Logo
×

Follow Us

বাংলাদেশ

অযত্ন-অবহেলায় মৃতপ্রায় এশিয়ার বৃহত্তম বটগাছ

Icon

আহমেদ নাসিম আনসারী, ঝিনাইদহ

প্রকাশ: ৩১ মার্চ ২০২২, ১৯:৪৯

অযত্ন-অবহেলায় মৃতপ্রায় এশিয়ার বৃহত্তম বটগাছ

ঝিনাইদহে এশিয়ার সবচেয়ে বড় বটগাছ। ছবি- প্রতিনিধি

নামে এশিয়ার সবচেয়ে বড় বটগাছ। তাতে কি! এমন বিরল প্রাকৃতিক সৃষ্ট গাছটি চরম অযত্ন অবহেলায় আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। তিন’শ বছরের পুরনো ঝিনাইদহের এ বিশাল গাছটি হতে পারতো বাংলাদেশের অন্যতম পর্যটন স্পট। কিন্তু ঝিনাইদহ বন বিভাগের উদাসীনতায় কালের গর্ভে হারিয়ে যেতে বসেছে গাছটি।

গত ২০ বছর ধরে বিশাল এই বটগাছটি দেখভালের দায়িত্বে থাকা একমাত্র মানুষ আব্দুল খালেক জানান, গত দুই বছর হলো সম্মানী পান মাত্র ১ হাজার টাকা। পুরো ১১ একর জমি জুড়ে দাঁড়িয়ে থাকা এলাকাটি পরিষ্কার পরিচ্ছন্নসহ বট গাছের ”বয়া” নামানোর মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজটিও করছে সে। তার অন্য ৩ সন্তানের মতোই ভালোবাসেন বটগাছটিকে। কিন্তু গাছটির ভবিষ্যৎ নিয়ে যথেষ্ট শঙ্কিত তিনি।

জানা যায়, ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলা শহর থেকে মাত্র ১২ কিলোমিটার এগোলে চোখে পড়বে সবুজের বিশাল সমারোহ । গ্রামের নামানুসারে এটি সুইতলা মলি­কপুর বটগাছ নামেও পরিচিত। বটগাছটি ১৯৮৪ সালে বিবিসির জরিপে এশিয়া মহাদেশের বৃহত্তম বটগাছের খ্যাতি পায়। প্রায় তিন’শ বছর আগের এই গাছের উৎপত্তি সম্পর্কে সঠিক কোন তথ্য এলাকাবাসী জানাতে না পারলেও ২৫০ থেকে ৩০০ ফুট উচ্চতায় ফাঁকা মাঠের মধ্যে দীর্ঘদিনের এ বটগাছটি একের পর এক ঝুরি ছেড়ে বিরাট আকার ধারণ করে। 

সুইতলা মল্লিকপুরের ৭০ বছর ঊর্ধ্ব আবুল হাসেম জানান, চরম অযত্ন-অবহেলা, রক্ষণাবেক্ষণের অভাব ও নানামুখী অত্যাচারের কারণে এই ঐতিহ্যবাহী বটগাছের অস্তিত্ব আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। যেটি হতে পারতো দেশের অন্যতম টুরিস্ট স্পট বা অর্থনৈতিক জোন কিন্তু তা আজ নিঃশেষ হওয়ার পথে।

একই এলাকার জামাল উদ্দিন জানান, একসময় গাছটির দুই হাজার ঝুরি ছিল। এখন সেই ঝুরির সংখ্যা কমে কয়েক শতে নেমে এসেছে। পর্যটকদের সুবিধার্থে এখানে ১৯৯০ সালে সরকারীভাবে একটি রেস্ট হাউজ নির্মাণ করা হলেও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সবই আজ ধ্বংসের পথে। ফলে দেশ বিদেশ থেকে আসা পর্যটকদের পড়তে হচ্ছে দুর্ভোগে। 

এলাকাবাসী লতিফুর রহমান জানান, আমার দাদার কাছে গল্প শুনেছি, এখানে একটি কুয়া ছিল। সেখানেই গাছটি জন্ম নেয়। এরপর আস্তে আস্তে বিস্তৃত হয় আজকের বিশাল বটগাছে রূপ নেয়।

যশোর থেকে দেখতে আসা ইয়াছিন রহমান, কামাল পাশা জানান, প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে অসংখ্য মানুষ দেখতে আসে এ বটগাছটি। অনেক দিন ধরেই এই বটগাছটি দেখার ইচ্ছে ছিল। দেখলাম। মনটা ভরে গেল। দেশে যে এত সুন্দর প্রাকৃতিক সৃষ্ট সম্পদ রয়েছে না দেখলে বিশ্বাস করতাম না।

কোটচাদপুর ভারপ্রাপ্ত বন কর্মকর্তা আকরাম আলী জানান, জেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ থেকে বন বিভাগ প্রাকৃতিক পরিবেশ উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় এ বটগাছটি সংরক্ষণের দায়িত্ব নিয়েছে ২০০৯ সালে। গাছটির আয়তন বৃদ্ধির জন্য নতুন করে দুই একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। গাছটিকে টুরিস্ট স্পট জোন ও উন্নয়নে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলবো।  

ঐতিহাসিক এ বটগাছটি দ্রুত সংরক্ষণ এবং পর্যটন কেন্দ্র হিসাবে ঘোষণা হবে এমনটিই প্রত্যাশা এলাকাবাসীর।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫