চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় পুলিশকে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

প্রতিনিধি, রাজশাহী
প্রকাশ: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১৪:০৬

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা । ফাইল ছবি
পুলিশ সদস্যদেরকে সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘পুলিশকে জনগণের বন্ধু হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলতে হবে। দেশের শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষায় নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করতে হবে।’
অপরাধ নির্মূল ও সমসাময়িক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় পুলিশকে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেন, ‘অপরাধের ধরণ প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে। গতানুগতিক অপরাধের পাশাপাশি সাইবার ক্রাইম, মানিলন্ডারিং, মানবপাচার ইত্যাদি বৈশ্বিক অপরাধ সংগঠিত হচ্ছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও মাদকের মতো অশুভ সামাজিক ব্যাধি।’
তিনি আরো বলেন, ‘জঙ্গিবাদ দমনে বাংলাদেশ পুলিশের অব্যাহত সাফল্য শুধু দেশেই নয়, আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছে। এদেশের মাটিতে কোনোভাবেই জঙ্গি, সন্ত্রাসী ও যুদ্ধাপরাধীদের ঠাঁই হবে না।’
রাজশাহীর সারদায় পুলিশ একাডেমিতে আজ রবিবার ৩৬তম বিসিএস ব্যাচের শিক্ষানবিশ সহকারী পুলিশ সুপারদের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা গণতন্ত্রকে সুপ্রতিষ্ঠিত করার মাধ্যমে দেশে আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে চাই। আমি আশা করি, আপনাদের প্রশিক্ষণলব্ধ জ্ঞান ও অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে ‘রূপক-২০২১' এবং 'রূপকল্প-২০৪১' বাস্তবায়নের মাধ্যমে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে আন্তরিকভাবে সচেষ্ট থাকবেন।’
স্বাধীনতা সংগ্রামে পুলিশের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশ পুলিশকে স্বাধীনতা পদক ২০১১' এ ভূষিত করেছি। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, পুলিশের নবীন কর্মকর্তারাও তাদের পূর্বসূরীদের মতো দেশপ্রেম, পেশাদারিত্ব ও অসীম সাহসিকতার পরিচয় দেবেন।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘জনবান্ধব পুলিশি ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। জনগণ পুলিশের কাছ থেকে যেন স্বল্প সময়ের মধ্যে কাঙ্ক্ষিত সেবা পায়, তা নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য প্রযুক্তিনির্ভর আধুনিক পুলিশ গড়ে তোলা হচ্ছে। পুলিশের সেবা তাৎক্ষণিক পেতে জরুরি সেবা ‘৯৯৯’ চালু করা হয়েছে। পুলিশ দক্ষতার সঙ্গে এক্ষেত্রে কাজ করছে।’
তিনি বলেন, ‘জনগণের সমস্যাকে দেখতে হবে একান্ত আন্তরিক ও মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে। জনগণের মনে পুলিশ সম্পর্কে যেন অমূলক ভীতি না থাকে সেজন্য জনগণের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। সমাজের নারী, শিশু ও প্রবীণদের প্রতি সংবেদনশীল আচরণ করতে হবে। সমাজ থেকে অপরাধ নির্মূলে জনসম্পৃক্ততার মাধ্যমে জনবান্ধব পুলিশ গঠনে আপনাদের অগ্রপথিকের ভূমিকা পালন করতে হবে। পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় জনগণের মৌলিক অধিকার, মানবাধিকার ও আইনের শাসনকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ পুলিশের দক্ষতা ও সক্ষমতা বাড়াতে নতুন প্রযুক্তি, প্রশিক্ষণ, জনবল বৃদ্ধি, যথাযথ পদায়ন ও প্রণোদনার ব্যবস্থা করছে সরকার। জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও মাদক দমনে আমাদের অভিযান চলছে, চলবে। মাদকের কারণে বর্তমান যুবসমাজ ধ্বংসের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। এটি রোধ করতে হবে। এক্ষেত্রে পুলিশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।’
এর আগে সকাল সাড়ে ১০টায় বিশেষ হেলিকপ্টার যোগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমিতে পৌঁছান। পরে প্যারেড মাঠে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী তাকে স্বাগত জানান। এরপর প্রধানমন্ত্রী অভিবাদন মঞ্চে গিয়ে নবীন পুলিশদের সশস্ত্র সালাম গ্রহণ করেন। পরে একটি খোলা জিপে চড়ে তিনি নবীন পুলিশ কর্মকর্তাদের সমাপনী কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করেন।
প্যারেড কমান্ডার শিক্ষানবিশ সহকারী পুলিশ সুপার শাহিন আক্তার ও সহকারী প্যারেড কমান্ডার রবিউল ইসলাম খানের নেতৃত্বে এক এক করে মোট আটটি কন্টিনজেন্ট প্যারেড অংশগ্রহণ করে। আটটি কন্টিনজেন্ট থাকা মোট ১১৭জন শিক্ষানবিশ সহকারী পুলিশ সুপার মার্চপাস্ট করে প্রধানমন্ত্রীকে সালাম জানান। এরপর পতাকাবাহী দল, পুলিশ একাডেমির বিশেষ অশ্বারোহী দল ও সর্বশেষ বাদক দল একে একে মার্চপাস্ট করে প্রধানমন্ত্রীকে সালাম ও অভিবাদন জানান।
এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুলিশ একাডেমিতে প্রশিক্ষণের সময় বিভিন্ন বিষয়ে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনকারী সহকারী পুলিশ সুপারদের মধ্যে ট্রফি বিতরণ করেন।
অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, বিভিন্ন দফতরের প্রতিমন্ত্রী, সংসদ সদস্য, পুলিশের মহাপরিদর্শক জাবেদ পাটোয়ারী, পুলিশ একাডেমির প্রিন্সিপাল মোহাম্মদ নজিবুর রহমান, সরকারের সিনিয়র সচিব ও সচিব, বিদেশি কূটনীতিক, অতিরিক্ত আইজিপি, ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা, পদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা, মুক্তিযোদ্ধা, রাজশাহী শহরের বিশিষ্ট ব্যক্তি ও আমন্ত্রিত অতিথিরা উপস্থিত ছিলেন।