Logo
×

Follow Us

বাংলাদেশ

দুর্গম পাহাড়ে ‘ঘোড়া দিয়ে’ মালবহন

Icon

উসি থোয়াই মারমা, বান্দরবান

প্রকাশ: ২১ জানুয়ারি ২০২২, ১৬:০১

দুর্গম পাহাড়ে ‘ঘোড়া দিয়ে’ মালবহন

ছবি: সংগৃহীত

দুর্গম এলাকায় বিভিন্ন মালামাল টানতে দীর্ঘদিন ধরে ঘোড়া ব্যবহার করে আসছেন বান্দরবানের রুমা উপজেলার রেমাক্রিপ্রাংসা ইউনিয়নের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ কেওক্র্যাডং পাদদেশ দার্জিলিং পাড়ার বম জনগোষ্ঠীর এক পরিবার। বিশেষ করে শুষ্ক মৌসুম ছাড়াও বর্ষাকালে হাঁটাচলা করা যায় না এমন জায়গা থেকে ঘোড়ায় করে মালামাল বহন করে থাকেন তারা।

একসময় আঁকা-বাঁকা ও উঁচু-নিচু পাহাড়ি পথে হাঁটাও ছিল দায়। সেখানে পিঠে থুরুং (বাঁশ ও বেতের তৈরি ঝুরি) লাগিয়ে বহন করতে হতো অনেক ওজনের মালামাল। জঙ্গলাকীর্ণ দূর পথ পেরিয়ে বহন করে নিয়ে আসতে হত জুমক্ষেতের সবজি। দিনের পর দিন পাহাড়ি পথে এভাবে বহন করত মণকে মণ আদা এবং হলুদও। কখনো বা বাগানের হরেক রকমের ফলমূল। এতে সময় লাগত বেশি, ঘরে মালামাল পৌঁছাত কম। পরবর্তীতে এমন চিন্তাভাবনা থেকে মালামাল বহনের বিকল্প পথ খুঁজতে থাকেন তারা। এক পর্যায়ে বেশি ওজনের মালামাল টানতে ঘোড়া কেনার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন বম জনগোষ্ঠীর এ পরিবার। 

এ পরিবারের প্রধান ব্যক্তি ও দার্জিলিং পাড়ার কারবারি (গ্রামপ্রধান) ৬৫ বছর বয়সী সাকসিং বম বলেন, পনের বছর আগে কেওক্র্যাডং এলাকার ম্রো সম্প্রদায়ের এক ব্যক্তির কাছ থেকে প্রতিটি ঘোড়া চল্লিশ হাজার টাকা করে মোট চারটি ঘোড়া কেনা হয়। পরে এই ঘোড়া দিয়ে অনেক দূর থেকে মালামাল বহন করে নিয়ে আসা খুব সহজ হয়ে ওঠে। এরপর দেখি দিন দিন বেশ কাজে লাগে। তখন কোনো রাস্তাঘাটই ছিল না। বলা যায় একেবারেই দুর্গম ও প্রত্যন্ত এলাকা। এসব জায়গায় পায়ে হাঁটার পথ ছিল না। সেখানে একটি ঘোড়ায় দেড় থেকে দুই মণ পর্যন্ত মালামাল অনায়াসে বহন করে নিয়ে আসতাম। এরপর আরও চারটা কেনা হলে মোট আটটা ঘোড়া হয়ে যায় আমার। ঘোড়া ব্যবহার করে মণকে মণ আদা হলুদ বহন করে রুমা সদর বাজারে বিক্রির জন্য নিয়ে যেতাম। আবার রুমা বাজার থেকেও ঘোড়ায় করে নিত্যপ্রয়োজনীয় মাসিক বাজারসামগ্রী ঘরে নিয়ে ফিরতাম।

পরে বিভিন্ন অসুখে চারটা ঘোড়া মারা যায়। নিজেরও বয়স হওয়ায় তার বড় ছেলেকে এসব ঘোড়া দেখভালের দায়িত্ব দেওয়া হয় বলে জানান তিনি। রুমা উপজেলার কেওক্র্যাডং পাদদেশে এ দার্জিলিং পাড়ায় গিয়ে দেখা গেছে, পাড়া থেকে দেড় দুই কিলোমিটার দূরে চারপাশে পাহাড় ঘেরা একটা এলাকায় ঘোড়াগুলো রাখা হয়েছে। তবে রাস্তার পাশে হওয়ায় ভেতরে ঢুকে বাইরের কেউ তাদের বিরক্ত করতে না পাওে, সেজন্য বাঁশের ঘেরা দিয়ে রাখা হয়েছে।

ঘোড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রাণিসম্পদবিষয়ক কর্মকর্তা ডা. মো. গোলামুর রহমান সাম্প্রতিক দেশকালকে বলেন, ঘোড়াকে কয়েক দিন যাবত একটানা দৌড়ালে বিশ্রাম দেওয়ার পর অনেক সময় পায়ে ফোস্কার মতো হয় তাদের। হাতে পায়ে সমস্যা দেখা দেয়। এ ছাড়া অনেক সময় জ্বর ও কৃমিজনিত সমস্যাও দেখা দিয়ে থাকে। ঘোড়ার বাসস্থান সবসময় খোলা ও উন্মুক্ত অবস্থায় হতে হয়। বাসস্থান কোনো কক্ষে হলে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। পর্যাপ্ত আলো বাতাসের জন্য দরজা ও ভেন্টিলেটর রাখতে হবে।

বড় কিছু সমস্যা না হলে স্বাভাবিক অবস্থায় একটি ঘোড়া ২৫ থেকে ৩০ বছর পর্যন্ত বাঁচে। ঘোড়াকে সবসময় সুস্থ রাখার ব্যাপারে উপজেলা পর্যায়ে প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার পরামর্শ দেন তিনি।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫