Logo
×

Follow Us

বাংলাদেশ

‘মৃত্যুকূপ’ ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে অনীহা

Icon

রাঙ্গামাটি প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৮ জুন ২০২২, ২০:৩৭

‘মৃত্যুকূপ’ ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে অনীহা

রাঙ্গামাটিতে পাহাড় ধসের আশঙ্কা। ছবি: রাঙ্গামাটি প্রতিনিধি

গত দুই দিনের ভারী ও মাঝারি মানের বৃষ্টিতে রাঙ্গামাটিতে পাহাড় ধসের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে গত শুক্রবার রাত থেকেই রাঙ্গামাটি শহর এবং বিভিন্ন উপজেলায় পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসরতদের নিরাপদে আশ্রয় নেওয়ার জন্য নির্দেশনা দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। পৌর এলাকায় অস্থায়ীভাবে খোলা ২০টি আশ্রয়কেন্দ্রে ঝুঁকি নিয়ে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাস মানুষের মধ্যে আশ্রয়কেন্দ্রে আসতে অনীহা দেখা যাচ্ছে। তবে বিকেল থেকে কিছু সংখ্যক মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে আনা গেছে।

জেলা আবহাওয়া অফিসের তথ্য মতে, গত ২৪ ঘণ্টায় রাঙ্গামাটিতে ৯৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আজ শনিবার (১৮ জুন) থেকে আগামী তিনদিন রাঙ্গামাটিতে জেলায় ভারী বর্ষণের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। এমতাবস্থায় পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিতে বসবাসকারী মানুষদের জান-মালের ক্ষতি এড়াতে দ্রুত বাধ্যতামূলক নিরাপদ আশ্রয় কেন্দ্রে চলে যেতে বলে জেলা প্রশাসন। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা থেকেই পরিস্থিতি মোকাবেলায় মাঠে তৎপর আছে জেলা প্রশাসন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। একইসাথে শহরে করা হচ্ছে মাইকিং। কিন্তু বিপদগ্রস্ত এসব মানুষের মধ্যে আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়া নিয়ে অনীহা রয়েছে। শুক্রবার রাতে বন্দরনগরী চট্টগ্রামে পাহাড় ধসে দুই পরিবারের চারজনের মৃত্যুর খবরে শনিবার সকাল থেকে ঝুঁকিপূর্ণদের নিরাপদে সরিয়ে নিতে আরো তৎপর হয়ে ওঠে প্রশাসন।

এদিকে, শনিবার সম্ভাব্য দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতি মোকাবেলায় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ (কন্ট্রোল রুম) খুলেছে জেলা প্রশাসন। সকাল থেকে জেলা শহরের লোকনাথ মন্দির, শিমুলতলী, রূপনগর, মোনঘরসহ অন্যান্য এলাকায় কাজ করছে চারটি টিম। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে জেলা প্রশাসনের খোলা আশ্রয়কেন্দ্রগুলো হলো- রিজার্ভবাজার শহীদ আব্দুল আলী একাডেমি; নিউ রাঙ্গামাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়; জেলা শিশু একাডেমি; রাঙ্গামাটি সিনিয়র মাদ্রাসা; পুলিশ লাইনস্ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়; রাঙ্গামাটি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়; অভিলাষ ক্রিকেট ক্লাব; ওমদামিয়া হিল পৌর জুনিয়র হাইস্কুল; ডিয়ারপার্ক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়; স্বর্ণটিলা  সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়; যুব উন্নয়ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র; উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় আঞ্চলিক ভবন; পৌর জুনিয়র হাইস্কুল; বিএম ইনস্টিটিউট; মোনঘর ভাবনাকেন্দ্র; বিএডিসি অফিস ভবন; কাঁঠালতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়; পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শিকা ইনস্টিটিউট; রাণী দয়াময়ী উচ্চ বিদ্যালয় ও গোধূলী আমানতবাগ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।


রাঙ্গামাটির জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, দুর্যোগ পরিস্থিতি মোকাবেলায় চারটি টিম গঠন করা হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলো থেকে লোকজনকে সরিয়ে নিতে ইউএনও, জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা মাঠে আছেন। অনেকে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। আমরা তাদেরকে ফোর্স করে হলেও নিয়ে যাব। এ বিষয়ে পুলিশ-সেনাবাহিনী আমাদের সহায়তা করছেন। 

রাঙ্গামাটি পৌরসভার প্যানেল মেয়র কালায়ন চাকমা জানান, শনিবার সকালে ভেদভেদী শিমুলতলী, রূপনগর এলাকাসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় গিয়েছি। মানুষজন আশ্রয়কেন্দ্রে আসতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। 

জেলা প্রশাসনের হিসাবে, রাঙ্গামাটি পৌর এলাকাসহ জেলার দশ উপজেলায় আনুমানিক প্রায় ১৫ হাজার মানুষ পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করছেন। তবে ২০১৭ সালের ১৩ জুন ভয়াবহ পাহাড় ধসের পরও থেমে নেই ঝুঁকিতে বসতি। বিগত ৫ বছরে নতুন করে বসতি স্থাপনা করা হয়েছে। তবে কি পরিমাণ নতুন বসতি গড়ে উঠেছে নির্দিষ্ট তালিকা নেই জেলা প্রশাসন কিংবা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে। 


প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের ১৩ জুন পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটিতে ভয়াবহ পাহাড়ধসের ঘটনায় চার সেনাসদস্যসহ ১২০ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। ওই এসময় রাঙ্গামাটি-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ঘাগড়া কলাবাগান এলাকায় প্রধান সড়কটি সম্পূর্ণ ধসে যাওয়ার কারণে টানা ৯দিন সারাদেশের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে রাঙ্গামাটি। এরপরের বছর ২০১৮ সালের ১২ জুন জেলার নানিয়ারচর উপজেলায় পাহাড় ধসে ১১ জন মারা যান। ২০১৯ সালে জেলার কাপ্তাইয়ে মারা আরো চারজন। এছাড়াও বিগত বছরগুলোতে রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান জেলাতে পাহাড় ধসে বহু হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। তাই বর্ষা মৌসুম বৃষ্টি এলেই আতঙ্কে দানা বাধে পাহাড়ে।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫