Logo
×

Follow Us

বাংলাদেশ

সবজির নামে বিষ খাচ্ছে মানুষ

Icon

গোলাম মোস্তফা মুন্না, যশোর

প্রকাশ: ০৫ এপ্রিল ২০২২, ১৪:৫৯

সবজির নামে বিষ খাচ্ছে মানুষ

ছবি: যশোর প্রতিনিধি

সবজির রাজ্য যশোরে উৎপাদিত সবজিতে বিষ। পোকা-মাকড় দমনে বেগুন, শিম, ফুলকপি ও শাকে অবাধে মাত্রাতিরিক্ত বিষ ছিটানো হচ্ছে। বিষ স্প্রে করার পরের দিন ভোরে চাষিরা সবজি বাজারজাত করছেন বলে স্থানীয় অনেকেই জানিয়েছেন।

সবজির নামে বিষ খাচ্ছে মানুষ। সহনীয় মাত্রায় বিষ ব্যবহারের পর নির্দিষ্ট সময়ের আগে সবজি বাজারজাত করা মানেই, মানুষকে বিষ খাওয়ানো হচ্ছে বলে জানান বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। 

যশোর কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, বিষমুক্ত সবজি চাষে কৃষকদের নানাভাবে সচেতন করা হয়। এছাড়া পোকা মাকড় দমনে ফেরোমন ফাঁদ ও আইপিএমএর বিভিন্ন পদ্ধতিতে সবজি চাষে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। তারপরেও সবজিতে অতিরিক্ত বিষ ব্যবহার বন্ধ হচ্ছে না। 

সরেজমিনে দেখা গেছে, যশোর সদর উপজেলার চুড়ামনকাটি, হৈবতপুর ও কাশিমপুর ইউনিয়নে বারো মাস সবজির চাষ করেন কৃষকরা। সেখানে দেখা গেছে মাঠের পর মাঠ সবজির সবুজে সমারোহ। 

যশোর আঞ্চলিক কৃষি অফিস সূত্র মতে, এবার যশোর জেলায় ১৬ হাজার হেক্টর জমিতে সবজির চাষ হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে চাষ হয়েছে- চুড়ামনকাটি, হৈবতপুর ও কাশিমপুর ইউনিয়নে। 

স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তাদের সূত্রে জানা গেছে, হৈবতপুর ইউনিয়নে এক হাজার ৬৩০ হেক্টর, চুড়ামনকাটি ইউনিয়নে ৮২৮ হেক্টর ও কাশিমপুর ইউনিয়নে ৫৫৩ হেক্টর জমিতে সবজির চাষ হয়েছে। এখানে উৎপাদিত সবজির সুনাম দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও রয়েছে; কিন্তু আগের মতো সবজিতে আর সেই স্বাদ নেই। কারণ সবজির সাথে বিষ খাচ্ছে মানুষ। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সবজিতে ছিটানো বিষের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- রিনকর্ড, সিমবুন, সুমিসাইডিন, হেপ্টাক্লোর, থায়াডিন, ডিডিটি। এগুলো খুবই বিপজ্জনক। এছাড়াও নগস, সুমিথিয়ন, ডাইমেক্রন, ম্যালালাথিয়ন, অ্যারোমাল ইত্যাদি। এসব কীটনাশক প্রয়োগের পর অপেক্ষমানকাল কোনোটির তিনদিন, সাতদিন, ২১ দিন এমনকি ছয়মাস পর্যন্ত হতে পারে। 

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, চাষিরা সব বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে বিষ প্রয়াগের কয়েক ঘণ্টা পরেই সবজি বাজারজাত করছেন। তরতাজা সবজি বেশি দামে বিক্রির আশায় চাষিরা মানুষকে বিষ খাওয়াচ্ছেন। 

চুড়ামনকাঠি, আব্দুলপুর, ছাতিয়ানতলা, সানতলা, নুরপুর, বাগডাঙ্গা, দোগাছিয়া, সাজিয়ালী, শ্যামনগর, হৈবতপুর, তীরেরহাট, মানিকদিহি, মথুরাপুর, শাহাবাজপুর, মুরাদগড়, কাশিমপুর, বিজয়নগর, দৌলতদিহি, বালিয়াঘাট ললিতাদাহ, বালিয়াডাঙ্গা, বেনেয়ালী, ডহেরপাড়া, লাউখালী, নাটুয়াপাড়ার প্রতিটি মাঠে আবদকৃত সবজিতে মাত্রাতিরিক্ত বিষ ছিটানো হচ্ছে। কোনো নিয়ম মানছেন না তারা। অনেকেই খালি শরীরে মুখে কাপড় না বেঁধে বিষ ছিটানোর কাজ করছেন। 

বিভিন্ন ইউনিয়নে দায়িত্বরত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা জানান, সবজিতে মাত্রাতিরিক্ত বিষ দেওয়ার বিষয়ে চাষিদের বারবার নিষেধ করা হচ্ছে। তাদের সচেতন করতে মাঠ দিবস ও উঠান বৈঠকসহ বিভিন্নভাবে সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার ওপর আলোচনা করা হচ্ছে। কীটনাশক ছাড়াই উন্নত মানের সবজি কীভাবে আবাদ করা যায়, তার প্রশিক্ষণও দেওয়া হয় কৃষান-কৃষানিদের। 

তবে পূর্বের তুলনায় চাষিরা এখন অনেক সচেতন। অনেকেই বিকল্প পদ্ধতিতে সবজি ক্ষেতে পোকা মাকড় দমন করছেন। তবে বেগুন ও শিমে কিছু কিছু চাষি অতিরিক্ত বিষ ব্যবহার করেন। 

যশোর কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক দিপঙ্কর দাস জানান, যশোর সবজির জেলা হিসেবে সারাদেশে পরিচিত। যে কারণে এখানে নিরাপদ সবজি উৎপাদনের বিষয়ে চাষিদের বরবরাই সচেতন করতে হয়। সবজির পোকা-মাকড় দমনে কীটনাশকের বিকল্প ব্যবস্থাপনার ওপর বেশি জোর দেওয়া হচ্ছে। 

চাষিদের বলা হচ্ছে, মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহার না করার এবং নিয়ম মেনে বাজারজাত করার জন্য। তাহলে মানব দেহে এর কোনো প্রভাব পড়বে না। 

যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আখতারুজ্জামান জানান, অতিরিক্ত বিষ ছিটানো সবজি নিয়ম না মেনে বাজারজাত করা মোটেও ঠিক না।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫