Logo
×

Follow Us

বাংলাদেশ

দেশে বন্যা কতটা উপকারী?

Icon

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশ: ১৮ জুন ২০২২, ১৫:৪৯

দেশে বন্যা কতটা উপকারী?

ফাইল ছবি

দেশে বন্যা হওয়াটা উপকারী না অপকারী- এবিষয়ে নানাজনের নানা মত থাকলেও বিবিসি বাংলা এক প্রতিবেদনে বন্যাকে উপকারি বললেও কিছু অপকারের দিকও তুলে ধরেছে।

প্রতিবছরই দেশে বর্ষাকালে প্রবল বৃষ্টিপাত হলে উত্তরাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে বন্যার আশঙ্কা তৈরি হয়। বিশেষ করে উজান থেকে নেমে আসা ঢলে হাওর এলাকাসহ উত্তর বঙ্গের অনেক এলাকা তলিয়ে যায়।

বাংলাদেশে এরই মধ্যে বর্ষাকালের প্রায় অর্ধেক পেরিয়ে গেছে। তবে এখনো বাংলাদেশের কোনো জেলার বন্যা কবলিত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।

এই প্রতিষ্ঠানটির সংজ্ঞা অনুযায়ী, নদ-নদীর তীরবর্তী কোনো স্থানের পানি সমতল বা উচ্চতা বেড়ে যদি ওই স্থানের আশেপাশের ঘরবাড়ি, শস্য, ফসলাদি ক্ষতিগ্রস্ত হয় তখন তাকে পানির বিপৎসীমা বলা হয়। পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হলে বন্যা দেখা দেয়।

বাংলাদেশ বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, দেশে চার ধরনের বন্যা হয়। এগুলো হচ্ছে-

(১) মৌসুমী জলবায়ুর প্রভাবে নদ-নদীর পানির উচ্চতা বৃদ্ধি জনিত বর্ষাকালীন বন্যা।

(২) আকস্মিক (পাহাড়ি ঢল) বন্যা। এই বন্যা বাংলাদেশের উত্তরের কিছু এলাকা, উত্তর-পূর্ব এবং দক্ষিণ-পূর্বাংশের পাহাড়ি অঞ্চলে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে হয়ে থাকে। এই বন্যার পানি দ্রুত বাড়ে এবং দ্রুতই আবার কমেও যায়। একই সাথে পানি প্রবাহের গতিবেগ বেশি হয় এবং বন্যা হয় স্বল্প মেয়াদী।

(৩) অপ্রতুল নিষ্কাশন ব্যবস্থা জনিত বন্যা । এধরনের বন্যা সাধারণত পর্যাপ্ত পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকার কারণে মাঝারি বা ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে পানি জমে কোনো কোনো এলাকায় বন্যা দেখা দেয়। এই বন্যার পানি খুব ধীরে কমে এবং বন্যা দীর্ঘ মেয়াদী হয়।

 (৪) সমুদ্র তীরবর্তী অঞ্চলে ঝড়-সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাস বা জোয়ারের উচ্চতা জনিত বন্যা।

বাংলাদেশের কোনো কোনো এলাকায় একাধিক কারণে বন্যা হতে পারে।

বর্ষাকালে পানির প্রবাহ না থাকলে দেশি মাছের সরবরাহ থাকবে না বলে আশঙ্কা রয়েছে।

বর্ষাকালে পানির প্রবাহ না থাকলে দেশি মাছের সরবরাহ থাকবে না বলে আশঙ্কা রয়েছে।

বন্যা নিয়ে প্রায় প্রতিবছরই ভোগান্তির চিত্র চোখে পড়লেও অনেকে মনে করেন যে, বাংলাদেশের জন্য বন্যা একেবারেই না হওয়াটা মঙ্গলজনক নয়।

বাংলাদেশে প্রাকৃতিক বিভিন্ন দুর্যোগ নিয়ে গবেষণা করে থাকে ডিজাস্টার ফোরাম নামে একটি প্রতিষ্ঠান।

এই প্রতিষ্ঠানটির সদস্য সচিব গওহর নঈম ওয়ারা বলেন, বাংলাদেশ মূলত প্লাবন-ভূমি। এর ধর্ম হচ্ছে পানি আসবে, আবার বেরিয়েও যাবে। এটা বন্ধ হয়ে গেলে খুবই মুশকিল হবে।

উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, হাওরের মধ্য দিয়ে মাটি ভরাট করে আম্বুরা সড়ক তৈরি করা হয়েছে। যার কারণে নদীর পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে অষ্টগ্রাম অঞ্চলের কয়েক হাজার একর জমিতে বালি পড়ে গেছে। কারণ যে পানি ঢুকেছিল সেটি বের হতে পারেনি।

বাংলাদেশ একটি বৃহত্তম বদ্বীপও বটে। তার মতে, যেকোনো বদ্বীপের জন্যই বর্ষাকালে পানির ঢল নামাটা খুব জরুরি।

তিনি আরো বলেন, এটি মাছ থেকে শুরু করে শস্য-সব কিছুর জন্যই দরকার। হাওরে যদি পানি না আসে তাহলে মাছও হবে না, শস্যও হবে না।

 গওহর নঈম ওয়ারা বলেন, বন্যা মূলত মিষ্টি পানির প্রবাহ। এই প্রবাহ নোনা পানির স্রোতকে সরিয়ে দেয়।

তার মতে, নিয়ন্ত্রিত বন্যা বাংলাদেশের জন্য আশীর্বাদ স্বরূপ কাজ করে। নিয়ন্ত্রিত বন্যা বলতে তিনি বুঝিয়েছেন, যে বন্যার পানি মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় বাধার সৃষ্টি করে না এমন পানির উপস্থিতি।

তিনি বলেন, বন্যার পানি না হলে মাটির যে ক্ষমতা সেটি বৃদ্ধি পাবে না। কৃষি ক্ষেত্রে ফসল উৎপাদনটা অনেকটাই বর্ষাকালের ঢলে বয়ে আনা পানির পলির উপর নির্ভরশীল। কৃষি জমিতে পলির অন্যতম উৎস বন্যার পানি।

ওয়ারা বলেন, বর্ষাকালে পানির ঢল নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য ভূমির ব্যবহার পরিকল্পিত হওয়াটা জরুরি। তার মতে, মানুষের ঘরবাড়ি বন্যা লেভেলের উপরে রাখতে হবে। গ্রামগুলোকেও উঁচু করতে হবে।

মানুষের বসতি কোথায় কোথায় হবে, পুকুর কোথায় কাটা যাবে, হাওরের উপর দিয়ে রাস্তা নির্মাণ করা হবে কিনা, এসব বিষয়ে যথাযথ পরিকল্পনা থাকতে হবে।

তিনি মনে করেন, বাংলাদেশে যেখানে সেখানে আবাসন নির্মাণ এবং পুকুর কাটার কারণে পানি জমে থেকে দীর্ঘস্থায়ী বন্যা দেখা দেয়।

কোন জমিতে কী কী ফসল হবে, কোনটা উঁচু জমি, কোনটা নিচু জমি, কোথায় বাড়ি করা যাবে তা নির্ধারণ করতে হবে, বলেন ওয়ারা।

এধরনের পদক্ষেপের মাধ্যমে বন্যার ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনা সম্ভব বলে তিনি মনে করেন।

বন্যার উপকারিতার বিষয়ে ওয়ারার সাথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ বিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষক নুশরাত তাশমিন একমত প্রকাশ করলেও বলছেন বাংলাদেশে সাময়িক বন্যাটা খুব জরুরি হলেও দীর্ঘস্থায়ী বন্যাটা আশীর্বাদের পরিবর্তে অভিশাপ হয়েই দেখা দেয়।

তিনি বলেন, বর্ষাকালে যে পানির ঢলটা আসে, সেটা যদি ১০-১৫ দিন স্থায়ী হয় তাহলে সেটি উপকারী। কারণ এই পানির সাথে পর্যাপ্ত পরিমাণ পলিমাটি ও বালু প্রবাহিত হয়ে আসে।

বর্ষার শুরুতেই যদি পানি আসে এবং সেটা যদি একটা স্ট্যান্ডার্ড টাইম পরে নেমে যায় তাহলে সেটি কৃষির জন্য উপকারী।

কিন্তু এই সময় পেরিয়ে যদি দীর্ঘদিন কোন অঞ্চলে পানি আটকে থাকে তাহলে তা মোটেই কাঙ্ক্ষিত নয়।

এছাড়া অনেক বেশি পরিমাণ বা বেশি উচ্চতার পানি কম সময় ধরে থাকলেও সেটা ক্ষতি করে বলেও মনে করেন তিনি।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫