Logo
×

Follow Us

বাংলাদেশ

পানিশূন্য হয়ে পড়েছে উত্তরাঞ্চলের ৮৫ নদ-নদী

Icon

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৫ এপ্রিল ২০২২, ১০:১৪

পানিশূন্য হয়ে পড়েছে উত্তরাঞ্চলের ৮৫ নদ-নদী

ছবি: সংগৃহীত

বর্ষার দুই মাস ছাড়া বাকি সময়ে শুকিয়ে মরা নদীতে পরিণত হয়েছে পদ্মা। নদীর বুকে জেগে উঠেছে বড় বড় চর। সেইসাথে পদ্মার সাথে সংযুক্ত প্রধান শাখা-প্রশাখা নদীগুলো যেমন- বড়াল, আত্রাই ও গড়াইসহ অন্তত ৮৫টি নদী পানিশূন্য হয়ে পড়েছে।

শুকনো নদ-নদীতে চাষ হচ্ছে, বোরো ধানসহ গম, সরিষা ও ডাল। এসব নদীতে পানি না থাকায় এক সময়ের মৎস্যজীবীরা পেশা পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়েছেন। কারণ বরেন্দ্র অঞ্চলে দ্রুত নিচে নামছে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর। শুষ্ক মৌসুমে পানির জন্য হাহাকার বাড়ছে। আগামীতে আরো ভয়াবহ পরিস্থিতির আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

জানা গেছে, বরেন্দ্র অঞ্চলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর প্রতি বছরই নিচে নামছে। ফলে ব্যাহত হচ্ছে কৃষি জমিতে সেচ কার্যক্রম। চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল ও গোমস্তাপুর, রাজশাহীর তানোর ও গোদাগাড়ী এবং নওগাঁর পোরশা, সাপাহার ও নিয়ামতপুর উপজেলায় সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে কমপক্ষে ৪৭ মিটার উঁচু। শুষ্ক মৌসুমে এলাকাগুলোতে ব্যবহারযোগ্য পানির চরম সংকট দেখা দেয়। বিশুদ্ধ খাবার পানি সংগ্রহ নিয়ে উৎকণ্ঠায় দিন কাটে হাজারও মানুষের।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক, ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও বর্তমান ভিসি ড. গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, ‘ভূগর্ভস্থ পানির সাথে নদীর স্তরের একটা সংযোগ রয়েছে। কোনো কোনো সময় ভূগর্ভস্থ পানি নদীতে আবার নদী থেকে পানি ভূগর্ভস্থ স্তরে রিচার্জ হয়ে থাকে। জলবায়ু পরিবর্তন ও অনাবৃষ্টির কারণে প্রকৃতির এসব স্বাভাবিক কাজে বিঘ্ন ঘটছে। এছাড়া নদীর উৎসের অববাহিকায় বৃষ্টিপাত কম থাকায় এবং ভারতের অভ্যন্তরে সময়ে অসময়ে বাঁধ দিয়ে পানি প্রত্যাহার করে নেওয়ায় আজ আত্রাই নদীর এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। নদীটির অস্তিত্ব হারিয়ে গেলে জীবন-জীবিকার ওপর বিরূপ প্রভাব পড়বে।’

তিনি আরো বলেন, ‘নদীর গতিপথ ঠিক রাখতে যত্র তত্র বালু উত্তোলন বন্ধসহ বিশ্ব নদী আইন মেনে পানির সুষম বণ্টন হলে, শুধু আত্রাই নয়; অন্যান্য নদীর অস্তিত্ব বিলীন হবে না।’

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের খনিজ ও পানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক চৌধুরী সারোয়ার জাহান বলেন, ‘দিন দিন পরিস্থিতি আরো খারাপ হচ্ছে। কারণ ভূগর্ভস্থ পানিতে সব মানুষের অধিকার থাকলেও, অল্প কিছু দেশ তা নিয়ন্ত্রণহীনভাবে তুলে নিচ্ছে।’

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক, ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও বর্তমান ভিসি ড. গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, ‘চাঁপাইনবাবগঞ্জের প্রায় ২৩ বর্গকিলোমিটার এলাকার ঝিলিম ইউনিয়নে কমপক্ষে ৩৫টি অটোরাইস মিল আছে; যেগুলো প্রতিনিয়ত ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন করছে। এর ব্যাপক প্রভাব পড়ছে মাটির নিচের পানির স্তরে। ২০১৮ সাল পর্যন্ত সাত বছরে এই অঞ্চলের বার্ষিক বৃষ্টিপাত কখনো এক হাজার ৪০০ মিলিমিটার অতিক্রম করেনি, যা জাতীয় গড় দুই হাজার ৫৫০ মিলিমিটার থেকে ৪৫ শতাংশ কম।’

বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষর (বিএমডিএ) এক হিসাব অনুসারে, বরেন্দ্র অঞ্চলের বার্ষিক ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনের পরিমাণ ১৩ হাজার ৭১০ মিলিয়ন ঘনমিটারের বেশি। প্রায় ৭০ শতাংশই বেসরকারি গভীর নলকূপ দিয়ে উত্তোলিত হচ্ছে। প্রকৌশলীদের হিসাব অনুযায়ী, এই পরিমাণ পানি এক বিঘা আয়তনের দুই মিটার গভীরতা বিশিষ্ট ১৮ লাখ পুকুর ভরে ফেলার জন্য যথেষ্ট।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) রাজশাহী জেলা কমিটির সভাপতি জামাত খান বলেন, ‘গোটা উত্তরাঞ্চলের পাতাল প্রায় পানিশূন্য। সরকারি সংস্থার জরিপে এই চিত্র উঠে এসেছে। শুধু রাস্তা আর বিল্ডিং মানে উন্নয়ন নয়। উন্নয়নের পূর্বশর্ত পানি, অথচ পদ্মায় পানি নেই।’

ওয়াটার এইড বাংলাদেশ জোনালের কো-অর্ডিনেটর মো. রেজাউল হুদা মিলন বলেন, ‘এই অঞ্চলে শুকনো মৌসুমে পানির স্তর ক্রমেই নিচে নামছে। একইসাথে এই অঞ্চলের মানুষের দুর্ভোগও বাড়ছে। সামনে দুর্ভোগ আরো জটিল আকার ধারণ করবে। এ বিষয়ে এখন সরকারকে উদ্যোগী হতে হবে। একইসাথে সামাজিক সচেতনতা বাড়াতে হবে। পানির অপচয় রোধ ও যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিতকরণে পানি দিবসে আমরা শিক্ষার্থীদের এই বিষয়ে শপথবাক্য পাঠ করিয়েছি।’

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫