
চট্টগ্রাম জেলার মানচিত্র
আসন্ন ঈদ বাজারকে সামনে রেখে চট্টগ্রামে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে মোবাইল ফোন চুরির সাথে জড়িত একাধিক চক্র। চক্রের সাথে আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের মোবাইল ফোন কোম্পানিতে কর্মরত প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন লোকজনও জড়িত রয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
গত এক সপ্তাহে ২ শতাধিক চোরাই মোবাইল ফোন উদ্ধার করেছে পুলিশ। এর মধ্যে একসাথে ১১৭টি মোবাইল উদ্ধার করা হয়। চোরাই মোবাইল ফোনে সয়লাব হয়ে গেছে চট্টগ্রামের বিভিন্ন মোবাইল মার্কেট। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিতে মোবাইল ফোনের ইন্টারন্যাশনাল মোবাইল ইক্যুইপমেন্ট আইডেনটিটি (আইএমইআই) নম্বর পরিবর্তনের যন্ত্র ব্যবহার করা হচ্ছে প্রত্যন্ত অঞ্চলে। শহরে এই যন্ত্র ব্যবহার করা হলে দ্রুত ধরা পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ কারণেই মোবাইল ফোন চুরির সাথে জড়িত চক্রটি অত্যাধুনিক ওই যন্ত্র ব্যবহারের স্থান হিসাবে শহরের পরিবর্তে দুর্গম এলাকা বেছে নিয়েছে।
পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট সূত্র জানা যায়, চট্টগ্রামে চোরাই মোবাইল ফোনে মার্কেট সয়লাব। নগরীর জলসা, সিডিএ, শাহ আমানত মার্কেট এবং রিয়াজউদ্দিন বাজার, পুরনো রেলস্টেশন এলাকায় চলছে চোরাই মোবাইল ফোনের জমজমাট ব্যবসা। এই ব্যবসায় জড়িত রয়েছে দশটির বেশি গ্রুপ। তারা পুরো চট্টগ্রামের চোরাই মোবাইল ফোনের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। শুধু চট্টগ্রামের নয়; সারাদেশ থেকে আসা চোরাই মোবাইল ফোন এসব মার্কেটে বিক্রি হচ্ছে প্রকাশ্যে। চক্রের সদস্যরা চোরাই মোবাইল ফোনের আইএমইআই নম্বর পরিবর্তন করে ফেলছে।
সূত্র জানায়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যাপক তৎপরতা পর মোবাইল চোরচক্র নগরীতে কোথাও টিকতে পারছে না। বিভিন্ন সময় চক্রের সদস্যরা ধরা পড়ছে। এ কারণে উপজেলা বা প্রত্যন্ত এলাকায় তারা আইএমইআই নম্বর পরিবর্তনের যন্ত্র বসিয়ে অপকর্ম করছে। জেলার সাতকানিয়ার কেরানীহাট, লোহাগাড়া উপজেলার আমিরাবাদ ও চকরিয়ায়ও একাধিক আইএমইআই নম্বর পরিবর্তনকারী মেশিন বসিয়েছে চোরচক্র।
সম্প্রতি মোবাইল ফোনের আইএমইআই পরিবর্তনকারী একটি চক্রের ৩ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় ১১৭টি মোবাইল। সাজ্জাদ, হাবীবুল্লাহ মিজবাহ (২৫) ও রাশেদ (২০) নামের এই তিনজনের মধ্যে হাবিবুল্লাহ মিজবাহ ভিভো কোম্পানিতে কর্মরত ছিলেন। তবে পরে চাকরি ছেড়ে যোগ দেন চোরাই মোবাইল চোরচক্রের সাথে। আইএমইআই নম্বর পরিবর্তনে তার রয়েছে নিপুণ দক্ষতা। এ ধরনের সফটওয়্যার ইনস্টল করা তিনটি ল্যাপটপও ওই চক্রের কাছ থেকে উদ্ধার করে কোতোয়ালি থানা পুলিশ।
সিডিএ রয়েল প্লাজার একাধিক ব্যবসায়ী জানান, নগরী ও আশপাশের উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় চুরি-ছিনতাই হওয়া পণ্য জমা হয় চোরাই মার্কেটে। এখানকার ব্যবসায়ীরা অনেক কম দামে এসব পণ্য অপরাধীদের কাছ থেকে কিনে আবার বিক্রি করে দেন। দোকানগুলো সারা দিন খোলা থাকলেও, দিনের আলো নিভে যাওয়ার পর জমে উঠতে শুরু করে। সন্ধ্যা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত ক্রেতার ভিড় থাকে। চোরাই মার্কেটের ব্যবসায়ীদের বেশির ভাগই অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে জড়িত। চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকার চোর, পকেটমার, ছিনতাইকারীদের সাথে তাদের যোগসাজশ আছে বলে অভিযোগ রয়েছে। মাঝেমধ্যে তারা অগ্রিম টাকাও দেন।
সিএমপির ডিসি (দক্ষিণ) জসিম উদ্দিন সাম্প্রতিক দেশকালকে বলেন, চোরাই মোবাইল ফোন চক্রের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। কোনো অবস্থায় চোরাই মোবাইল ফোন বাজারে আসতে দেওয়া যাবে না। চোরাই মোবাইল ফোন চোরচক্রের মূলহোতাদের আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে। চক্রটি নগরীর বাইরে যন্ত্র বসিয়ে মোবাইল ফোনের আইএমইআই নম্বর পরিবর্তন করছে। এরপর মোবাইল ফোন বাজারে ছড়িয়ে দিচ্ছে। এতে মোবাইল ফোনের মালিক তার মোবাইলটি শনাক্ত করতে পারছেন না।