Logo
×

Follow Us

বাংলাদেশ

কৃষকের শত কোটি টাকা মধ্যস্বত্বভোগীর পকেটে

Icon

মো. মামুন চৌধুরী, হবিগঞ্জ

প্রকাশ: ২১ জুন ২০২২, ১৫:৪৪

কৃষকের শত কোটি টাকা মধ্যস্বত্বভোগীর পকেটে

হবিগঞ্জ জেলার মানচিত্র

হবিগঞ্জ জেলার বাহুবলে পরিবেশবান্ধব উপায়ে নিরাপদ ফসল উৎপাদন প্রকল্পের মডেল ইউনিয়ন হচ্ছে পাঁচ নম্বর লামাতাশি। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্যোগে এ প্রকল্পে ২৫টি দলের ৫০০ জন কৃষক পাইকারি ক্রেতাদের কাছে চিচিঙ্গা বিক্রি করেছেন সর্বনিম্ন ৭ টাকা কেজিতে। অথচ সেগুলোই বাজারে উঠে কেজিপ্রতি দাম হয়ে যাচ্ছে ৫০ টাকা।

একইভাবে সেখানে উৎপাদিত ঝিঙা, কুমড়া, বেগুনসহ নানা ধরনের সবজি পাইকারি ব্যবসায়ীরা অল্প দামে কিনে বাজারে খুচরা বিক্রেতাদের কাছে বিক্রি করছেন কয়েকগুণ বেশিতে। এতে মুনাফার বড় অংশই যাচ্ছে মধ্যস্বত্বভোগীর পকেটে। আর ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন কৃষক এবং খুচরা বিক্রেতারা। শুধু এখানেই নয়, এ চিত্র দেখা যায় হবিগঞ্জ জেলার আরও নয়টি উপজেলায়।

প্রকল্পের জমিগুলোতে গিয়ে দেখা গেছে, পাইকাররা প্রতি কেজি চিচিঙ্গা ৭ টাকা, ঝিঙা ২০ টাকা, বেগুন ২০ টাকা এবং মাঝারি আকারের কুমড়া ক্রয় করছেন প্রতিটি ১৫ টাকায়। পরে উপজেলার মিরপুর বাজারের আড়তে গিয়ে দেখা যায়, খুচরা বিক্রেতাদের কাছে একই চিচিঙ্গা ২০ টাকা, ঝিঙা ৩০ টাকা, বেগুন ৩০ টাকা এবং মাঝারি আকারের কুমড়া বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকায়। অন্যদিকে জেলার খুচরা বাজারগুলোতে চিচিঙ্গা, ঝিঙা ও বেগুন বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৫০ থেকে ৬০ টাকা এবং মাঝারি আকারের কুমড়া ৫০ টাকায়।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসেবে, রবি ও খরিপ মৌসুম মিলিয়ে জেলায় প্রতিবছর সবজি আবাদ হয় ১০ হাজার হেক্টর জমিতে। প্রতি  হেক্টরে উৎপাদন অন্তত ১৬ মেট্রিক টন। সেই হিসাবে জেলায় বছরে সবজির উৎপাদন আনুমানিক ১ লাখ ৬০ হাজার মেট্রিক টন। আর জমি থেকে খুচরা বাজার পর্যন্ত সবজির দামের ফারাকের কারণে বছরে কয়েকশ কোটি টাকা চলে যায় মধ্যস্বত্বভোগীর পকেটে।

বাহুবলের লামাতাশী এলাকার কৃষক দুলাল মিয়া বলেন, তিনি ৪০ শতক জমিতে ঝিঙা ও চিচিঙ্গা চাষ করেছিলেন। তিনি চিচিঙ্গা বিক্রি করেছেন ৭ টাকা এবং ঝিঙা ২২ টাকা কেজি দরে। এভাবে বিক্রি হতে থাকলে জমি থেকে খরচের টাকাও উঠবে না।

একইভাবে লোকসানের কথা জানিয়েছেন পরিবেশবান্ধব মাধ্যমে নিরাপদ ফসল উৎপাদন প্রকল্পের কৃষক- আরফান আলী, আজাদ মিয়া, ছাদেক মিয়া, তাহির মিয়া, আবুল মন্নাফ, আব্দুল কাইয়ুম ও জুয়েল মিয়াসহ আরও কয়েকজন।

তারা বলেন, পাইকারি ক্রেতারা একেক দিন একেক দাম নির্ধারণ করে আমাদের কাছে সবজি ক্রয় করতে আসেন। তাদের নির্ধারিত দামে সবজি না বিক্রি করলে তারা ক্রয় করেন না। তাই আমরা বাধ্য হয়েই অল্প দামে সবজি বিক্রি করতে বাধ্য হই।

আজমিরীগঞ্জ উপজেলার হিলালপুর গ্রামের কৃষক ওয়ারিশ মিয়া বলেন, পাইকারি ক্রেতাদের সিন্ডিকেটের কারণে সবজি চাষিরা প্রকৃত মূল্য পাচ্ছেন না। এ জন্য তার এলাকার অনেকেই সবজি চাষ বাদ দিয়ে অন্য পেশার সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন। এ বিষয়ে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।

হবিগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ আধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা আশেক পারভেজ জানান, জেলায় প্রতিবছর সবজি আবাদ হয় ১০ হাজার হেক্টর জমিতে। প্রতি হেক্টর জমিতে কমপক্ষে ১৬ মেট্রিক টন সবজি উৎপাদন হয়।  সেই হিসাবে জেলায় বছরে সবজি উৎপাদন হয় আনুমানিক ১ লাখ ৬০ হাজার মেট্রিক টন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কৃষি বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী চাষিদের বিষমুক্ত সবজি চাষের জন্য নানা প্রক্রিয়া শেখানো হয়েছে। এখনো প্রশিক্ষণ চলছে। জৈব সারসহ ক্ষতিকর কীট দমন এবং উপকারী কীট বাঁচিয়ে রাখতে কৃষি বিভাগ সার্বক্ষণিক মাঠে আছে; কিন্তু মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে কৃষকরা বঞ্চিত হচ্ছেন এবং সাধারণ ক্রেতারা অতিরিক্ত মূল্য গুনছেন। এক্ষেত্রে কৃষকদের সংগঠিত হওয়ার কোনো বিকল্প নেই।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫