মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা প্রত্যাখ্যান করছে সরকার

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৩ জানুয়ারি ২০২২, ১৯:৩৩

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের (এইচআরডব্লিউ) ‘ওয়ার্ল্ড রিপোর্ট ২০২২’ এ নিরাপত্তা বাহিনীর মাধ্যমে ২০২১ সালে সংঘটিত বিচারবহির্ভূত হত্যা, নির্যাতন এবং গুমের প্রমাণ নিয়ে জাতিসংঘ, দাতা এবং বেসরকারি সংস্থাগুলোর উত্থাপিত উদ্বেগগুলোকে খারিজ করেছে বাংলাদেশ সরকার।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের সরকার অধিকারকর্মী, সাংবাদিক এবং এমনকি শিশুদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে, যারা কোভিড-১৯ মহামারিতে সরকার বা এর প্রতিক্রিয়ার সমালোচনা করেছে।
আজ বৃহস্পতিবার (১৩ জানুয়ারি) এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
এইচআরডব্লিউর এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক ব্র্যাড অ্যাডামস বলেছেন, ‘বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ কোভিড-১৯ মহামারিকে ব্যবহার করে একটি হতাশাজনক বার্তা দিয়েছে যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সমালোচনার শাস্তি দেওয়া হবে। তবু সাংবাদিক, চিকিৎসাকর্মী এবং অধিকারকর্মীরা স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে সেসব বাধাকে তুলে ধরেছেন। বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া অনেক মানুষ এই প্রতিবন্ধকতাগুলোর সম্মুখীন হয়েছেন।’
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ‘ওয়ার্ল্ড রিপোর্ট ২০২২’ ৭৫২ পৃষ্ঠায় প্রায় ১০০টি দেশের মানবাধিকার চর্চার বিষয় পর্যালোচনা করে।
প্রতিবেদনে প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক কেনেথ রথ প্রচলিত অভিজ্ঞতাকে চ্যালেঞ্জ করে বলেছেন, স্বেচ্ছাচারী কর্তৃত্ব মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। গ্রেপ্তার বা গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও বিভিন্ন দেশে সম্প্রতি বিপুলসংখ্যক মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছে। এতে প্রমাণিত হয় যে গণতন্ত্রের আহ্বান এখনো শক্তিশালী রয়েছে। এদিকে স্বৈরাচারীরা তাদের পক্ষে নির্বাচনকে প্রভাবিত করা আরও কঠিন বলে দেখতে পাচ্ছে।
গত বছরের (২০২১) ২৫ ফেব্রুয়ারি রাতে কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগারে বন্দী অবস্থায় লেখক মুশতাক আহমেদ মারা যান। গ্রেপ্তারের পর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত মোট ছয়বার তাঁর জামিন আবেদন নাকচ হয়।
এইচআরডব্লিউর প্রতিবেদনে বলা হয়, ৯ মাস বিচার–পূর্ববর্তী আটকাবস্থার পর কারাগারে মৃত্যুবরণ করেন—ফেসবুকে কোভিড-১৯ নিয়ে সরকারের প্রতিক্রিয়ার সমালোচনা করায় ওই সময় তাঁকে নির্যাতন করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। মে মাসে, কোভিড-১৯ মহামারির প্রতিক্রিয়ায় অসদাচরণের বিষয়ে রিপোর্ট করার পর কর্তৃপক্ষ সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে গ্রেপ্তার করে। কর্তৃপক্ষ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অধীনে রাজনৈতিক সমালোচকদের নির্বিচার গ্রেপ্তার ও বিচার করেছে, এমনকি সরকারের সমালোচনাকারী প্রবাসী সাংবাদিকদের পরিবারের সদস্যদেরও টার্গেট করেছে।
গত বছরের দুর্গাপূজার সময় হিন্দুদের মন্দির ও বাড়িতে হামলা ও হতাহতের ঘটনাও উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে। বলা হয়, পুলিশ যখন বিক্ষুব্ধ জনতাকে নিয়ন্ত্রণ করতে গুলি চালায়, তখন চারজন ব্যক্তি নিহত হন। বাংলাদেশের হিন্দু সংখ্যালঘুদের লক্ষ্য করে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার মধ্যে অন্তত আরও তিনজন মারা গেছেন। শতাধিক আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
বনানীর রেইনট্রি হোটেলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী ধর্ষণ মামলায় পাঁচ আসামিকে খালাস দেন ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭-এর বিচারক মোছা. কামরুন্নাহার। প্রসঙ্গটিও আসে এইচআরডব্লিউর প্রতিবেদনে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, নারী ও মেয়েদের বিরুদ্ধে যৌন সহিংসতার উদ্বেগজনক বৃদ্ধি মোকাবিলার জন্য সরকারকে আহ্বান জানিয়ে কর্মীরা সারা দেশে বিক্ষোভ করার এক বছরের বেশি সময় পর এই রায় আসে। কর্তৃপক্ষ এখনো একটি যৌন হয়রানি বিল পাস করতে পারেনি, এ ছাড়া সাক্ষীর সুরক্ষা দিতে বা বৈষম্যমূলক আইন সংশোধন করতে পারেনি।