Logo
×

Follow Us

বাংলাদেশ

মহিষের দইয়ে বছরে অর্ধশত কোটি টাকার ব্যবসা

Icon

জুনায়েদ আহম্মেদ, লক্ষ্মীপুর

প্রকাশ: ১৫ মার্চ ২০২২, ১৫:৩৫

মহিষের দইয়ে বছরে অর্ধশত কোটি টাকার ব্যবসা

মহিষের দধি

উপকূলীয় জেলা লক্ষ্মীপুরে মহিষের দুধের টক দধি অত্যন্ত জনপ্রিয়, সুস্বাদু ও ঐতিহ্যবাহী খাদ্য হিসেবে বেশ পরিচিতি লাভ করেছে। এ অঞ্চলে সামাজিক যে কোনো অনুষ্ঠানে মুখরোচক খাবার হিসেবে মহিষের দধি থাকে। আতিথিয়তায় মহিষের টক দধির ব্যাপক চাহিদা বেড়েছে এ অঞ্চলে।

এখানকার দধি পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোসহ ঢাকা, চট্টগ্রাম থেকে দধির পাইকাররা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। প্রতি বছর এ জেলায় প্রায় ৫০ কোটি টাকার মহিষের দধি বিক্রি হচ্ছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।  

উপকূলীয় লক্ষ্মীপুর জেলায় একটি জনপ্রিয় ও ঐতিহ্যবাহী খাদ্য মহিষের কাঁচা দুধের টক দধি। যেটি স্থানীয়দের নিকট ‘মহিষা দই’ নামে পরিচিত। দৈনিক ১০ টনের বেশি এবং বছরে প্রায় সাড়ে তিন হাজার টন মহিষা দধি তৈরি হয় লক্ষ্মীপুরে। এ জন্য বছরে প্রায় চার হাজার টন মহিষের কাঁচা দুধ প্রয়োজন হয়। দধি তৈরির জন্য দুধ আসে জেলার পশ্চিম ও দক্ষিণের মেঘনা নদীর দ্বীপ ও চরসমূহের মহিষের বাথান থেকে। স্থানীয় দধি বিক্রেতা, দুধ ব্যবসায়ী, মহিষের বাথান মালিক এবং পশু সম্পদ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে। 

জেলাজুড়ে দধি বিক্রেতা রামগতি উপজেলার আলেকজান্ডার বাজারের মহিষা দধি ভাণ্ডারের স্বত্বাধিকার সুমন ও পাইকারি মহিষের দুধ বিক্রেতা কমলনগর উপজেলার তোরাবগঞ্জ বাজারের কাশেম থেকে জানা যায়, জেলার প্রায় ৪০টি ছোট বড় হাটে দেড় শতাধিক দধি বিক্রির দোকান গড়ে উঠেছে। রামগতি উপজেলা মহিষা দধির জন্য পুরো জেলায় সুখ্যাতি আছে। এখানকার দধি জেলার বাইরেও বিক্রি হচ্ছে। বর্তমানে প্রতি কেজি মহিষের দধি বিক্রি হচ্ছে ১২০-১৫০ টাকা দরে। দৈনিক প্রায় ১০ টন দই বিক্রি হয়, যার বাজারমূল্য কমপক্ষে ১৩ লাখ টাকা। তবে বছরে তা ৫০ কোটি টাকারও বেশি। 

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয়ের তথ্য মতে, জেলার ১২টি দ্বীপ চর ও মূল ভূখণ্ডের চরে প্রায় ২০ হাজার মহিষ পালন করা হয়। এর মধ্যে রামগতি উপজেলার বিভিন্ন দ্বীপ চরে ৬ হাজার ৩০০, কমলনগরে ৬ হাজার, সদর উপজেলায় ৫ হাজার ৭০০ এবং রায়পুরে ১২শ’সহ জেলায় মোট ২০ হাজার মহিষ পালন করা হয়। 

স্থানীয়রা জানায়, আগে সামাজিক অনুষ্ঠানে দধি হলেই চলত। এখন অতিথিরাই মহিষের দধি রাখার বিষয়ে আগে থেকেই জানিয়ে রাখেন। মহিষের দধি স্থানীয়ভাবে ‘মহিষা দই’ নামে পরিচিত। সারাবছর মহিষা দধি বিক্রি হলেও, বিভিন্ন উৎসবে এর চাহিদা ব্যাপক বেড়ে যায়। 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার- আবদুল্লাহ, তেলির, মৌলভী, মুজাম, আলেকজান্ডার ও চর বাদাম, কমলনগর উপজেলার- কাঁকড়া, মাইজের চর ও চর শামছুদ্দিন, সদর উপজেলার- রমনী মোহন, মেঘারচর, রায়পুর উপজেলার- হাজীগঞ্জ, টুনির, সাওয়ার চর এলাকায় বাথানে মহিষ পালন করা হয়। 

সদর উপজেলার মধুবন মিষ্টান্ন ভান্ডারের দধি বিক্রেতা সেলিম জানান, চর থেকে দুধ আনার পর কাঁচা দুধ সরাসরি ১ থেকে ২ কেজি সাইজের এক ধরনের পাত্রে ঢালা হয়। এ পাত্রগুলোকে টালি বলে। টালিতে কাঁচা দুধ রাখার ১৫-১৬ ঘণ্টা পর দুধ জমে দধি হয়। 

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডা. জোবায়ের হোসেন বলেন, অত্যন্ত পুষ্টিকর এবং সুস্বাদু মহিষা দধি লক্ষ্মীপুর জেলার একটি ঐতিহ্যবাহী খাদ্যদ্রব্য। জেলায় প্রতিদিন ১০ টনের বেশি মহিষের দধি উৎপাদন হচ্ছে। মহিষের দধির চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় মহিষের দুধের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ খামারি ও বাথানিদের প্রশিক্ষণের আওতায় আনার চেষ্টা করছেন।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫