Logo
×

Follow Us

বাংলাদেশ

স্বাভাবিকভাবে সন্তান প্রসবে উৎসাহিত করার উদ্যোগ

Icon

মো. রাসেল ইসলাম, দিনাজপুর

প্রকাশ: ২৯ জানুয়ারি ২০২২, ১৫:৫৬

স্বাভাবিকভাবে সন্তান প্রসবে উৎসাহিত করার উদ্যোগ

ছবি: সংগৃহীত

দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্বাভাবিকভাবে সন্তান প্রসবের জন্য প্রসূতিদের উৎসাহিত করা হচ্ছে। সম্প্রতি মিডওয়াইফারি ডিপ্লোমা করা বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ৭ নার্সের সহযোগিতায় প্রসূতিদের স্বাভাবিক সন্তান প্রসব করিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন বীরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকরা। দলগত কার্যক্রমের মাধ্যমে এবং জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতায় কমপ্লেক্সে উন্নতমানের চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন তারা। বদলে দিয়েছেন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসাসেবার চিত্র।

দিনাজপুরে কাজটি শুরু হয়েছিল ২০১৭ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর। বীরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো, জাহাঙ্গীর কবীর, চিকিৎসা কর্মকর্তা আফরোজ সুলতানা বীরগঞ্জের চাকাই গ্রামের প্রসূতি আনজু আরার হাতে নবজাতকের জন্য উপহার তুলে দিয়ে গল্পটা শুরু করেন। সেই গল্প ছড়িয়ে পরে দেশের সীমানা পেরিয়ে চীন, অস্ট্রেলিয়া, জাপান ও থাইল্যান্ডে। দেশ সেরা হাপাসপাতালের পুরস্কার পায় বীরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। এখানকার অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে চীন, জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও থাইল্যান্ড স্বাভাবিকভাবে সন্তান প্রসবে তাদের প্রসূতিদের উৎসাহিত করছে।

বীরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর কবীর এবং চিকিৎসা কর্মকর্তা আফরোজ সুলতানা এখন নেই; কিন্তু তাদের সহযোগিতায় এখনও সেখানে স্বাভাবিক সন্তান প্রসব চলমান রয়েছে। প্রতি সপ্তাহে প্রসূতিদের স্বাভাবিকভাবে সন্তান প্রসব হচ্ছে এখানে। ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার চালুর মাধ্যমে কমপ্লেক্সটিকে শিশুবান্ধব হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে। বিশেষ করে স্বাভাবিকভাবে সন্তান প্রসবের উদ্যোগ সফলতা পাওয়ায় কমপ্লেক্সটি দিনাজপুরে একটি মডেল হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। চিকিৎসকদের এই মহতি উদ্যোগকে অভিনন্দন জানিয়ে বার্তা পাঠায় স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের (চিকিৎসা, শিক্ষা ও পরিবার-পরিকল্পনা বিভাগ) সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম।

সিজারের নামে বাণিজ্য, দালালচক্র ও অদক্ষ ধাত্রীর হাত থেকে প্রসূতিদের রক্ষায় এবং নিরাপদে স্বাভাবিক সন্তান প্রসব করাতেই উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. জাহাঙ্গীর কবীরের নেতৃত্বে বীরগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কয়েকজন চিকিৎসক টিম ওয়ার্কের মাধ্যমে স্বাভাবিক সন্তান প্রসবকাজ শুরু করেন ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে। স্বাভাবিকভাবে সন্তান প্রসব করতে প্রসূতিদের উদ্বুদ্ধকরণ প্রচারে তারা বিভিন্ন কৌশলও কাজে লাগান। এ জন্য স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পক্ষ থেকে প্রসূতিদের বিনামূল্যে ‘প্রসূতি কার্ড’ দেওয়া হয়। এরপর সন্তান প্রসব না হওয়া পর্যন্ত চলতে থাকে কাউন্সেলিং আর ফ্রি চেকআপ।

প্রসূতি কার্ড ও স্বাভাবিক সন্তান প্রসব করাতে মাঠপর্যায়ে শিক্ষক, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, সদস্য ও অন্য জনপ্রতিনিধি, ঈমাম ও বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার স্বাস্থ্যকর্মীদের মাধ্যমে বার্তা পৌঁছনো হয় প্রসূতিদের কাছে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকরাও বিভিন্ন স্থানে গিয়ে কাউন্সেলিং করেন। সে সময় বীরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ওই টিম ওয়ার্কে ছিলেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর কবীর (বর্তমান সিভিল সার্জন নীলফামারী জেলা), আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. মাহমুদুল হাসান পলাশ, মেডিকেল অফিসার আফরোজ সুলতানা, ডা. তাহমিনা ফেরদৌস ও ডা. মাধবী দাস। তাদের সব ধরনের সমর্থন ও সহযোগিতা দেন হাসাপাতাল পরিচালনা কমিটির সভাপতি সংসদ সদস্য মনোরঞ্জন শীল গোপাল।

প্রথম দিকে খুব একটা সাড়া না পেলেও এই টিম ওয়ার্কের মাধ্যমে ২০১৭ সালের আগস্ট মাস থেকে ব্যাপক সাড়া পাওয়া যায়। পরিসংখ্যাটা দিন দিন বাড়তে থাকে। ২০১৫ সালে নরমাল ডেলিভারি হয়েছিল মাত্র ১৩১টি, ২০১৬ সালে তা কমে ৯৪টি, আর ২০১৭ সাড়ে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৯৬টিতে। তারপর আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। ২০১৮ সালে ৭৭১, ২০১৯ সালে ৮০২, ২০২০ সালে ৫৪৪ এবং ২০২১ সালের ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৬২৬টি স্বাভাবিক প্রসব হয়েছে এই হাসাপাতালে। 

সম্প্রতি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সিজার ছাড়াই সন্তান জন্ম দেওয়া মা রহিমা বেগম বলেন, ‘বয়সের কারণে এবং দেরি করে সন্তান নেওয়ায় এলাকার কিছু লোকের কথায় ভয় পেয়েছিলাম। অনেকে ক্লিনিকে সিজার করার পরামর্শ দিয়েছিল; কিন্তু স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মাঠকর্মী এবং চিকিৎসকরা অভয় দিয়ে দায়িত্ব নিলে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হই। এখানে স্বাভাবিকভাবে আমার একটি ছেলে সন্তানের জন্ম হয়। আমি ও ছেলে সুস্থ আছি। কোনো সমস্যা অনুভব করছি না। প্রথমে ভয় পেলেও এখন আমি খুব খুশি।

মিডওয়াইফারি ডিপ্লোমা করা বিশেষ প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত সিনিয়র নার্স রেহানা পারভীন রানু বলেন, এখনো যারা সির্জার করছেন, তারা দালালদের খপ্পরে পরে তা করছেন। অনেকে আবার সিজার করানোর মধ্যে বড়লোকি ভাব খুঁজে পান। প্রসুতিরা ধৈর্য্য ধরলে এবং দালাল প্রতিরোধ করা গেলে নরমাল ডেলিভারি আরও বেড়ে যাবে। 

অস্ট্রেলিয়া ও জাপানের প্রতিনিধি দল সে সময় অভিজ্ঞতা নেওয়ার জন্য বীরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পরিদর্শন করে। তারা এখন আমাদের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে সেসব দেশের প্রসূতিদের স্বাভাবিক প্রসবে উৎসাহিত করছে। এভাবে চলতে থাকলে এসডিজি অর্জন সম্ভব হবে।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫