সাতক্ষীরায় লবণসহিষ্ণু জাতের ধানের আবাদ বাড়ছে

কৃষ্ণ ব্যানার্জী, সাতক্ষীরা
প্রকাশ: ১৭ এপ্রিল ২০২২, ১৫:৩০

সাতক্ষীরা জেলার মানচিত্র
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে গত কয়েক বছর ধরে একের পর এক ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সাতক্ষীরার উপকূলীয় এলাকার বেড়িবাঁধ। ফলে বার বার বাঁধ ভেঙে লবণ পানি প্রবেশ করেছে ফসলি জমিতে।
তবে সেসব প্রতিকূলতার মধ্যে কৃষকদের আশা জাগিয়েছে বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা) উদ্ভাবিত লবণসহিষ্ণু কয়েকটি জাতের ধান। এই ধানের চাষ করে ভালো ফলন পেয়েছেন উপকূলের কৃষকরা।
কৃষিবিভাগের সূত্র মতে, সাতক্ষীরার সাত উপজেলার মধ্যে ৫টি উপজেলার ফসলি জমিতে লবণাক্ততা বাড়ছে। তবে শ্যামনগর ও আশাশুনি এলাকার ফসলি জমিতে উচ্চমাত্রায় লবণ রয়েছে। এসব উপজেলায় উচ্চমাত্রার লবণসহিষ্ণু বিনা-৮ ও ১০ জাতের ধান আবাদ করে ভালো ফলন পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়া পুরো জেলায় স্বল্পমাত্রার লবণসহিষ্ণু জাতের ধানের আবাদ বাড়ছে।
কৃষকরা বলছেন, লবণসহিষ্ণু জাতের ধান চাষে ভালো ফসল ফলছে। তবে সঠিক সময়ে প্রয়োজনীয় বীজ না পাওয়ায় অনেক কৃষক ধানচাষ করতে পারছেন না।
শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ইউনিয়নের কৃষক সাইফুল ইসলাম বলেন, সুন্দরবন সংলগ্ন নদীতে এখন উজান থেকে মিষ্টি পানির কোনো প্রবাহ নেই। কিছু এলাকায় অপরিকল্পিতভাবে লবণপানি তুলে মাছচাষ করা হয়। এছাড়া ২০০৯ সালে ঘূর্ণিঝড় আইলার পর বেড়িবাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ উপকূলীয় এলাকায় লবণপানি প্রবেশ করে। এতে আমাদের ইউনিয়নের অধিকাংশ ফসলি জমিতে লবণাক্ততা ছড়িয়ে পড়ে। তবে এখন নতুন করে কিছু এলাকায় লবণ সহনশীল জাতের ধানের চাষ হচ্ছে। ফলনও ভালো।
শ্যামনগর উপজেলার আটুলিয়া গ্রামের কৃষক অশোক কুমার মণ্ডল বলেন, আমাদের এলাকার অধিকাংশ জমি উচ্চমাত্রায় লবণাক্ত। এখানকার বেশিরভাগ জমিতে লবণপানি তুলে চিংড়ি চাষ করা হয়। প্রায় ২০ বছর পর আমি এ বছরই প্রথম মাছের ঘের শুকিয়ে লবণসহিষ্ণু বিনা-১০ জাতের ধানচাষ করেছি। আশা করছি, বিঘাপ্রতি ১৫ থেকে ২০ মণ ধান পাবো।
বিনা উপকেন্দ্র সাতক্ষীরার ইনচার্জ ড. বাবুল আক্তার বলেন, সাতক্ষীরা জেলার উপকূলীয় এলাকার ফসলি জমিতে ৮ থেকে ১৪ টিডিএস মাত্রার লবণাক্ততার উপস্থিতি রয়েছে। এ মাত্রার লবণাক্ততার কারণে ফসল উৎপাদন প্রায় অসম্ভব। তবে এসব জমিতেও বিনা-১০ জাতের ধান চাষ করে ভালো ফলন পাওয়া গেছে। এই ধান ১২ থেকে ১৪ টিডিএস মাত্রা পর্যন্ত লবণ সহ্য করতে পারে।
সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. নুরুল ইসলাম জানান, চলতি মৌসুমে জেলায় প্রায় ৪ হাজার হেক্টর জমিতে উচ্চমাত্রার লবণসহিষ্ণু জাতের ধানের আবাদ হয়েছে। ফলন ভালো হওয়ায় কৃষকরা লবণসহিষ্ণু জাতের ধানচাষে আগ্রহী হচ্ছেন। জেলা কৃষি বিভাগ থেকে তাদের সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে।