সাশ্রয়ী মূল্যে ঢাকাকে সমরাস্ত্র দিতে ইচ্ছুক ওয়াশিংটন

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৭ এপ্রিল ২০২২, ১২:৩৭

ওয়াশিংটন ডিসিতে বাংলাদেশ-মার্কিন নিরাপত্তা সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। ছবি : সংগৃহীত
বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী আধুনিকায়নে ও প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এ সংক্রান্ত দুটি চুক্তি জেনারেল সিকিউরিটি অব মিলিটারি ইনফরমেশন এগ্রিমেন্ট (জিসোমিয়া) ও অ্যাকুজিশান অ্যান্ড ক্রস-সার্ভিসিং এগ্রিমেন্ট (আকসা) নিয়ে উভয়পক্ষের মধ্যে গঠনমূলক আলোচনা হয়েছে।
স্থানীয় সময় গতকাল বুধবার (৬ এপ্রিল) যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটনে দিনভর বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র নিরাপত্তা সংলাপের অষ্টম বৈঠকে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
বৈঠকে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র নিরাপত্তা সহযোগিতা, সন্ত্রাসবাদ ও বেসামরিক নিরাপত্তা সহযোগিতা, আঞ্চলিক বিষয় এবং শান্তিরক্ষা সংক্রান্ত চারটি সেশনে আলোচনা হয়।
এছাড়া বাংলাদেশের কাছে সাশ্রয়ী মূল্যে নিরাপত্তা সরঞ্জাম বিক্রি এবং প্রয়োজনে এ সংক্রান্ত ঋণ সহায়তার নতুন প্রস্তাব দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। অনেকদিন ধরে ভারি সমরাস্ত্রসহ নিরাপত্তা সরঞ্জামাদি ক্রয়-বিক্রয়ের কথাবার্তা চললেও দাম বেশি হওয়ায় ঢাকা আগ্রহ পাচ্ছিল না। এ অবস্থায় ৫০ বছরের বন্ধুত্ব ও প্রায় এক যুগের অংশীদারিত্বমূলক সম্পর্কের খাতিরে বাংলাদেশকে এই বিশেষ সুবিধা দেয়ার প্রস্তাব করেছে দূর যুক্তরাষ্ট্র।
বৈঠক সূত্র জানিয়েছে, গত ২০ মার্চ ঢাকায় অনুষ্ঠিত দ্বিপক্ষীয় আলোচনার সর্বোচ্চ প্রাতিষ্ঠানিক ফোরাম পার্টনারশিপ ডায়ালগে মার্কিন নিরাপত্তা সরঞ্জাম সাশ্রয়ী মূল্যে বাংলাদেশ পেতে পারে এমন ইঙ্গিত মিলেছিল। এবারের নিরাপত্তা সংলাপে এ সংক্রান্ত আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব এবং মার্কিন সহায়তার নিশ্চয়তা পেল বাংলাদেশ।
এটি দুই দেশের মধ্যে অষ্টম নিরাপত্তা সংলাপ। নিরাপত্তা সংলাপ সাধারণত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক পর্যায়ের কর্মকর্তার নেতৃত্বে হলেও, এ বছর এটির নেতৃত্ব দেন সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারা। বাংলাদেশের পক্ষে সংলাপে নেতৃত্ব দেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন এবং মার্কিন প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন দেশটির অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি বনি ডেনিস জেনকিন্স।
ওয়াশিংটনের একাধিক কূটনৈতিক সূত্র সাশ্রয়ী মূল্যে মার্কিন সমরাস্ত্র বিক্রির প্রস্তাব নিয়ে আলোচনার বিষয়টি সংবাদ মাধ্যমের সাথে আলাপে স্বীকার করেছে।
তাদের দাবি, বাংলাদেশ প্রস্তাবটি ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করেছে, তবে তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিক্রিয়া দেখানো হয়নি। মার্কিন প্রস্তাবটি আকর্ষণীয় হলেও তাতে তাৎক্ষণিকভাবে বাংলাদেশ সাড়া দেয়নি বলেও একাধিক সূত্র জানিয়েছে।
সূত্র বলছে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেনসহ নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে অনেক কর্মকর্তা ফুল ম্যান্ডেট নিয়ে ওয়াশিংটনের সাথে নেগোসিয়েশনে থাকার পরও ভারি সমরাস্ত্র কেনা বিষয়ক স্পর্শকাতর ওই প্রস্তাব বিষয়ে বাংলাদেশ খোলাখুলিভাবে তার অবস্থান জানায়নি।
নিরাপত্তা সংলাপে পররাষ্ট্রসচিব মোমেন প্রস্তাবটি গ্রহণ করলেও তা নিয়ে ঢাকায় বিস্তৃত আলোচনার সুযোগ রেখেছেন। ওয়াশিংটনে থাকা বাংলাদেশের একজন কর্মকর্তা বলেন, সশস্ত্র বাহিনীকে আধুনিকায়নের লক্ষ্যে গৃহীত ফোর্সেস গোল অনুযায়ী উন্নত সমরাস্ত্র সংগ্রহে বিভিন্ন উৎসে মনোযোগ দিচ্ছে বাংলাদেশ। এরই অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আধুনিক প্রযুক্তির সমরাস্ত্র কিনতে দেশটির সাথে দুটি বিশেষায়িত প্রতিরক্ষা চুক্তি—জিসোমিয়া ও আকসা নিয়ে আলোচনা চলছে। ঢাকায় অংশীদারিত্ব সংলাপে জিসোমিয়ার খসড়া হালনাগাদ হয়েছে। মার্কিন সমরাস্ত্র কেনার পূর্বশর্ত হচ্ছে প্রতিরক্ষা চুক্তি জিসোমিয়া স্বাক্ষর। নিরাপত্তা সংলাপে জিসোমিয়ার সবশেষ খসড়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এটি দ্রুত চূড়ান্ত করার তাগিদ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
নিরাপত্তা সংলাপে সমরাস্ত্র ছাড়াও মার্কিন অগ্রাধিকার প্রকল্প ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজিতে (আইপিএস) বাংলাদেশের অংশগ্রহণ বিষয়ে তাৎপর্যপূর্ণ আলোচনা হয়েছে। আইপিএস বিষয়েও নতুন প্রস্তাব পেয়েছে ঢাকা। আসছে নতুন অর্থনৈতিক বিশেষ প্যাকেজও।
গত মার্চ ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ অংশীদারিত্বের সংলাপের পর মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি ফর পলিটিক্যাল অ্যাফেয়ার্স ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ড বলেছিলেন, আইপিএসে অর্থনৈতিক, নিরাপত্তা ও প্রযুক্তিগত উপাদান রয়েছে। এই উদ্যোগের বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ যুক্ত হলে যুক্তরাষ্ট্র খুশি হবে। আইপিএসের মাধ্যমে সমুদ্রপথে অবাধে ও নিরাপদে পণ্যের সরবরাহের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ মনে করে বাংলাদেশ।
এ বিষয়ে পররাষ্ট্রসচিব বলেছিলেন, আইপিএসের অর্থনৈতিক উপাদানে বেশি জোর দিচ্ছে বাংলাদেশ। আইপিএস যেন কোনো পক্ষকে প্রতিহত করার জন্য না হয়, সেই নিশ্চয়তা চাইছে ঢাকা।
সম্মেলনে র্যাবের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে বাংলাদেশ চরম উদ্বেগ প্রকাশ করে এবং সিদ্ধান্তটি পুর্বিবেচনা করার অনুরোধ জানায়। বিস্তারিত আলোচনায় সন্ত্রাসবাদ, উগ্রবাদ ও আন্তঃরাষ্ট্রীয় অপরাধ দমনে র্যাবের কর্মকাণ্ড ব্যাখ্যা করে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল। এ বিষয়ে আলোচনা অব্যাহত রাখতে উভয়পক্ষ একমত হয়।
নবম নিরাপত্তা সংলাপ ঢাকায় অনুষ্ঠিত হবে বলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।