ভবন নির্মাণ শেষে অবশিষ্ট ৪ কোটি টাকা ফেরত দিলো কউক

কক্সবাজার প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৭ মে ২০২২, ১০:০৪

কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (কউক) নতুন ভবন। ছবি : সংগৃহীত
কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (কউক) ১০ তলা বিশিষ্ট ভবনটি আগামীকাল বুধবার (১৮ মে) উদ্ভোধন করা হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি অংশ নিয়ে ভবনটি উদ্বোধন করবেন বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ চেয়ারম্যান লে. কর্নেল (অব.) ফোরকান আহমেদ।
কক্সবাজার গণপূর্ত বিভাগ ও স্থাপত্য অধিদপ্তরের তত্বাবধানে এ অফিস প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে। ব্যয় সাশ্রয়ে ভবনটি নির্মাণ শেষে মোট বরাদ্দ হতে ৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা সরকারি কোষাগারে ফেরত দিয়েছে নির্মাণ তদারকি সংস্থা।
কউক চেয়ারম্যান ও সংশ্লিষ্টদের নজরদারি ও আন্তরিক প্রচেষ্টায় টেকসই ভবন নির্মাণের পরও ব্যয় থেকে টাকা সাশ্রয় সম্ভব হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
কউক চেয়ারম্যান ফোরকান আহমেদ বলেন, মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী কক্সবাজারকে আধুনিক, আকর্ষণীয় ও পরিকল্পিত পর্যটন নগরী হিসেবে সাজানোর প্রথম যাত্রা এ কউক ভবন; এমনটি মনে করছি আমি। ইতোমধ্যে আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। আশা করছি সঠিক সময়ে নির্ধারিত দিনে প্রধানমন্ত্রী ভবনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন।
নির্মাণ তদারককারি প্রতিষ্ঠান গণপূর্ত বিভাগ কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ শাহজাহান জানান, ফোরকান আহমেদের আন্তরিক প্রচেষ্টায় ২০১৭ সালের ২৭ মার্চ কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নিজস্ব অফিস ভবনের জন্য গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের ভূমি বরাদ্দ কমিটি এক দশমিক ২১ একর জমি বরাদ্দ দেন। একই বছর কউকের বহুতল অফিস ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী। একই বছর ভবনটি নির্মাণের জন্য একনেকে ১১২ কোটি ৩৭ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার। সরকারের গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করার দায়িত্ব পান গণপূর্ত ও স্থাপত্য অধিদপ্তর।
তিনি আরো জানান, ২০১৮ সালের ১৫ জুলাই ভবনের নির্মাণ কাজ শুরু হয়ে ২০২০ সালে ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে সময় বড়ানো হয়। একই সাথে আরো দুই কোটি টাকা বরাদ্দ বাড়ে। ২০২১ সালে এসে শেষ হয়ে এ বছর ১৮ মে ভবনটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
গণপূর্তের এ নির্বাহী প্রকৌশলী আরো বলেন, সবার প্রাণান্তকর প্রচেষ্টায় ভবন নির্মাণে মোট প্রকল্প ব্যয় ১১৪ কোটি ৩৭ লাখ থেকে ৪ কোটি ৩০ লাখ টাকা সাশ্রয় হয়। সাশ্রয় হওয়া টাকা সরকারের কোষাগারে ফেরত দেয়া হয়েছে।
ফোরকান আহমেদ বলেন, ফেরত যাওয়া টাকা অফিস ভবন নির্মাণ প্রকল্পের। এ টাকা বিনা অনুমোদনে অন্য কোনো প্রকল্পে ব্যয় করা যাবে না। তাই বিপুল অংকের এ টাকা সরকারের কাছে ফেরত দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, কউক প্রতিষ্ঠার পর দীর্ঘদিন ভবন ভাড়া নিয়ে অফিসের কাজ করতে হয়েছে। আমরা আধুনিক ভবন নির্মাণ করে নিজস্ব অফিস পেয়েছি। অফিসের সংকট দূর হয়েছে। এতে কক্সবাজারকে ঘিরে সরকারের মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী একটি আধুনিক, আকর্ষণীয় ও পরিকল্পিত পর্যটন নগরী বাস্তবায়ন করা সহজ হবে। এর আগে সরকার কউকের অধিক্ষেত্র ঠিক করে দিয়েছে। এখন কাজের গতি বাড়বে।
প্রকল্পের সুবিধাদি সম্পর্কে প্রকল্প তদারক কর্মকর্তা কক্সবাজার গণপূর্ত বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. আরিফুর রহমান ও উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. ওমর ফারুক জানান, কউকের বহুতল অফিস ভবনে মুক্ত বাতাস চলাচল নিশ্চিত করণে ভেন্টিলেটরসহ ক্রস ভেন্টিলেশনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। রয়েছে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণাগার। স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (এসটিপি), নবায়নযোগ্য জ্বালানি হিসেবে সোলার প্যানেল ও বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী বৈদ্যুতিক ফিটিংস ও যন্ত্রপাতি, সিসিটিভি, ফায়ার প্রোটেকশন সিস্টেম, সিকিউরিটি লাইটিং, ব্যাংক ব্যবস্থা, ২১০ আসন বিশিষ্ট একটি মাল্টিপারপাস হল, ১৫০ আসনের তিনটি সেমিনার হল, ১৫০ আসনের দুইটি কনফারেন্স কক্ষ, বজ্রপাত প্রতিরোধক ব্যবস্থা, ভবনের ১০ তলায় রয়েছে অত্যাধুনিক মানের রেস্ট হাউজ সুবিধা। প্রকল্পটি পরিবেশবান্ধবের মাপকাঠিতে সবুজ প্রকল্প হিসেবে গড়ে উঠেছে। ভবনের অষ্টম তলায় থাকবে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ ও নগর উন্নয়ন অধিদপ্তরের অফিস।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ৬ জুলাই কক্সবাজারকে একটি আধুনিক ও পরিকল্পিত পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে জাতীয় সংসদে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বিল-২০১৫ পাশ হয়। ২০১৬ সালের ১১ আগস্ট কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (কউক) প্রথম চেয়ারম্যান হিসেবে ফোরকান আহমদকে নিয়োগ করে সরকার।