঁধে দেওয়া হয়; কিন্তু সঠিক তদারকি না থাকায় এসব হাঁড়ি-পাতিল ভেঙে যায়।
স্থানীয়রা জানান, জেলার বদলগাছী উপজেলার বালুভরা ইউনিয়নের পাটনঘাটা গ্রামের প্রায় ৪০০ বছরের পুরনো বটগাছ রয়েছে। এ গাছে অনেক প্রজাতির পাখির আনাগোনা ছিল। স্থানটিকে পাখিদের জন্য একটি অভয়াশ্রম করতে গাছের ডালে প্রায় ৫০টির বেশি মাটির হাঁড়ি বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। এসব পাতিল নিরাপদ মনে করে বাসা বেঁধেছিল দোয়েল, ঘুঘু, বাবুই ও বুলবুলিসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি। এমনকি কাঠ বিড়ালও। কয়েক বছরের ব্যবধানে অনেক হাঁড়ি খসে পড়ে ভেঙে গেছে। এখন যে কয়েকটি গাছে হাঁড়ি আছে, সেখানে পাখি বাস করে না। সদর উপজেলার কীর্ত্তিপুর হাটে, পাহাড়পুর বাজারে, দুবলহাটী বাজারে, হাঁপানিয়া বাজারে, বদলগাছী উপজেলার বালুভরা বাজার, মহাদেবপুর উপজেলার শিশু পার্ক ও উপজেলা চত্বরসহ বিভিন্ন এলাকার হাট-বাজারে সরকারি গাছে পাখির জন্য হাঁড়ি বাঁধা হয়েছিল।
বালুভরা ইউনিয়নের পাটনঘাটা গ্রামের মুদি দোকানি জাহিদ ইকবাল বলেন, ‘বছর তিনেক আগে এ গ্রামের পুরনো বটগাছে ৪০টির মতো পাতিল বাঁধা হয়েছিল। যেখানে কয়েকটি পাতিলে শালিক বাস করতে দেখেছি; কিন্তু গাছের নিচের দিকে যেসব পাতিল বাঁধা হয়েছিল, সেগুলোতে পাখি বসত না। কিছু পাতিল খুলে পড়ে গেছে। আর কিছু গাছে আছে। তবে যে উদ্দেশ্যে পাতিল বাঁধা হয়েছিল, তা সফল হয়নি।’
বক্তারপুর ইউনিয়নে শাহাপুর বাজারের চা দোকানি শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘কয়েক বছর আগে দুটি বটগাছে মাটির থালার পাত্র দেখেছিলাম। এখন হাতে গোনা কয়েকটি আছে। বাকিগুলো নেই। তবে কোনো পাখি বাস করতে দেখিনি।’
নওগাঁর মহাদেবপুর জীববৈচিত্র্য, বন্যপ্রাণী ও নদী সংরক্ষণ সংগঠনের সভাপতি ইউনুসার রহমান হেফজুল বলেন, ‘পাখি রক্ষা ও বসবাসের জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে গাছে গাছে হাঁড়ি-পাতিল বাঁধা হয়েছিল; কিন্তু সেটা কার্যকর হয়নি। পাখিকে তার নিজস্ব আচার-আচরণ ও স্বাধীনভাবে চলতে দেওয়া উচিত। কৃত্রিমতা কোনো কিছুই স্থায়ী হয় না। গাছে যেসব পাতিল বাঁধা হয়েছিল ঝড়ে তা নষ্ট হয়ে যায়।’
মহাদেবপুর প্রাণ ও প্রকৃতি সংগঠনের সভাপতি কাজী নাজমুল হোসেন বলেন, ‘পাখিদের বসবাস ও প্রজননের জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাটির ছোট থালা ও কোথাও পাতিল বাঁধা হয়েছিল। অপরিকল্পিতভাবে গাছে এসব বাঁধা হয়েছিল। মাটির থালাগুলো এমনভাবে বাঁধা হয়েছিল বাতাসে দোল খেত। আর পাতিলগুলো পাখি বসবাসের উপযোগী ছিল না।’
তিনি আরও বলেন, ‘গ্রামে সচেতনতামূলক প্রচার-প্রচারণা করতে হবে। শুধু পাখির ঘর-বাড়ি করে পাখি রক্ষা সম্ভব না। বনায়ন করতে হবে। পাখি শিকার বন্ধ করতে হবে। তাদের বসবাস নিরাপদ হলেই প্রজনন সম্ভব হবে।’
এ বিষয়ে বদলগাছী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আলপনা ইয়াসমিন বলেন, ‘পাখি বসবাসের জন্য গাছে হাঁড়ি-পাতিল বাঁধার বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছ থেকে জেনে পাখি সংরক্ষণের জন্য আবারও উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে।’