দিনে ২ বার উজানের পানিতে ডুবছে দক্ষিণের নিম্নাঞ্চল

বরিশাল প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৮ জুন ২০২২, ০৮:৪৪

জোয়ারের পানিতে প্লাবিত দক্ষিণের নিম্নাঞ্চল। ছবি : বরিশাল প্রতিনিধি
বরিশাল বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ ৯টি নদীর মধ্যে চারটি নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ কারণে দিনে দুইবার জোয়ারের পানিতে ডুবে যাচ্ছে নদী সংলগ্ন এলাকাগুলো। বিশেষ করে বরিশাল বিভাগের ভোলা ও পটুয়াখালী অঞ্চল জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হচ্ছে।
গৃহবন্দি হয়ে পড়ছে এসব অঞ্চলের মানুষ। এছাড়া বাকি যে পাঁচটি নদী রয়েছে সেগুলোর পানিও বিপৎসীমা ছুঁই ছুঁই অবস্থা।
গত তিন দিন পূর্বে থেকে পূর্ণিমা ও উজানের পানির চাপে সবগুলো নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে জানিয়েছেন বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের জলানুসন্ধান বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. মাসুম। তবে দক্ষিণাঞ্চলে এখন পর্যন্ত বন্যার কোন প্রভাব নেই বলেও জানিয়েছেন এই কর্মকর্তা।
তিনি বলেন, নদ-নদীর যে পরিমান পানি বৃদ্ধি পেয়েছে তা মৌসুমের স্বাভাবিক পরিস্থিতি। টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের কারণে সিলেট ও সুনামগঞ্জে যে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে সেই পানি দক্ষিণাঞ্চলের নদ-নদীতে এসে পৌঁছতে অন্তত ১০-১২ দিন সময় লাগবে। তবে দক্ষিণাঞ্চলে নদীর গভীরতা ও প্রস্থ বড় হওয়ায় সিলেট-সুনামগঞ্জের পানি নেমে এলেও বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে না। এই অঞ্চলের নদীর পানির ধারণক্ষমতা বেশি।
এই কর্মকর্তা আরো বলেন, বর্ষা মৌসুমে বিভাগের মোট ২৩টি নদীর পানি প্রবাহ পর্যবেক্ষণ করা হয়। তবে বর্তমানে গুরুত্বপূর্ণ নয়টি নদীর পানি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে গত ৪৮ ঘন্টায় বিভাগের চারটি নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে ভোলা ও পটুয়াখালীর কিছু নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের শেষ মিটার গেজ রিডিং-এর তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘন্টায় ভোলা খেয়াঘাট সংলগ্ন তেঁতুলিয়া নদীর পানি ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। একই জেলার দৌলতখান উপজেলাধীন সুরমা ও মেঘনা নদীর পানি ২৭ সেন্টিমিটার এবং তজুমদ্দিন উপজেলার সুরমা ও মেঘনা নদীর পানি ৪৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তাছাড়া বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার বিশখালী নদীর পানি ৫০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এর আগে গত ১৬ জুন সন্ধ্যা পৌঁনে ৬টার পরে ভোলা খেয়াঘাট এলাকার তেঁতুলিয়া নদীর পানি বিপৎসীমা ২.৯০ এর স্থলে ৩.০৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। একইভাবে ভোলার তজুমদ্দিনে সুরমা ও মেঘনা নদীর পানি বিপদসীমা ২.৮৩ অতিক্রম করে ৩.৫০ মিলিমিটার ওপর দিয়ে প্রভাহিত হয়। দৌলতখান এলাকায় বিপৎসীমা ৩.৪১ অতিক্রম করে ৩.৭২ মিলিমিটার ওপর, বিষখালী নদীর বরগুনা পয়েন্টে বিপদসীমা ২.৮৫ অতিক্রম করে ২.৮৯ মিলিমিটার এবং পাথরঘাটা পয়েন্টে বিপৎসীমা ২.৮৫ মিলিমিটার অতিক্রম করে ৩.৪৫ মিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।
এদিকে, বিপৎসীমা ছুঁই ছুঁই অবস্থা বরিশালের কীর্তনখোলা নদীর পানি। এই নদীর পানি ২ দশমিক ৫৫ সেন্টিমিটার হলেও পানি প্রবাহিত হচ্ছে ২ দশমিক ৪৫ সেন্টিমিটার উচ্চতায়। ঝালকাঠি জেলার বিশখালী নদীর বিপৎসীমা ২ দশমিক ০৮ সেন্টিমিটার হলেও পানি প্রবাহিত হচ্ছে ২ দশমিক ৩ সেন্টিমিটার উচ্চতায়।
পটুয়াখালী জেলার মির্জাগঞ্জ উপজেলার বুড়িশ্বর/পায়রা নদীর পানি বিপৎসীমা ২ দশমিক ৮১ সেন্টিমিটার হলেও পানি প্রবাহিত হচ্ছে ২ দশমিক ৭৫ সেন্টিমিটার উচ্চতায়। বরগুনা জেলার বিশখালী নদীর বিপৎসীমা ২ দশমিক ৮৫ সেন্টিমিটার হলেও পানি প্রবাহিত হচ্ছে ২ দশমিক ৮২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে এবং পিরোজপুর জেলার বলেশ্বর নদীর বিপৎসীমা ২ দশমিক ৬৮ সেন্টিমিটার হলেও পানি প্রবাহিত হচ্ছে ২ দশমিক ৫৪ সেন্টিমিটার উচ্চতায়।
পানি উন্নয়ন বোর্ড বরিশাল জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. নুরুল ইসলাম সরকার বলেন, পূর্ণিমার জো’র কারণে প্রতিদিন দুই বার জোয়ারের সময় সাগর ফুলে উঠছে। অপরদিকে উত্তরাঞ্চলের বন্যার পানির ভাটির দিকে নামছে। এ কারণে বরিশালের বিভিন্ন নদীর পানি জোয়ারের সময় বিপৎসীমা অতিক্রম করছে। আবার ভাটির সময় কমে যাচ্ছে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে নদীর পানি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরবে বলে ধারনা এই কর্মকর্তার।
বরিশাল আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে রংপুর, রাজশাহী, সিলেট ও ঢাকা বিভাগের বেশ কিছু যায়গায় ভারী বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়াও বরিশাল বিভাগে মাঝারি বৃষ্টিপাত হতে পারে। চলমান বৈরী আবহাওয়া আগামী বরি-সোমবার কেটে যেতে পারে বলে জানান বরিশাল আবহাওয়া অফিসের জেষ্ঠ পর্যবেক্ষক প্রণব কুমার রয়।