Logo
×

Follow Us

বাংলাদেশ

অবৈধ দখলে মৃত প্রায় প্রমত্তা চিত্রা নদী

Icon

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৯:৩৪

অবৈধ দখলে মৃত প্রায় প্রমত্তা চিত্রা নদী

প্রমত্তা চিত্রা নদী

অযত্নে অবহেলায় মাত্র কয়েক দশকের ব্যবধানে একসময়ের প্রমত্তা চিত্রা নদী আজ ভরাট হয়ে ধুঁকছে। অবৈধ দখলদারদের পাড় দখলের প্রতিযোগিতায় নদী পাড়ে গড়ে উঠেছে বিশাল বিশাল স্থাপনা। ঝিনাইদহ জেলার অংশের ৪৩ কিলোমিটারের অনেকটায় আজ দখলে চলে গেছে।

ঝিনাইদহ পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জান যায়, ১৭০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই নদীটির ঝিনাইদহ অংশ রয়েছে প্রায় ৪৩ কিলোমিটার। চিত্রা ঝিনাইদহ জেলার একটি ঐতিহ্যবাহী নদী। জেলার দক্ষিণ পাশ দিয়ে বয়ে গেছে। নদীটি চুয়াডাঙ্গা জেলার দর্শনার নিম্নস্থল থেকে উৎপত্তি হয়ে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে ঝিনাইদহে প্রবেশ করেছে। নদীটি আরো দক্ষিণ-পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ হয়ে মাগুরার শালিখায় গিয়ে নবগঙ্গা নদীতে মিশেছে।

সরজমিনে যেয়ে দেখা যায়, কালীগঞ্জ শহরের কালীবাড়ি এলাকায় নদীর মধ্যে বিশাল বড় পুকুর।পুকুরের পাড়ে বিশাল বিশাল গাছ। পুকুরটির মালিক তরিকুল ইসলামের দাবি উপরে তাদের জমি। নিশ্চিন্তপুর এলাকার নদীর মধ্যে একটি ঈদগাহও নির্মাণ করা হয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা মনিরুল ইসলাম জানান, এই স্থানে মাত্র ১৫ থেকে ২০ বছর পূর্বেও নদীর প্রবল স্রোত ছিল। তিনি আরো জানান, এক সময় নদীতে লঞ্চ-স্টিমার চলতো। ব্যবসায়ীদের পণ্য পরিবহনে চিত্রা নদী ব্যবহার হতো। নদীর ঘাটকে ঘিরে গড়ে ওঠেছে আজকের কালীগঞ্জ শহর। এছাড়া নদী পাড়ে আরো গড়ে উঠেছে গান্না, চাপরাইল, মঙ্গলপোতাসহ ছোট ছোট বেশ কয়েকটি বাজার। বর্তমানে নদীটি দখল হয়ে অনেক স্থানে সংকুচিত হয়ে পড়েছে।

কালীগঞ্জ উপজেলার সিংদহ গ্রামের মতিয়ার রহমান, ইসাহক আলী, সিরাজুল ইসলাম, লিয়াকত আলী, মিজানুর রহমান, মফিজ উদ্দিন, আফসার আলী ও মো. আব্দুল এর ৮টি পুকুর আছে নদীর জায়গায়। কোটচাঁদপুর উপজেলার তালসার এলাকায় দেখা গেছে জনৈক আব্দুল মালেক নদীর মধ্যে ধান চাষ করছেন। 

তিনি জানান, উপরের জমির মালিক, তাই নিচের জমিও তারই দখলে। এই স্থানে নদী এটা স্বীকার করে বলেন, সবাই চাষ করছেন তাই তিনিও করছেন। তালসার গ্রামের আব্দুল করিম জানান, তিনি যে পর্যন্ত ধান চাষ করছেনে সবটুকু ব্যক্তি মালিকের জমি। তিনি ক্রয় সূত্রে জমির মালিক হয়েছেন।

কালীগঞ্জ শহরের বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে চিত্রা নদীর ব্রিজ সংলগ্নে নির্মাণ শুরু হয়েছিল পাকা ভবন। আপাতত বন্ধ আছে। এরই পশ্চিমে শিবনগর গ্রামের নিচে জনৈক মুক্তার হোসেন নদীর জায়গায় পাকা ঘর তৈরি করেছেন। মুক্তার হোসেনের দাবি এটা তারই জায়গা। নদী এলাকায় দেখা গেছে কোটচাঁদপুরের তালসার থেকে কালীগঞ্জের শালিখা পর্যন্ত নদীর দুই পাড় অসংখ্য পুকুর কাটা হয়েছে। যেখানে মাছ চাষ করা হচ্ছে। প্রবীণ ব্যক্তি রেজাউল ইসলামের ভাষায় এগুলো সবই নদী ছিল।


একাধিক ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কোথাও ১২০ থেকে ১৫০ ফুট আবার কোথাও ১১০ থেকে ১২০ ফুট রয়েছে কাগজে-কলমে। চিত্রা নদীর প্রস্ত ১ শত ফুটের নিচে কোথাও নেই। যা বর্তমানে ৩০ থেকে ৪০ ফুটে এসে দাঁড়িয়েছে। কোথাও কোথাও এরও নিচে চলে গেছে। দলখদার দখল করে নদীকে খালে পরিণত করেছে।

চিত্রা বাঁচাও আন্দোলনের আহবায়ক শিবুপদ বিশ্বাস জানান, চিত্রায় অসংখ্য পুকুর আর ভবন রয়েছে। অথচ সরকারের দখলের তালিকায় এসেছে মাত্র ৮টি পুকুর। বর্তমানে শুরু হয়েছে ধান চাষ। এরা প্রথমে ধান চাষ করবেন, পরে বড় বড় গাছ লাগিয়ে দখল করবেন।

ঝিনাইদহ অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) রাজিবুল ইসলাম খান জানান, চিত্রা নদীর অবৈধ দখলদারের একটা তালিকা তৈরি হয়েছে। এগুলো উচ্ছেদের পরিকল্পনা তাদের রয়েছে, কিন্তু করোনা পরিস্থিতির জন্য এতদিন করা সম্ভব হয়নি।

এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর যশোর অঞ্চলের পরিচালক হারুন-অর রশীদ জানান, পুকুর ভরাট, জলাশয় ভরাট, নদী ভরাট আইনগত নিষিদ্ধ।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫