ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ডাক বিভাগের কাজ চলছে খুঁড়িয়ে

আজিজুর রহমান পায়েল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
প্রকাশ: ২৫ এপ্রিল ২০২২, ১৫:৩৩

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার মানচিত্র
আবদুল কুদ্দুস ও আহসান হাবিব ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রধান ডাকঘরের দুই ডাক পিয়ন। পুরো শহরের সরকারি ডাক বিলির দায়িত্ব এখন তাদের ওপর। প্রায় ৩ লাখ মানুষ অধ্যুষিত এই শহর। লোকবলের অভাবে বিপুল এই মানুষের ডাক বিলির দায়িত্ব চেপেছে তাদের কাঁধে। আর জেলার প্রত্যন্ত এলাকার অবস্থা আরো বেহাল। জরাজীর্ণ ডাকঘর, লোকবল সংকটে বিপর্যস্ত ডাকসেবা। উপজেলা ডাকঘর এবং উপ-ডাকঘরেও ডাক পিয়নের পদই সবচেয়ে বেশি শূন্য।
জেলায় সরকারি ডাকসেবায় নানা সংকট থাকলেও, গর্বের বিষয় হচ্ছে ডাক মন্ত্রী এবং সচিব দু’জনই ব্রাহ্মণবাড়িয়ার। সম্প্রতি ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তফা জব্বার তার পিতৃভিটা নবীনগরের কৃষ্ণনগর ঘুরে গেছেন। সাথে ছিলেন এই উপজেলার রতনপুর ইউনিয়নের ভিটিবিশারা গ্রামের সন্তান ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব মো. খলিলুর রহমান।
জেলা শহরে ডাক বিলির দায়িত্ব ছিল ১০ পোস্ট ডাক পিয়নের। পদোন্নতি আর অবসরের কারণে এখন তাদের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে দু’জনে। প্রতিদিন দেড়-দুশো রেজিষ্টার্ড ও সাধারণ চিঠি বিলি করতে হয় তাদের। এছাড়া আছে পার্শ্বেল। ডাক পৌঁছাতে গিয়ে ক্লান্ত এই দুই ডাক পিয়ন।
তারা বলেন, অনেক কষ্ট করতে হয় আমাদের। তবে লোকবল সংকট থাকলেও, সেবা দিতে কোনো সমস্যা হচ্ছে না বলে দাবি করেন প্রধান ডাকঘরের পোস্টমাস্টার সিদ্দিক আলী।
তিনি বলেন, যে লোকবল আছে কর্তৃপক্ষের নির্দেশে এই লোকবল সমন্বয় করেই আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।
ওদিকে জেলার বিভিন্ন উপজেলা, ইউনিয়ন এবং গ্রামে থাকা বিভাগীয় এবং উপ-বিভাগীয় ডাকঘরগুলোতেও রয়েছে নানা সমস্যা। লোকবল সংকট ছাড়াও জরাজীর্ণ ডাকঘর থেকেই চলছে ডাক সেবা। এসব ডাকঘরে ডাক পিয়ন, অপারেটর পদে লোকবল নেই বললেই চলে। জেলার নাসিরনগর, আখাউড়া, কসবা, বিজয়নগর, সরাইল ও নবীনগর উপজেলা পোস্ট অফিস এবং আশুগঞ্জ, শ্যামগ্রাম, সলিমগঞ্জ, কাইতলাসহ আরো কয়েকটি উপ-ডাকঘরে ৪২ জন ডাক পিয়নের স্থলে কর্মরত আছেন মাত্র ১০ জন।
তবে এ নিয়ে কথা বলতে নারাজ ডাক বিভাগের সংশ্লিষ্ট এলাকার পরিদর্শক বিশ্বজিৎ দত্ত। লোকবল সংকট আছে জানালেও এ নিয়ে বিস্তারিত জানাতে কর্তৃপক্ষের অনুমতির অজুহাত দেখান তিনি। বিজয়নগর উপজেলার বিজয় হরষপুর অল্প পরিসরের এই ডাকঘরটির অবস্থা বেহাল। ওপরের টিনের চাল ভাঙাচুরা। চারপাশের বেড়াতেও ছিদ্রে ভরা। জানালারও একই দশা। আসবাবপত্র নড়বড়ে। এমনকি লেখার কাগজপত্র পর্যন্ত অন্যের কাছ থেকে চেয়ে আনতে হয়।
পোস্ট মাস্টার মাওলানা সিরাজুল ইসলাম জানান, ঝড়ে ঘরটি নষ্ট হয়ে গেছে। এই ডাকঘরটির মতোই নানা সমস্যায় জেলার অবিভাগীয় ১৩৫টি শাখা ডাকঘর। নবীনগরের জালশুকা গ্রামের ডাকঘরে নেই ডাক পিয়ন।
সদর উপজেলার সুলতানপুর ডাকঘরের পোস্ট মাস্টার আল আমিন হোসেন জানান, তার এখানে ডাক পিয়ন নেই ২ বছর ধরে। ডাক পিয়নের দায়িত্বও তিনিই পালন করছেন। রানারেরও সমস্যা। এ কারণে নিয়মিত ডাক পৌঁছায় না এখানে। সপ্তাহে একদিন ডাক আসে।
নবীনগরের রসুল্লাবাদ ডাকঘরের পোস্ট মাস্টার হাবিবুল্লাহ বাহার জানান, আগে নিয়মিত ডাক আসলেও রানারের কারণে এখন একদিন পরপর ডাক আসে। এক সময় এসব ডাকঘরের অবস্থা জমজমাট ছিল। সবধরনের চিঠিপত্র, মানি অর্ডারে আসা টাকার জন্যে মানুষের ভীড় লেগে থাকতো সেখানে। এখন নানা মাধ্যমে এসব সুবিধে গ্রহণ করছেন মানুষ। সে কারণে সরকারি ডাক সেবার ওপর নির্ভরতা কমেছে। তারপরও এলাকার ঐতিহ্য হিসেবে স্থানীয়রা ডাকঘরকে গণ্য করেন। ডাকঘরগুলোর নানা সমস্যা দূর করে যুগপোযোগী করার দাবি সবার।