চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী জব্বারের বলী খেলায় চ্যাম্পিয়ন হয়ে সম্প্রতি বাজিমাত করেছিলেন কক্সবাজারের চকরিয়ার তারেকুল ইসলাম জীবন বলী। এরপর থেকে সবখানে তার নামডাক। কিন্তু মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানে কক্সবাজারের ডিসি সাহেবের বলী খেলায় দ্বিতীয় পর্বেই কুপোকাত হয়ে গেছেন জীবন বলী। ফলে মুহূর্তেই চুপসে গেছে তার সব নামডাক। 

আজ শনিবার (৭ মে) কক্সবাজার বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ডিসি সাহেবের বলী খেলার ফাইনাল পর্বে জীবন বলীকে পরাজিত করেছেন  উখিয়ার নূর মোহাম্মদ বলী।

জীবন বলীকে হারিয়ে প্রথম পর্বে উত্তীর্ণ হয়ে যুগ্ম চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন নূর মোহাম্মদ বলী। তার সাথে যুগ্ম চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন বাংলাদেশ কুস্তি ফেডারেশনের তালিকাভুক্ত খেলোয়াড় আনসার সদস্য লিটন বিশ্বাস।

দীর্ঘ ৩ বছর পর শুক্রবার থেকে শুরু হয় দুই দিনব্যাপী ডিসি সাহেবের বলী খেলার ৬৭ তম আসর। আজ শনিবার (৭ মে) কক্সবাজার বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় খেলায় মুখোমুখি হন চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী জব্বারের বলী খেলা-২০২২ এর চ্যাম্পিয়ন তারেকুল ইসলাম জীবন বলী এবং উখিয়ার নূর মোহাম্মদ বলী। তারা প্রায় আধাঘণ্টা লড়াই করে। তবে খেলা তেমন জমেনি। কয়েকবার বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং নূর মোহাম্মদ চোখে ও মুখে আঘাত পায়। শেষে মাটিতে হালকা পিঠ লাগলেই জীবন বলীকে পরাজিত ঘোষণা করেন রেফারি। তবে পরাজয় মেনে নেয়নি বলে দাবি করেন জীবন বলী। দ্বিতীয় খেলার নিয়ম থাকলেও সময় বেশি ক্ষেপণ তার সুযোগ দেয়নি কর্তৃপক্ষ। 

অন্যদিকে, তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ খেলায় প্রায় ১৮ মিনিট লড়াই করে জয় পরাজয় নিশ্চিত না হওয়ায় বিচারকরা যুগ্ম চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ কুস্তি ফেডারেশনের লিটন বিশ্বাস ও উখিয়ার নুর মোহাম্মদ বলীকে। 

২ নম্বর মেডেলেও একই ফলাফল হয়েছে। যৌথভাবে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে মহেশখালীর মোহাম্মদ হোসেন ও কুস্তি ফেডারেশনের আনোয়ার। তবে চ্যাম্পিয়ন খুঁজে পেয়েছে ৩ নম্বর মেডেলে। এই ইভেন্টে মহেশখালীর সরওয়ারকে হারিয়ে শিরোপা ঘরে তুলেছে একই উপজেলার সাহাব উদ্দিন। 

পরে বিজয়ী ও বিজিতদের মাঝে নগদ অর্থ ও ট্রফি তুলে দেন জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ। এসময় উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এড. ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক পৌর মেয়র মুজিবুর রহমান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক জাহিদ ইকবাল, কক্সবাজার প্রেস ক্লাবের সভাপতি আবু তাহের চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মো. মুজিবুল ইসলাম ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিনসহ সংশ্লিষ্টরা।

এর আগে সমাপনী দিনের খেলা উদ্বোধন করেন স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ। তিনি বলেছেন, জনপ্রিয় এই খেলা হারিয়ে যেতে বসেছে। তাই বলী খেলাকে ধরে রাখতে গ্রহণ করা হবে নানা উদ্যোগ।

দুপুর থেকে ঢোল ও নানা বাদ্যযন্ত্রের তালে বিভিন্ন এলাকা থেকে স্টেডিয়ামে আসতে থাকে মানুষ। দর্শকদের তুমুল হর্ষধ্বনির মধ্য দিয়ে জমজমাট হয়ে উঠে বলী খেলা। বলী এবং দর্শকদের মাঝে থাকে টান টান উত্তেজনা। বিকাল গড়ানোর সাথে সাথে কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয় দর্শক গ্যালারী। মানুষের স্রোত সুদৃঢ় করে ভাতৃত্বের বন্ধন। এবারের বলী খেলায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে প্রায় সাড়ে ৩০০ বলী অংশ নিয়েছেন।