পরকীয়া সম্পর্কের জেরে খুলনায় ট্রিপল মার্ডার

খুলনা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১০ জানুয়ারি ২০২২, ২১:০১

খুলনা জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহবুব হাসান
খুলনা জেলার কয়রা উপজেলার বামিয়া গ্রামের ট্রিপল হত্যার প্রধান আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি স্বেচ্ছায় ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। এর ফলে চাঞ্চল্যকর ট্রিপল মার্ডারের রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। উপজেলার বামিয়া গ্রামের হাবিবুর রহমান ওরফে হাবিবুল্লাহ, তার স্ত্রী বিউটি বেগম ও ১২ বছরের মেয়ে হাবিবা সুলতানা টুনিকে কুপিয়ে নৃশংসভাবে হত্যার নেপথ্যে বেশ কিছু কারণ খুঁজে পেয়েছে পুলিশ।
মা ও মেয়েকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের পর তিনজনকে কুপিয়ে হত্যা করে মরদেহ পুকুরে ফেলে দেয়া হয়। পরকীয়া প্রেমে বাধা, বিকৃত যৌন লালসা ও প্রতারণামূলক আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে এ হত্যাকাণ্ড ঘটে। হত্যাকাণ্ডে কমপক্ষে ছয়জন সরাসরি অংশ নেয়।
খুলনা জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহবুব হাসান সোমবার (১০ জানুয়ারি) দুপুরে তার সম্মেলন কক্ষে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান।
তিনি জানান, চাঞ্চল্যকর এ মামলায় অন্যতম আসামি আবদুর রশিদ গাজী ও জিয়াউর রহমানসহ মোট ১৫ জনকে এ পর্যন্ত গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে রশিদ গাজী আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
প্রেস ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, গত বছরের ২৬ অক্টোবর সকালে পুলিশ বামিয়া গ্রামের হাবিবুল্লাহর বাড়ির পার্শ্ববর্তী পুকুর থেকে তিনজনের মরদেহ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় ওইদিন হাবিবুল্লাহর মা কোহিনুর বেগম বাদী হয়ে অজ্ঞাত পরিচয় দুর্বৃত্তদের আসামি করে মামলা দায়ের করেন। এরপর এ মামলায় মো. জিয়াউর রহমান, রাজিয়া সুলতানা, মো. রহমানসহ সাতজনকে গ্রেফতার করা হয়। মামলাটি প্রথমে কয়রা থানা পুলিশ ও বর্তমানে ডিবি পুলিশ তদন্ত করছে।
গত ৮ জানুয়ারি যশোরের অভয়নগর থেকে অন্যতম আসামি আবদুর রশিদ গাজীকে গ্রেফতার করা হয়। ৯ জানুয়ারি রশিদ গাজী আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। রশিদ গাজীর জবানবন্দি অনুযায়ী আরো সাতজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা হলেন- মো. সাইফুল ইসলাম বাবলু, আল আমিন হোসেন, আসলাম সরদার, আবদুল ওহাব ওরফে হক, তাসলিমা, শামীমুল ইসলাম অঞ্জন ও মোস্তফা কামাল।
ঘটনার পর থেকে রশিদ গাজী পলাতক ছিলেন। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে রশিদ গাজী স্বীকার করেছেন যে, একই গ্রামের মো. জিয়াউর রহমান ও রাজিয়া সুলতানার পরকীয়া প্রেমে হাবিবুল্লাহ বাধা দেন। সে কারণে জিয়াউর ক্ষিপ্ত হন। জিয়াউর ও সামছুরের নেতৃত্বে গত ২৫ অক্টোবর রাত ১২টার দিকে দুর্বৃত্তরা ওই বাড়িতে গিয়ে হাবিবুল্লাহ, তার স্ত্রী ও মেয়ের হাত-পা বাঁধে। এরপর মা-মেয়েকে ধর্ষণের পর তিনজনকে কুপিয়ে হত্যা করে মরদেহ পুকুরে ফেলে দেয়।
পুলিশ সুপার বলেন, বিকৃত যৌন লালসা, প্রতারণামূলক আর্থিক লেনদেন ও পরকীয়া সম্পর্কের টানাপোড়েনের জেরে দলবদ্ধভাবে হত্যাকাণ্ডটি সংঘটিত হয়। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে ছয়জনকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে পুলিশ সুপার বলেন, তক্ষক ও সীমানা পিলার বিক্রি সংক্রান্ত টাকা নিয়ে বিরোধ ছিলো কিনা সে বিষয়টিও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তদন্ত শেষ হলে সবকিছু বিস্তারিত জানানো হবে। শিগগিরই এ মামলায় আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হবে।
ঘটনা প্রবাহ
২০২১ সালের ২৫ অক্টোবর রাত ৯টা থেকে পরের দিন সকাল সাড়ে ৮টার মধ্যে তাদের হত্যা করা হয়। ২৬ অক্টোবর স্থানীয় আব্দুল মাজেদের বাড়ির পাশে একটি পুকুর থেকে ভাসমান অবস্থায় হাবিবুর রহমান, তার স্ত্রী বিউটি ও কন্যা হাবিবা সুলতান টুনির মরদেহ উদ্ধার করা হয়।