Logo
×

Follow Us

বাংলাদেশ

শ্রম অধিদপ্তরে কেন ট্রেড ইউনিয়নের অফিস

Icon

এম ডি হোসাইন

প্রকাশ: ১৮ মে ২০২২, ১৫:৩৮

শ্রম অধিদপ্তরে কেন ট্রেড ইউনিয়নের অফিস

শ্রমিক সংগঠনের অফিস নিয়ে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়েছে। ছবি: সংগৃহীত

শ্রমিক সংগঠনের অফিস নিয়ে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়েছে। ট্রেড ইউনিয়নের অফিস কেন সরকারি অফিসে থাকবে, এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন খোদ শ্রমিক নেতারাই। সম্প্রতি বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সাবেক সভাপতি ও আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক  সিদ্দিকুর রহমান এ বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

সম্প্রতি গণভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে সিদ্দিকুর রহমান শ্রম মন্ত্রণালয়ের অধীনে সরকারি শ্রম বিভাগের অফিসে শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদের (স্কপ) অফিস থাকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের শ্রমবিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজের কাছে জানতে চান। 

হাবিবুর রহমান সিরাজ বলেন, স্কপ শ্রম বিভাগসহ সরকারের বিভিন্ন কাজে সহযোগিতা করে। এ কারণেই শ্রমমন্ত্রী শ্রম বিভাগের অফিসে স্কপের অফিস করার অনুমতি দিয়েছেন।  

সিদ্দিকুর রহমান বলেন, স্কপ একটি ট্রেড ইউনিয়ন সংগঠন। তাদের অফিস কেন সরকারি অফিসে থাকবে। তাদের মতো দেশে আরো অনেক ট্রেড ইউনিয়ন সংগঠন আছে। তাহলে তাদেরও অফিস দিতে হবে। বিজিএমইএও শ্রমিকদের সংগঠন। তারাও অফিস চাইতে পারে।

জানা যায়, শ্রম অধিদপ্তরের পুরনো ভবন ৪নং রাজউক এভিনিউর দ্বিতীয় তলায় স্কপের একটি অফিস আছে। ২০২০ সালে জাতীয় শ্রমিক লীগের সভাপতি ফজলুল হক মন্টু স্কপের সমন্বয়কের দায়িত্বে থাকার সময় এ অফিসটি শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে বরাদ্দ নেন। তখন থেকে এখানে শ্রমিক নেতারা বসছেন। 

স্কপ ১৯৮৩ সালের ১৩ এপ্রিল বাংলাদেশের ১২টি জাতীয় শ্রমিক ইউনিয়নের সমন্বয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। বর্তমানে শ্রমিকদের আন্তর্জাতিক সংগঠন আইএলও এবং সরকারের সাথে সমন্বয় করে কাজ করছে সংগঠনটি। শ্রমিক আইন, নীতিমালা ও পলিসিসহ সব বিষয়ে ভূমিকা রেখেছে সংগঠনটি।  

১৯৮২ সালে বাংলাদেশের ৫টি শ্রমিক ইউনিয়নের সন্ধান পাওয়া যায়, যখন সামরিক আইনের আওতায় নিষিদ্ধ ঘোষিত ইউনিয়ন কর্মচারী শ্রমিকদের একত্রীকরণের অধিকার ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেছিল। ১৯৮২ সালের শেষ দিকে অংশগ্রহণকারী ইউনিয়নের সংখ্যা ১১টিতে পৌঁছেছিল। বাংলাদেশে জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল ১৯৮৩ সালে যোগ দেয় এবং তারা সম্মিলিতভাবে শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ গঠন করে জাতীয় প্রেসক্লাবে এই সংগঠন গঠনের কথা ঘোষণা দিয়েছিল। তারা বাংলাদেশের সরকারপ্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের কাছে শ্রম অধিকার সম্পর্কিত ৫ দফা দাবি  পেশ করেছিল।

১৯৮৩ সালে বাংলাদশে আওয়ামী লীগের সাথে জোটবদ্ধ বাংলাদেশ জাতীয় শ্রমিক লীগ শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদে যোগ দেয়। জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নেতৃত্বে সামরিক সরকার প্রথমে দাবি উপেক্ষা করার চেষ্টা করেছিল। বাংলাদেশের ছোট ছোট শ্রমিক ইউনিয়নের সদস্যরা শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদকে অনুসরণ করতে শুরু করে। এরপর শিল্পমন্ত্রী  গোলাম মোস্তফা ও শ্রমমন্ত্রী আমনিুল ইসলাম শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদের প্রতিনিধিদের সাথে বৈঠক করেন এবং ১৯৮৮ সালের ২১ মে জাতীয় ধর্মঘটের হুমকির মুখে সরকার শ্রমিকদের অধিকার বাড়ানোর জন্য শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদের সাথে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে। সরকার এই চুক্তি কার্যকর করছে তা নিশ্চিত করতে পরিষদ ধর্মঘটে গিয়েছিল।

১৯৮৪ সালে বাংলাদেশ শ্রমিক ফেডরেশনের কাজী জাফর আহমেদ এবং বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সিরাজুল হোসেন খান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টিতে যোগদান করেন এবং সরকারের মন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত হন। পরবর্তীতে তাদের নিজ নিজ সংগঠনটি শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদকে ছেড়ে যায়। ধর্মঘটে অংশ নেওয়ার সময় তাজুল ইসলাম নামে এক শ্রমিক নেতাকে গুলি করে হত্যা করেছিল পুলিশ।

১৯৮৬ সালে জাতীয় শ্রমিক জোটের রুহুল আমিন ভূঁইয়া এবং জাতীয় শ্রমিক লীগের শাহ মোহাম্মদ আবু জাফর জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন, যা সংগঠনটিকে আরো দুর্বল করে দেয়। নব্বইয়ের দশকে শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ শ্রম ব্যবস্থার উন্নতির জন্য বাংলাদেশ সরকারের সাথে একাধিক চুক্তি স্বাক্ষর করে এবং এই চুক্তি বাস্তবায়নে সরকারকে বাধ্য করার জন্য বেশ কয়েকটি ধর্মঘট পালন করে। শ্রম অধিকারের বাইরে সংগঠনটি ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বৃহত্তর অধিকারের জন্য প্রচার চালিয়েছিল।

সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের সভাপতি রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, শ্রম ভবন শ্রমিকদের ভবন। এখানে শ্রমিক নেতাদের বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। অথচ অনেক শ্রমিক সংগঠন সরকারের কাছ থেকে জায়গাও অর্থ নিচ্ছে।

প্রতি ছয় মাস পরপর স্কপের সমন্বয়ক পরিবর্তন হয়। এখন সমন্বয়ক আছেন বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী আসিকুল আলম ও সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবিব বুলবুল।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫