রফতানি বন্ধ, বিপর্যস্ত কুষ্টিয়ার পান চাষিরা

এস এম জামাল, কুষ্টিয়া
প্রকাশ: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৫:১৬

দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কুষ্টিয়ার পান চাষিরা
দীর্ঘ দিন ধরে রফতানি বন্ধ থাকা ও স্থানীয় বাজারে ভালো দাম না পাওয়ায় বিপর্যস্ত কুষ্টিয়া জেলার পান চাষিরা। এ ছাড়া মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে পানে ব্যাকটেরিয়াজনিত পানপচা রোগের প্রাদুর্ভাব। ফলে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কুষ্টিয়ার পান চাষিরা। অনেকেই ভেঙে ফেলছেন পানের বরজ। ফলে দিন দিন কমতে শুরু করেছে পান চাষ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাংলাদেশের পানে ক্ষতিকর সালমোনেলা ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতির কারণে ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলাদেশ থেকে সাময়িকভাবে পান রফতানির ওপর ইইউ নিষেধাজ্ঞা জারি করে। ধাপে ধাপে এই নিষেধাজ্ঞা ২০২০ সাল পর্যন্ত বর্ধিত হয়। এরপর ইইউ পান রফতানিতে কতিপয় শর্ত জুড়ে দেয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য শর্ত হচ্ছে পান সালমোনেলা ব্যাকটেরিয়া মুক্ত হতে হবে, উৎপাদন হতে শিপমেন্ট পর্যন্ত উত্তম কৃষি চর্চা (গ্যাপ), গুড হাইজিন প্র্যাকটিসেস (জিএইপপি), গুড ম্যানুফ্যাকচারিং প্র্যাকটিসেস (জিএমপি) অনুসরণ করত হবে, আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন অ্যাক্রিডিটেড ল্যাব হতে সালমোনেলা ব্যাকটেরিয়া মুক্ত সার্টিফিকেট দিতে হবে; কিন্তু প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ায় এখনো পান রফতানি বন্ধই রয়েছে।
কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ আঞ্চলিক মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে সপ্তাহে দিন ভাগ করে পানের হাট বসে। এর মধ্যে কুষ্টিয়া সদর উপজেলার বিত্তিপাড়া বাজারে সপ্তাহের রবি ও বৃহস্পতিবার বসে সবচেয়ে বড় হাট। কুষ্টিয়া ছাড়াও পার্শ্ববর্তী চুয়াডাঙ্গা ও ঝিনাইদহসহ অন্যান্য জেলার চাষিরাও পুঁটলি বেঁধে পান নিয়ে এসে এসব হাটে পসরা সাজান।
এখানকার হাটে দু’বছর আগেও পন হিসেবে (৮০ পিস পানে এক পন) পান গুণে কৃষকের হাতে টাকা গুজে দিয়ে যেতেন দেশের দূর-দূরান্ত থেকে আসা ব্যবসায়ীরা; কিন্তু দেশে করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ার পর থেকে মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপে বাংলাদেশের পানের বাজার বন্ধ হয়ে গেছে। একইভাবে করোনার কারণে দেশের অভ্যন্তরেও চাহিদা ব্যাপক হারে কমে যাওয়ায় গত প্রায় এক-দেড় বছর ধরে পানের ভালো দাম পাওয়া যাচ্ছে না।
ভেড়ামারার জুনিয়াদহ এলাকার পানচাষি আসমত আলী বলেন, বাজারে পানের দাম প্রতিনিয়ত কমছে। আগে যেখানে এক পান বাজারে প্রকার ভেদে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা বিক্রি হয়েছে। এখন সেই পান কমতে কমতে ৫০ থেকে ৭০-৮০ টাকায় গিয়ে ঠেকেছে। আবার পান চাষের উপকরণের দাম বেড়ে যাওয়ায় প্রতি বছরই উৎপাদন খরচ বাড়ছে। এ অবস্থায় লাভ তো দূরের কথা উৎপাদন খরচও তুলতে পারছি না। অব্যাহত লোকসানের কারণে চরম হতাশ হয়ে অনেক পান চাষিই দীর্ঘদিনের পানের বরজ ভেঙে ফেলছেন।
পান চাষিরা বলছেন, আগের মতো যদি পান বিদেশে রফতানি করা যায়, তাহলে তারা হয়তো আবার লাভের মুখ দেখবেন।
কুষ্টিয়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খামারবাড়ির উপ-পরিচালক সুশান্ত কুমার প্রামাণিক কুষ্টিয়ার বাজারে বর্তমানে পানের দাম কিছুটা কম থাকার বিষয়টি স্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘মান ভালো হওয়ার কারণে রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রামসহ আরও দেশেই কুষ্টিয়া জেলার পানের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। কাঁচামালের বাজার প্রতিনিয়ত ওঠানামা করে। এ কারণে হতাশ হওয়া চলবে না।’ পান চাষ লাভজনক দাবি করে তিনি কৃষকদের হতাশ না হয়ে চাষ ধরে রাখার আহ্বান জানান।