Logo
×

Follow Us

বাংলাদেশ

বিনা টিকিটের সেই তিন যাত্রী রেলমন্ত্রীর স্ত্রীর আত্মীয়

Icon

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৮ মে ২০২২, ১০:৫৯

বিনা টিকিটের সেই তিন যাত্রী রেলমন্ত্রীর স্ত্রীর আত্মীয়

ইমরুল কায়েস প্রান্ত ও টিটিই শফিকুল ইসলাম। ছবি : সংগৃহীত

রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজনের আত্মীয় পরিচয় দেওয়া সেই তিন যাত্রীর পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা রেলমন্ত্রীর স্ত্রী শাম্মী আক্তারের নিকটাত্মীয়। 

এদিকে রেলমন্ত্রীর আত্মীয় পরিচয়ে বিনা টিকিটে ট্রেন ভ্রমণকারী যাত্রীদের জরিমানা করায় ভ্রাম্যমাণ টিকিট পরিদর্শককে (টিটিই) বরখাস্ত করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িতরা নিজের ‘আত্মীয় নয়’ বলে জানালেও রেলমন্ত্রীর স্ত্রীর নির্দেশে টিটিইর বরখাস্তের আদেশ হয়েছে বলে দাবি করেছে ওই যাত্রীদের পরিবার।

এছাড়া টিটিই শফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দেওয়া ব্যক্তি মো. ইমরুল কায়েস। তিনি রেলমন্ত্রীর স্ত্রীর মামাতো বোন ইয়াসমিন আক্তার নিপার ছেলে। তারা পাবনার ঈশ্বরদীর নূরমহল্লায় বসবাস করেন। ইমরুলের ট্রেনযাত্রার সঙ্গী হাসান ও ওমর রেলমন্ত্রীর স্ত্রীর মামাতো ভাই। 

ইমরুল নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর পাস করেছেন। বর্তমানে তিনি একটি বহুজাতিক কোম্পানিতে কর্মরত। হাসান রাজশাহীতে একটি কলেজে এইচএসসিতে পড়াশোনা করেন। আর ওমর পাবনা শহরে একটি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে পড়াশোনা করেন। 

ঘটনার রাতে রেলমন্ত্রীর স্ত্রী শাম্মীর সাথেই ছিলেন ইয়াসমিন। তার ভাষ্যমতে, ছেলে ইমরুল কায়েস ফোন দিয়ে ট্রেনে ঝামেলার কথা জানালে  শাম্মী রেলওয়ের একজন কর্মকর্তাকে ফোন দিয়ে টিটিই শফিকুল ইসলামকে বরখাস্ত করতে বলেন।

ইয়াসমিন বলেন, “৫ মে রাতে তার ছেলে ইমরুল টিকিট না পাওয়ায় নুরুল আলম নামের রেলওয়ের এক সহকারী বাণিজ্যিক কর্মকর্তাকে (এসিও) ফোন দেন শাম্মী আক্তার। রেলমন্ত্রীর স্ত্রীর পরিচয় পেয়ে স্টেশনমাস্টার টিকিট করতে হবে না বলে জানান। তিনি বলেছিলেন, ‘আপনার আত্মীয়ের টিকিট করতে হবে না।’ সে কারণেই ইমরুল কায়েস টিকিট ছাড়া ট্রেনে ওঠেন। পরে তাদের সম্মান দেখিয়ে এসি কেবিনে বসানো হয়।”

তিনি বলেন, “ট্রেন ছাড়লে টিটিই এসে তাদের সাথে খারাপ আচরণ শুরু করেন। তিনি আমার ছেলেকে ‘ট্রেন কি তোর বাপের’ বলে গালি দেন। রাত ৩টার দিকে ছেলে ফোন দিয়ে এসব জানালে শাম্মী টিটিইর ফোন নম্বর চায়। কিন্তু ফোন নম্বর না দিয়ে চলে যায়। পরিচয় পাওয়ার পরও টিটিইর এমন আচরণে শাম্মী রেগে গিয়ে রেলের পাকশী বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তাকে (ডিটিও) ফোন দিয়ে বরখাস্ত করতে বলেন। পরে তিনি টিটিইকে বরখাস্ত করেন।”

অপরদিকে ইমরুলের দাবি, তিনি সুন্দরবন ট্রেনে তাড়াহুড়ো করে উঠেছিলেন। এজন্য টিকিট কাটতে পারেননি। পরে টিটিই শফিকুল ইসলাম তার কাছে বেশি টাকা দাবি করেন। সেটা না দেওয়ায় গালিগালাজ করেন। টিটিই শফিকুল ইসলাম মাদকাসক্ত বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

তিনি আরো বলেন, তার ব্যবহারে অসন্তুষ্ট হয়ে বিষয়টি রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের লিখিতভাবে জানিয়েছি। এখন বিষয়টি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য আমাদের রেলমন্ত্রীর আত্মীয় হিসাবে জড়িয়ে নানারকম মিথ্যাচার করা হচ্ছে।

এর আগে গতকাল শনিবার (৭ মে) রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন বলেছিলেন, ওদের সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। নাম ভাঙিয়ে কেউ হয়তো সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করেছে। ঘটনার সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই।

রেলমন্ত্রীর আত্মীয় পরিচয়ে বিনা টিকিটে ভ্রমণকারী তিন ট্রেনযাত্রীকে জরিমানা করায় ওই ট্রেনের ভ্রাম্যমাণ টিকিট পরীক্ষককে (টিটিই) সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। গত বুধবার (৪ মে) দিবাগত রাতে খুলনা থেকে ঢাকাগামী আন্তঃনগর সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেনে জরিমানার ঘটনা ঘটে। 

পরে বৃহস্পতিবার (৫ মে) বিকেলে ঈশ্বরদীর পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে বাণিজ্যিক কর্মকর্তা (ডিসিও) নাসির উদ্দিনের নির্দেশে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। বরখাস্ত হওয়া টিটিই মো. শফিকুল ইসলাম ঈশ্বরদী রেলওয়ে জংশনের টিটিই হেডকোয়ার্টারের সাথে যুক্ত।

এ ঘটনা তদন্তে গতকাল তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তিন কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

আজ রবিবার (৮ মে) পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ের ডিসিও কার্যালয়ে বরখাস্ত হওয়া টিটিই শফিকুল ইসলামকে তলব করা হয়েছে।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫