Logo
×

Follow Us

বাংলাদেশ

বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা তৈরির স্বপ্ন বাস্তবায়িত হচ্ছে: প্রধানমন্ত্রী

Icon

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৭ মে ২০২২, ১৮:২৭

বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা তৈরির স্বপ্ন বাস্তবায়িত হচ্ছে: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু যে স্বপ্নের সোনার বাংলার কথা বলেছিলেন, সেটি এখন তৈরি হচ্ছে। গেল ১৩ বছরে বাংলাদেশে উন্নয়নকে জনমুখি ও অন্তর্ভুক্তিমূলক করা হয়েছে। জ্ঞানভিত্তিক, সমৃদ্ধ ও আধুনিক জাতি গঠনের লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে আমাদের আর্থ-সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গিও পরিবর্তিত হয়েছে।

আজ শুক্রবার (২৭ মে) এশিয়ার ভবিষ্যত বিনির্মাণে জাপানের টোকিওতে আন্তর্জাতিক নিকেই সম্মেলনে দেওয়া এক ভিডিওবার্তায় এসব কথা বলেন শেখ হাসিনা।

সম্মেলনে, স্বল্প আয়ের দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে পদার্পণের পরও স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশ যেসব সুবিধা পেতো সেগুলো আরো তিন বছর চালু রাখার অনুরোধ করেছেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ বিশ্বের দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতি এবং এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের বৃহত্তর অর্থনীতির একটিতে পরিণত হয়েছে। এই অগ্রযাত্রায়, আমরা জাপান এবং আমাদের বন্ধু এবং অংশীদাররা সমর্থন যুগিয়েছে।

তিনি আরো বলেন, জ্ঞানভিত্তিক, সমৃদ্ধ ও আধুনিক জাতি গঠনের লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে আমরা আমাদের আর্থ-সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গিকে আমরা পরিবর্তন করেছি। যেমন, আমরা ভিশন ২০২১ এবং ভিশন ২০৪১ এর পরে ডেল্টা প্ল্যান ২১০০ প্রণয়ন করেছি।

সম্মেলনে, বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলোর মতো বাংলাদেশও চলমান কোভিড-১৯ মহামারির অভিঘাতে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী ‘মহামারির আগে ২০১৯ সালে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ছিল আট দশমিক ১৫ শতাংশ। ২০২০ সালে, আমাদের প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধির হার দাঁড়ায় তিন দশমিক ৫১ শতাংশে এবং ২০২১ সালে এসে সেটা ছয় দশমিক ৯৪ শতাংশ হয়েছে। চলতি অর্থবছরে সাত শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধির হার অর্জনের আশা করছি আমরা।’

মহামারির প্রভাব মোকাবিলায় জীবন এবং জীবিকার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টা করেছেন বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘২০২২ সালের এপ্রিলে নিকেই-এর কোভিড-১৯ পুনরুদ্ধার সূচকে ১২১ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল পঞ্চম। কোভিড ব্যবস্থাপনা এবং পুনরুদ্ধারেও দক্ষিণ এশিয়ার সেরা পারফরম্যান্সকারী দেশ নির্বাচিত হয়েছে বাংলাদেশ।’

দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন সহযোগী জাপানের প্রতি কৃতজ্ঞতা ফুটে ওঠে প্রধানমন্ত্রীর বার্তায়।

তিনি বলেন, ‘১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই জাপানের সাথে দারুণ সম্পর্ক রয়েছে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময় জাপানের স্কুলগামী শিশুসহ দেশটির জনগণের অকুন্ঠ সমর্থন ও অবদানের জন্য আমরা গভীরভাবে কৃতজ্ঞ। ১৯৭২ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশকে প্রথম স্বীকৃতি দেয় জাপান।’

উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার পরের তিন বছর অর্থাৎ অন্তত ২০২৯ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের জন্য অগ্রাধিকারমূলক সুবিধা অব্যাহত রাখতে উন্নয়ন সহযোগী জাপানসহ অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংস্থাভুক্ত (ওইসিডি) দেশগুলোর কাছে সহযোগিতা চাইলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলেছেন, ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনে এই সহেযোগিতা পেলে বাংলাদেশ কৃতজ্ঞ থাকবে।

তিনি বলেন, ‘২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হতে জাতিসংঘের স্বীকৃতি অর্জন করেছে বাংলাদেশ। উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হতে আমরা ইতিমধ্যে বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করছি।

‘জাতিসংঘের প্রক্রিয়া অনুসরণ করে আমাদের বন্ধুপ্রতিম দেশ এবং অংশীদারদের ২০২৬ সালের পরেও একটি বর্ধিত সময়ের জন্য বাংলাদেশে অগ্রাধিকারমূলক সুবিধা অব্যাহত রাখার বিষয়টি বিবেচনার অনুরোধ জানাচ্ছি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) অর্জনের লক্ষ্যে ২০২৯ সাল পর্যন্ত জাপান এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংস্থাভুক্ত (ওইসিডি) দেশগুলো যদি আমাদের সহযোগিতা অব্যাহত রাখে আমরা গভীরভাবে কৃতজ্ঞ থাকব।’

মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) নিয়ে বিভিন্ন দেশের সাথে বাংলাদেশের আলোচনা চলমান রয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাপানসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশের সাথে এফটিএ এবং সেপা নিয়ে আলোচনায় আমরা প্রস্তুত।’

ভিডিওবার্তায় এশিয়ার উন্নয়নের পাঁচটি প্রস্তাব তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। এগুলো হলো:

১. এশিয়ার দেশগুলোকে একে অপরের প্রতি বন্ধুত্ব, বোঝাপড়া এবং সহযোগিতার হাত প্রসারিত করতে হবে এবং বিরোধ নিষ্পত্তিতে সংহতি বাড়াতে হবে।

২. এশিয়ার বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে দূরত্ব কমাতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি শক্তিশালী হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার হতে পারে।

৩. এশিয়ার দেশগুলোকে এক অপরের কাজে ন্যায্যতা, সম্মান, ন্যায়বিচার, অন্তর্ভুক্তি এবং সমতা রক্ষা করতে হবে।

৪. এশিয়ার ভবিষ্যত নির্ভর করবে টেকসই ও ভারসাম্যপূর্ণ উন্নয়ন, আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলার উন্নতি এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ওপর।

৫. এশিয়ার দেশগুলোর ঐক্যবদ্ধ ও সম্মিলিতভাবে অভিন্ন উন্নয়ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা উচিত।

নিজেদের মধ্যে বিরোধপূর্ণ সম্পর্ক দূর করে শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে পারলেই এশিয়ার দরিদ্র মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিত হবে বলে মনে করেন শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্বের বৃহত্তম এশিয়া মহাদেশে বিশ্বজনসংখ্যার প্রায় ৬০ শতাংশ মানুষের বসবাস। একইসাথে পৃথিবীর বেশিরভাগ দরিদ্র মানুষের বাসস্থানও এটি।

‘তাই আলোচনার মাধ্যমে মতভেদ দূর করে বিরোধপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে শান্তি নিশ্চিত করা অপরিহার্য। শান্তি ও স্থিতিশীলতার পরিবেশ তৈরি করলেই এশিয়ার দেশগুলো মানুষের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নতি ঘটাতে পারবে।’

এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে নিজেদের অভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সামরিক বাহিনীগুলোকে সম্মিলিতভাবে অনুশীলন, জ্ঞান এবং প্রযুক্তি ভাগ করে নেয়াকেও গুরুত্বপূর্ণ বলছেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি শান্তিপূর্ণ, টেকসই বিশ্ব এবং আরো গুরুত্বপূর্ণভাবে একটি শান্তিপূর্ণ, টেকসই ও সমৃদ্ধ এশিয়া নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সবসময় সব বন্ধু ও অংশীদারদের সাথে কাজ করে যাবে।’

মিয়ানমার থেকে জোর করে বিতাড়িত রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে আবারও এশীয় নেতাদের সহযোগিতাদের আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত ১১ লাখ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছি আমরা। নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবসানের মধ্যে দিয়ে তাদের নিজভূমি মিয়ানমারের রাখাইনে ফিরিয়ে নিতে হবে তাদের। আমরা এই সংকটের একটি বন্ধুত্বপূর্ণ সমাধানে সবাইকে সহযোগিতার অনুরোধ করছি।’

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫