
হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে চাষ করা এক সবজি খামার। ছবি: ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি
নগরায়নের কারণে কৃষি জমি কমে যাওয়ার কারণে অনেকে বাগান বা সবজি চাষ করতে চাইলেও করতে পারেন না। তবে আশার কথা হচ্ছে বর্তমানে মাটি ছাড়াই অভিনব পদ্ধতিতে বিষমুক্ত লেটুসসহ বিভিন্ন শাকসবজি ও ফল চাষ করা যায়। এক্ষেত্রে মাটির সংস্পর্শেরও প্রয়োজন পড়ে না। বিশেষ এই পদ্ধতির নাম হাইড্রোপনিক। সম্প্রতি ঠাকুরগাঁওয়ে এ বিশেষ পদ্ধতিতে সবজি চাষ শুরু হয়েছে।
গ্রিন হাউসের মতো বিশেষ এই পদ্ধতিতে উৎপাদিত নিরাপদ ও বিষমুক্ত সব শাকসবজি রাজধানী ঢাকার নামীদামী রেস্টুরেন্টগুলোতে সরবরাহ করা হচ্ছে।
সরকারি সহায়তা পেলে উদ্যোক্তারা আরো বড় পরিসরে এর চাষাবাদ করতে পারবেন বলেও জানান স্থানীয় উদ্যোক্তারা।
সরেজমিনে সদর উপজেলার খলিশাখুড়ি গ্রামে সবজি খামারে গিয়ে দেখা যায়, প্লাস্টিক পাইপের মাধ্যমে ১৬টি খাদ্য উপাদান মিশ্রিত পানি অটোপাম্পের মাধ্যমে সঞ্চালন করে মাটি ছাড়া চাষাবাদ চলছে। আর পাইপ ছিদ্র করে বেড়ে উঠা লাগানো গাছে স্বল্প পরিসরে চাষ করা হচ্ছে শসা, লাউ, মরিচ, ধনেপাতা, টমেটো, ক্যাপসিকাম, স্ট্রবেরি, পেঁয়াজ, রসুন, তরমুজ, করলাসহ আরো কয়েক ধরনের সবজি।
একটি পানির পাম্প দিয়ে দিনে দুবার মাটির বিভিন্ন উপাদানমিশ্রিত পানি আদানপ্রদান করা হয়। উৎপাদিত এসব শাক-সবজি রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলায় বাজারজাত করছেন বাগানের উদ্যোক্তারা।
জানা যায়, ২০১৭ সালে ৬০ শতক জমি নিয়ে পরীক্ষামূলক মাটি ছাড়া এই বিশেষ পদ্ধতিতে ওই গ্রামের ছয় বন্ধু যৌথভাবে লেটুসসহ শাকসবজি ও ফল চাষ শুরু করেন। অভিনব এই পদ্ধতিতে আবাদ করে সফলও হয়েছেন তারা।
২০১৯ সাল থেকে বাণিজ্যিকভাবে বিদেশী সবজি লেটুসসহ দেশীয় ফল ও শাকসবিজর চাষ শুরু করেন তারা। হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদের এ ছয়জন উদ্যোক্তা হলেন জাফর ইবনে হাসান, নাহিদ হোসেন, আল আমিন, সাবাহ্ সাঈদ, আব্দুল্লাহ আল মামুন ও শাহরিয়ার।
সবজির খামারের শ্রমিকেরা বলেন, জেলার মধ্যে এ খামারটি অত্যাধুনিক পদ্ধতিতে চাষ করা একটি খামার। এখানে বিষমুক্ত সবজি উৎপাদন করা হয়। কোনো বিষয়ে বুঝতে না পারলে বা সিদ্ধান্ত নিতে না পারলে বসদের কথা অনুযায়ী কাজ করি।
উদ্যোক্তা নাহিদ হোসেন বলেন, হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদে অনেক বায়োসিকিউরিটি অনুশীলন করা হয়। সেজন্য খামারে পোকামাকড়ের আক্রমণ নেই। তাছাড়া কিছু ডিভাইস ব্যবহারের ফলে বন্যপ্রাণীও খামারে ভিতরে প্রবেশ করতে পারে না। বিষমুক্ত সবজি উৎপাদনে তাদের আগামীতে আরো পরিসরে লেটুসের সাথে টমেটো, শসা, মরিচ, তরমুজ চাষের পরিকল্পনা রয়েছে।
হাইড্রোপনিকের আরেক উদ্যোক্তা আল আমিন বলেন, আমরা লেটুসকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। কারণ সারা বছর এর চাহিদা থাকে। তবে উৎপাদনে সফলতা আসলেও খরচের তুলনায় দাম সে রকম পাওয়া যায় না। দেশের চাহিদা পূরণ করে উৎপাদিত সবজি বিদেশে রপ্তানি করার পরিকল্পনা রয়েছে এই উদ্যোক্তার।
তিনি আরো বলেন, এ পদ্ধতিতে অল্প জায়গাতে বেশি পরিমাণ বিষমুক্ত সবজি উৎপাদন করা সম্ভব। এর গুণগত মানও অনেক বেশি। তবে এ পদ্ধতিতে উৎপাদন খরচ বেশি। এ পদ্ধতিতে বীজ রোপণ থেকে লেটুসপাতা উৎপাদন পর্যন্ত সময় লাগে ৩৫-৩৮ দিন।
এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আবু হোসেন বলেন, উপজেলার ভূল্লী এলাকায় নিজস্ব উদ্যোগে বড় পরিসরে বাণিজ্যিকভাবে হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ শুরু হয়েছে। সনাতন পদ্ধতি বর্তমানে দেশে যে হারে আবাদি জমি কমছে তাতে অনেকে চাইলেই এ পদ্ধতিতে চাষাবাদ করে সারা বছর বিভিন্ন রকমের সবজি ও ফলমূল উৎপাদন করতে পারেন।