মাছ শিকারে দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা ১ মার্চ থেকে

ভোলা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০৯:৫৮
-621c486956ecd.jpg)
ভোলার দুইটি অভয়াশ্রমেও নিষেধাজ্ঞা কার্যকর থাকবে। ছবি : ভোলা প্রতিনিধি
ইলিশসহ সব ধরনের মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকার দেশের ছয়টি অভয়াশ্রমে প্রতি বছরের মতো এ বছরও ১ মার্চ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত দুই মাস মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।
এই কর্মসূচির আওতায় ভোলার মেঘনার ইলিশা থেকে চর পিয়াল ও তেঁতুলিয়া নদীর ভেদুরিয়া থেকে চর রুস্তম পর্যন্ত ১৯০ কিলোমিটার এলাকার দুইটি অভয়াশ্রমেও নিষেধাজ্ঞা কার্যকর থাকবে। মাছ শিকার থেকে বিরত থাকা জেলেদের মাঝে চাল বিতরণ করা হবে।
তবে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে যারা মাছ শিকার করবে তাদের বিরুদ্ধে পরিচালনা করা হবে বিশেষ অভিযান।
অক্টোবরের প্রজনন মৌসুমে ডিম ছাড়ার পর বর্তমান সময়টি ইলিশ মাছের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এসময় ইলিশ জাটকা থেকে বেড়ে পরিপূর্ণ হয়ে উঠে। ইলিশের বেড়ে ওঠার পাশাপাশি অন্যান্য মাছ এসময় নদীতে ডিম ছাড়ে বিধায় ভোলার মেঘনা নদীর ইলিশা থেকে মনপুরার চর পিয়াল পর্যন্ত ৯০ কিলোমিটার এবং তেতুঁলিয়ার ভেদুরিয়া থেকে চর রুস্তমের ১০০ কিলোমিটারসহ মোট ১৯০ কিলোমিটার অভয়াশ্রম এলাকায় ১ মার্চ থেকে ইলিশসহ সব ধরনের মাছ ধরা বন্ধ থাকবে।
জেলেদেরকে এসময় মাছ শিকার থেকে বিরত রাখতে মৎস্য বিভাগ ভোলা জেলার ১৩২ টি মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রসহ বিভিন্ন এলাকায় চালিয়ে যাচ্ছে বিশেষ প্রচার-প্রচারণা। জেলেরাও মাছ ধরা থেকে বিরত থাকতে প্রস্তুত।
তবে তাদের অভিযোগ, প্রতি বছরই তারা সরকারের নিষেধাজ্ঞা মেনে চলে কিন্তু প্রভাবশালীরা অবৈধ জাল দিয়ে ইলিশসহ অন্য মাছগুলো নষ্ট করে ফেলে। অথচ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সেদিকে গুরুত্ব দেয় না।
জেলেরা বলছেন, এ দুইমাস তাদেরকে খুব কষ্টে থাকতে হয়। ঠিকমতো ঋণের কিস্তি দিতে পারেন না। অনেকে বিকল্প কাজ যোগার করতে ব্যর্থ হন। তাদের জন্য প্রণোদনা হিসাবে জনপ্রতি ৪০ কেজি করে ৪ মাসের যে চাল বরাদ্দ করা হয় তাও তারা সময় মতো পান না।
ভোলার কাজিরহাট ঘাটের জেলে হানিফ মাঝি বলেন, দুই মাসের যে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যেক বছরই আমরা মানি। কিন্তু আমাদেরকে যে চাল দেয়ার কথা সেটা আমরা ঠিকমত পাই না। এই দুই মাসের অভিযানে আমাদের খাওয়া-দাওয়া ও চলতে-ফিরতে অনেক কষ্ট হবে। অনেকে আবার দেনার দায়ে বাড়ি-ঘর ছেড়ে পালিয়ে যাবে।
ইলিশা ঘাটের জেলে শামসুদ্দিন মাঝি বলেন,আমাদের অনেক দেনা আছে। বিভিন্ন ধরনের এনজিও থেকে আমাদের লোন আছে, সেখানে আমাদের কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে হয়। দুই মাসের এই অভিযানে যদি সরকার লোনের কিস্তি বন্ধ না করে তাহলে আমরা কিভাবে মাছ ধরা বন্ধ রাখবো।
নাছির মাঝি ঘাটের জেলে মাইনুল ফরাজি বলেন, প্রত্যেকবারই দুই মাসের অভিযান আমরা মানি কিন্ত ক্ষমতাবান জেলেরা তো মানে না। প্রশাসনও তাদেরকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। তাদের জন্যই তো নিষেধাজ্ঞা ব্যর্থ হয়। এছাড়া সরকারের কাছে আমার দাবি, আমাদের জন্য এই সময় সরকার যে চাল দেয়ার কথা সেটা যেন আমরা সময়মতো সঠিকভাবে পাই এবং আমাদের যে এনজিওর লোন আছে সেই কিস্তিগুলো যেন এই দুই মাস বন্ধ রাখে।
ভোলা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এস.এম. আজাহারুল ইসলাম জানিয়েছে, দু-একদিনের মধ্যেই জেলেদের জন্য বরাদ্দকৃত চাল পাওয়া যাবে এবং এই চাল দ্রুত বিতরণের ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে আইন অমান্যকারী জেলেদের ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জেল জরিমানাসহ শাস্তির আওতায় আনা হবে।
ভোলা মৎস্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, জেলায় ১ লাখ ৪০ হাজার নিবন্ধিত জেলে রয়েছে। নিবন্ধনের বাইরেও রয়েছে আরও অন্তত ২ লাখ। জাটকা রক্ষা কর্মসূচির আওতায় ৯০ হাজার জেলেকে চার মাস ৪০ কেজি করে চাল দেয়া হবে।