Logo
×

Follow Us

বাংলাদেশ

কয়েকশ’ বছরেও একটি ব্রিজ পেল না হালদারপাড়া

Icon

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২৩ এপ্রিল ২০২২, ১২:৪৭

কয়েকশ’ বছরেও একটি ব্রিজ পেল না হালদারপাড়া

ঝঁকিপূর্ণভাবে সাঁকো ব্যবহার চলাচল করছেন হালদারপাড়া এলাকার বাসিন্দারা। ছবি: ঝিনাইদহ প্রতিনিধি

শ্রীনাথপুর গ্রামের হালদারপাড়া এলাকাটি ঝিনাইদহে মহেশপুর উপজেলার শ্যামকুড় ইউনিয়নে অবস্থিত। হালদারপাড়ার তিন পাশে ইছামতি নদী আর এক পাশে ভারত। কয়েকশ’ বছর পেরিয়ে গেছে এ গ্রামটির বয়স। তারপরেও শ্রীনাথপুরে হালদারপাড়ায় কোনো উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। 

উন্নয়নের জয়জয়কার চলছে দেশে। তবে আজও গ্রামটি বিচ্ছিন্নই রয়ে গেল। এখনো হালদারপাড়ার বাসিন্দারা নিজেদের তৈরি বাঁশের সাঁকোয় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন। তাদেরকে চলাচলের যানবাহন সব রেখে যেতে হয় নদীর ওপারে। 

ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি আশরাফ উদ্দিন বলেন, হালদারপাড়ার বাসিন্দারা আস্তে আস্তে পাড়া ছেড়ে দিচ্ছেন। এক সময় ৬৫ টি পরিবার বসবাস করলেও বর্তমানে সেখানে মাত্র ২০টি পরিবার বসবাস করছে।

সরেজমিনে শ্রীনাথপুর গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, হালদারপাড়া থেকে কৃষিপণ্য কাঁধে করে ইছামতি নদী পার করছেন কৃষকরা। বছরের পর বছর তারা এভাবেই ফসল পারাপার করে আসছেন বলে জানান স্থানীয় কৃষকরা। পাড়ার মধ্যে প্রবেশ করলেই নজর কাড়বে শুনশান নীরব পরিবেশ।

স্থানীয়রা জানান, এই পাড়ার পুরুষেরা একবার বাইরে কাজে বের হলে আর ফিরতে চান না। কাজ শেষে একেবারে সন্ধ্যায় বা রাতে ফেরেন। পাড়ার নারীরা ঘরের কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকেন।

অন্যপাড়ের পাড়ার বাসিন্দা মনোরঞ্জন হালদার (৭২) জানান, তার জন্ম এ পাড়াতেই। তাদের পূর্ব পুরুষরাও এই পাড়ার বাসিন্দা। মহেশপুর উপজেলার শ্যামকুড় ইউনিয়নের একটি গ্রাম শ্রীনাথপুর। এটি ভারত সীমান্ত সংলগ্ন একটি গ্রাম। এই গ্রামের দুইটি অংশ রয়েছে, একটি অংশে হালদারপাড়, আরেকটিতে অন্যরা। হালদারপাড়ায় ৬৫টি পরিবার বসবাস করতো। আর অপর অংশে বসবাস করতো ২৫০টি পরিবার। শত শত বছর ধরে এই দুই এলাকায় জনবসতি গড়ে উঠেছে। ভূমি অফিসের খাতায়ও শ্রীনাথপুর মৌজা দুইটি ভাগে বিভক্ত। এক নম্বর শিটে হালদারপাড়া আর দুই নম্বরে বাকি অংশ। হালদারদের অংশে ৩৫০ বিঘা জমি রয়েছে।

তিনি আরো জানান, তাদের গ্রামের উত্তর, দক্ষিণ ও পূর্ব পাশে রয়েছে ভারত থেকে বয়ে আসা ইছামতি নদী। তিনি পূর্ব পুরুষের কাছে শুনেছেন- এই নদীর মাছ ধরা থেকেই হালদারপাড়ায় হালদারদের বসবাস শুরু হয়। তারা যুগ যুগ ধরে এখানে বসবাস করছেন। বর্তমানে ২০টি পরিবার বসবাস করেন। এর মধ্যে ছয়টি পরিবার মুসলিম।

ওই পাড়ার বাসিন্দা সাধন হালদার জানান, তাদের মতো এতো কষ্ট করে পাড়ায় কেউ বসবাস করে না। কিন্তু এই পাড়ার বাসিন্দারা সবাই আর্থিকভাবে দুর্বল। 

তিনি আরো জানান, প্রয়োজনে পায়ে হেটে তারা ভারতের অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে পারেন। কিন্তু নিজের দেশে পায়ে হেটে তারা প্রবেশ করতে পারেন না। নিজের দেশে প্রবেশ করতে হলে নদী পার হয়েই প্রবেশ করতে হবে। নদীটি ভারতীয় নদী হওয়ায় সারা বছরই কমবেশি পানি থাকে। যে কারণে তাদের যাতায়াতে অনেক অসুবিধা হয়। স্থানীয়ভাবে পাড়ার দক্ষিণে নদীর উপর বাঁশ দিয়ে সাঁকো তৈরি করে নিয়েছেন তারা। মাত্র দুইটা বাঁশের উপর তৈরি সাঁকোতে তাদেরকে চলাফেরা করতে হয়।

পাড়ার ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের এই বাঁশের সাঁকো দিয়ে পার হয়েই স্কুলে যেতে হয়।

পাড়ার বাসিন্দা অনিতা হালদার জানান, বিয়ে হয়ে এই পাড়ায় এসেছেন তিনি। পারাপারের সমস্যার কারণে এ পর্যন্ত বাবার বাড়িতে যতবার বেড়াতে গিয়েছেন কখনো তিনি কোনো উপহার নিয়ে আসতে পারেননি এবং নিয়ে যেতেও পারেননি।

স্থানীয় নজরুল ইসলাম জানান, শখ করে মৃত্যুঞ্জয় হালদার একটি মটর সাইকেল কিনেছিলেন। কিন্তু আজ অবধি নিজের বাড়িতে সেই মোটরসাইকেলটি নিয়ে যেতে পারেননি। পাড়ায় সবাইকে যাযাবরের মতো বসবাস করতে হয়। এ অবস্থার কারণে বাইরের কেউ এই পাড়াতে ছেলে মেয়ে বিয়ে দিতেও চান না। এ কারণে অনেকে এই পাড়া ছেড়ে চলে গেছেন।

তিনি আরো জানান, অনেক জনপ্রতিনিধি ও সরকারি দপ্তরে তারা এই নদীর উপর দিয়ে চলাচলের মতো একটি সেতু বা বেইলি ব্রিজ নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত কেউ এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেননি। ভোটের সময় যারা ভোট নিতে আসেন তারাও বাঁশ পেরিয়ে আসেন। সে সময় জনপ্রতিনিধিরা সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু পরে তারা তা ভুলে যান।

এ বিষয়ে শ্যামকুড় ইউনিয়ন পরিষদের শ্রীনাথপুর এলাকার সদস্য হারুন-অর রশীদ জানান, তারা বেশ কয়েকবার এখানে একটা সেতুর জন্য প্রকল্প তৈরি করে উপজেলায় জমা দিয়েছেন। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি।

মহেশপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নয়ন কুমার রাজবংশী জানান, এ বিষয়ে তিনি অবগত নন। তবে এলাকার লোকজন তার সাথে যোগাযোগ করলে এবং বিস্তারিত তথ্য দিলে তিনি খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নেবেন।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫