
হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি শফিকুল রহমান
ইমাম পরিচয়ে ২১ বছর ধরে পলাতক ছিলেন হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি শফিকুল রহমান ওরফে শফিকুল ইসলাম ওরফে আব্দুল করিম।
কিশোরগঞ্জের ভৈরব এলাকায় অভিযান চালিয়ে বৃহস্পতিবার (১৪ এপ্রিল) তাকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
আজ শুক্রবার (১৫ এপ্রিল) রাজধানীর কাওরান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
২০০১ সালে রমনা বটমূলে বোমা হামলা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত এবং ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভায় গ্রেনেড হামলা মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি জঙ্গি নেতা শফিকুল। এছাড়াও সে ২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি শাহ এএমএস কিবরিয়া হত্যা মামলারও চার্জশিটভুক্ত আসামি।
খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘গ্রেপ্তার শফিকুল নরসিংদী থাকাকালীন পরিচয় গোপন করে আব্দুল করিম নামে পরিচয় দিতো। আব্দুল করিম নাম ব্যবহার করে ওই এলাকার চরে অবস্থিত একটি মসজিদে মাসিক ৫ হাজার টাকা বেতনে ইমামতির চাকরি নেয়। ইমামতির আড়ালে সে মানুষকে ধর্মের নামে বিভ্রান্তিমূলক অপব্যাখ্যা দিতো। অত্যন্ত কৌশলে মাঝে মাঝে ভিন্ন ভিন্ন স্থানে তার পরিবারের সদস্যদের সাথে দেখা করতো। গত ২১ বছর এভাবেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ এড়িয়ে আত্মগোপনে ছিল সে।’
তিনি বলেন, ‘২০০১ সালের রমনা বটমূলে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা হামলা, ২০০৪ সালে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা এবং ২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি হবিগঞ্জ সদর থানাধীন বৈদ্যের বাজারে গ্রেনেড হামলায় সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া হত্যায় সে সম্পৃক্ত ছিল। রমনা বটমূলে হামলার পর ২০০১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত সে গোপনে সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত থাকে। অতঃপর ২০০৮ হতে নরসিংদীতে একটি মাদ্রাসায় অবস্থান করে আত্মগোপনে চলে যায়।’
গ্রেপ্তার শফিকুলকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, সে স্কুল থেকে পঞ্চম শ্রেণি পাস করার পর মাদ্রাসায় পড়াশোনা শুরু করে। ১৯৭৫ থেকে ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত ঢাকার মাদ্রাসা থেকে হেদায়ায় পড়াশোনা করে। হেদায়া পাস করার পর ১৯৮৩ সালে ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দ মাদ্রাসায় ভর্তি হয়। ১৯৮৬ সালে সেখান থেকে সাওরায়ে হাদিস (টাইটেল) পাস করে দেশে ফিরে আসে সে।
১৯৮৭ সালে পাকিস্তানের করাচিতে ইউসুফ যিন নূরী মাদ্রাসায় ফতোয়া বিভাগে ভর্তি হয়ে ৩ বছরের ইফতা (ফতোয়া) কোর্স সম্পন্ন করে। ১৯৮৯ সালে পাকিস্তানে অবস্থানকালীন আফগানিস্তানে চলে যায় এবং তালেবানের পক্ষে যুদ্ধ করে।
১৯৮৯ সালের শেষের দিকে আফগানিস্তান থেকে বাংলাদেশে ফিরে আসে সে। বাংলাদেশে আসার পর সে ঢাকার খিলগাঁওয়ে একটি মাদ্রাসায় পার্টটাইম শিক্ষকতা শুরু করে। ১৯৮৭ সালে পাকিস্তানের করাচির নিউ টাউনে পড়াশোনার সময় মুফতি হান্নানের সাথে তার পরিচয় হয়। ওই প্রতিষ্ঠানে মুফতি হান্নানও পড়াশোনা করতে যায়।
পাকিস্তান থেকে আফগানিস্তানে ভ্রমণে গেলে আফগানিস্তানে থাকাকালীন জঙ্গি সংগঠন ‘হরকাতুল জিহাদের’ সাথে সম্পৃক্ত হয়। আফগানিস্তান থেকে সে দেশে এসে ‘হরকাতুল জিহাদ, বাংলাদেশ’ নামে একটি জঙ্গি সংগঠন গড়ে তোলার চিন্তা করে। ১৯৯০ সালে দেশে ফিরে সমমনাদের সাথে নিয়ে প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসেবে ‘হরকাতুল জিহাদ, বি’ সংগঠন প্রতিষ্ঠা করে এবং দাওয়াতের কাজ শুরু করে।
১৯৯০ সাল থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত সে ‘হরকাতুল জিহাদ, বি’ এর প্রচার সম্পাদক ছিল। ১৯৯৩ সাল থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত সে হরকাতুল জিহাদের আমীর ছিল। ১৯৯৭ সাল থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত সে হরকাতুল জিহাদ এর সূরা সদস্য ছিল।