লোহার খাঁচায় ঘেরা মহাত্মা গান্ধীর ভাস্কর্য

এ কে এম কামাল উদ্দিন টগর, নওগাঁ
প্রকাশ: ১৭ মে ২০২২, ১৫:৪৪

মহাত্মা গান্ধীর ভাস্কর্য। ছবি: নওগাঁ প্রতিনিধি
নওগাঁর আত্রাইয়ে ভারতের জাতির পিতা মহাত্মা গান্ধীর ভাস্কর্য নির্মাণ করা হয়েছে; কিন্তু ভাস্কর্য নির্মাণের পর সেখানে লোহার রড দিয়ে খাঁচা বানিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়েছে। এতে করে দর্শনার্থীরা যেমন ভাস্কর্যটি উপভোগ করতে সমস্যায় পড়ছেন, অন্যদিকে ভাস্কর্যটির সৌন্দর্র্য বিনষ্ট হচ্ছে।
জানা যায়, ইংরেজ সাম্রাজ্যবাদের নির্যাতনের যাঁতাকলে যখন পিষ্ট ভারতবাসী। তাদের জুলুম ও নিপীড়নে অতিষ্ট বিস্তীর্ণ জনপদের মানুষ। সে সময় ইংরেজবিরোধী আন্দোলনের ডাক দিয়ে জনমনে জায়গা করে নেন ভারতবর্ষের কিংবদন্তি নেতা মহাত্মা গান্ধী। হিন্দু-মুসলিম ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে ধর্ম-বর্ণের ঊর্ধ্বে থেকে তিনি এ আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন। ইংরেজদের পণ্য বর্জন করে দেশীয় পণ্য ব্যবহারে জনমত সৃষ্টি করেন।
মহাত্মা গান্ধী এ আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য ১৯২৫ সালে নওগাঁর আত্রাইয়ে এসেছিলেন। সে সময় তিনি আত্রাই রেলওয়ে স্টেশন সংলগ্ন তেতুঁলিয়া নামক স্থানের বর্তমান গান্ধী আশ্রমে অবস্থান করে এলাকার অসহায় মানুষদের সহযোগিতা করেন। সেইসাথে এলাকার মানুষকে আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তুলতে তিনি এখানে খদ্দর কাপড় তৈরির তাঁত শিল্প স্থাপন ও খাঁটি সরিষার তেলের জন্য ঘানি স্থাপনসহ অনেক স্মৃতিচিহ্ন গড়ে তোলেন। তৎকালীন সময়ে বানভাসী মানুষদের সহযোগিতা করার লক্ষ্যে তিনি এখানে স্থাপন করেন বঙ্গীয় রিলিফ কমিটি (বিআরসি)।
গান্ধী আশ্রমের পাশেই তেতুঁলিয়া তিন মাথা মোড়ের দক্ষিণ পার্শ্বে ২০২০ সালের শুরুর দিকে নওগাঁ-৬ (আত্রাই- রাণীনগর) আসনের প্রয়াত সংসদ সদস্য ইসরাফিল আলম ও ভারতীয় হাই কমিশনার যৌথ অর্থায়নে মহাত্মা গান্ধীর ভাস্কর্য নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। ভাস্কর্য নির্মাণের দায়িত্ব দেওয়া হয় রাজশাহীর ভাস্কর শিল্পী মাহাফুজুর রহমান ডনকে। ভাস্কর্য নির্মাণে মোট খরচ হয় ৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা। এর পর ওই বছরের ২৭ জুলাই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যান এমপি ইসরাফিল আলম।
তারপর ২০২১ সালের ২ অক্টোবর ভাস্কর্য উদ্বোধন করা হয়। ভাস্কর্যটির উদ্বোধক ছিলেন ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনার সঞ্জীব কুমার ভাটী। প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার ও বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য আনোয়ার হোসেন হেলাল; কিন্তু ভাস্কর্যটি নির্মাণের পর চারদিক দিয়ে লোহার রড দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়েছে। যার কারণে ভাস্কর্যটির সৌন্দর্য বিনিষ্ট হচ্ছে বলে মনে করছেন স্থানীয় সচেতন মহল। এমন অবস্থায় দ্রুত ভাস্কর্যের চারদিক থেকে লোহার রডের খাঁচা সরিয়ে ফেলে ভাস্কর্যের নিচের অংশে বেদিটি আরো কয়েক ফুট বড় করার জন্য দাবি জানিয়েছেন তারা।
স্থানীয় বাসিন্দা অরুণ চন্দ্র বলেন, প্রতিদিন এখানে অনেক মানুষ আসে মহাত্মা গান্ধীর ভাস্কর্য দেখতে; কিন্তু মহাত্মা গান্ধীর ভাস্কর্যটির চারপাশে এমনভাবে লোহার রড দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়েছে, দেখে মনে হয় চিড়িয়াখানার মতো। কাজটি ঠিক হয়নি। স্থানীয় প্রশাসনের উচিত ছিল বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখার।
ভাস্কর শিল্পী মাহাফুজুর রহমান ডনের সাথে মোবাইল ফোনে কথা হলে তিনি বলেন, এটি সরকারি উদ্যোগে করা হয়নি। সে সময় প্রয়াত এমপি ইসরাফিল আলম সাহেব ও ভারতীয় হাইকমিশনারের উদ্যোগে ভাস্কর্য নির্মাণের কাজ করা হয়েছিল। আর ভাস্কর্যটি নির্মাণের দায়িত্ব আমাকে দেওয়া হয়েছিল। মোট খরচ হয়েছিল যতদূর জানি পরববর্তীতে চারপাশের বসার বেঞ্চের কাজ স্থানীয় উপজেলা পরিষদের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হয়েছিল। তখন আমাকে যেভাবে কাজ করতে বলা হয়েছিল, আমি ঠিক সেভাবেই কাজটি সম্পন্ন করেছিলাম।
আত্রাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ইকতেখারুল ইসলাম বলেন, ভারতের জাতির পিতা মহাত্মা গান্ধীর ভাস্কর্য নির্মাণ উপজেলা পরিষদের মাধ্যমে করা হয়নি। আমরা শুধু কাজটি তদারকি করেছিলাম মাত্র।
চারপাশে লোহার খাঁচা দিয়ে ঘিরে দেওয়ার কারণে ভাস্কর্যটির সৌন্দর্য বিনিষ্ট হচ্ছে কি-না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দেখুন ভাস্কর্যটি উদ্বোধনের সময় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনার উপস্থিত ছিলেন। তখন তারা এসব নিয়ে কোনো কথা বলেনি। যেহেতু আমরা কাজটির পরিকল্পনার সাথে যুক্ত নই, সেক্ষেত্রে এ বিষয়ে মন্তব্য করা উচিত হবে বলে মনে করি না। যদি আগামীতে ভাস্কর্যটির সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে আরো কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়, সেটি একটি পরিকল্পনার বিষয়। তবে যতদূর জানি নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনা করেই হয়তো ভাস্কর্যটির চারপাশে ঘিরে দেওয়া হয়েছে।