বর্ষার আগে ব্রহ্মপুত্রে ভাঙন, আতঙ্কে মানুষ

ইলিয়াস আহমেদ, ময়মনসিংহ
প্রকাশ: ২২ জুন ২০২২, ১৫:৩৭

ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনের কবলে শত শত ফসলি জমি বিলীন হচ্ছে। ছবি: ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
বর্ষার আগেই ময়মনসিংহে ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনের কবলে শত শত ফসলি জমি বিলীন হচ্ছে। এতে আতঙ্ক বিরাজ করছে কয়েক গ্রামের মানুষের মধ্যে। ভাঙন রোধে দ্রুত উদ্যোগ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
সম্প্রতি ময়মনসিংহ সদর এবং গৌরীপুর উপজেলার প্রায় ৬ কিলোমিটার ব্রহ্মপুত্র নদের দুই পাড়ে ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। অনেক জায়গায় কৃষকের ৪০ থেকে ৫০ হাত ফসলি জমি ভেঙে নদে বিলীন হয়ে গেছে। এতে আতঙ্কে রয়েছেন সদর উপজেলার চরনিলক্ষীয়া ইউনিয়নের চরনিলক্ষীয়া গ্রাম, গৌরীপুর উপজেলার ভাংনামারী ইউনিয়নের খানপাড়া, খুলিয়ারচর, ভাটিপাড়া এবং খোদাবক্সপুরসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের শত শত কৃষক।
স্থানীয়রা বলছেন, বর্ষার আগেই এ অবস্থা হলে বর্ষাকাল এলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে। প্রশাসন দ্রুত উদ্যোগ না নিলে বাড়ি-ঘরও বিলীন হয়ে যাবে নদে। প্রতিবছর এমন অবস্থা হলেও প্রশাসন স্থায়ীভাবে কোনো উদ্যোগ না নেওয়ায় সমাধান হচ্ছে না। স্থায়ী টেকসই বেড়িবাঁধ না করলে আগামী দুই এক বছরের মধ্যে ঘর-বাড়িও নদে বিলীন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
চরনিলক্ষীয়া গ্রামের হাফিজুল ইসলাম বলেন, বর্ষা এলেই ব্রহ্মপুত্র নদের দুই পাড়ে ভাঙন শুরু হয়। এ বছর বর্ষার আগে থেকেই ভাঙছে। বেশ কয়েকজনের ফসলি জমি নদীগর্র্ভে বিলীন হচ্ছে। প্রতিদিনই একটু একটু করে ভাঙছে।
ভাংনামারী ইউনিয়নের গজারিয়া পাড়ার কৃষক নূর মোহাম্মদ মাঈন উদ্দিন বলেন, নদের পাড় ভাঙনের ফলে আমরা খুব আতঙ্কের মধ্যে রয়েছি। একটু একটু করে ভাঙতে ভাঙতে অনেক জায়গায় ৪০ থেকে ৫০ হাত জমি নদে বিলীন হয়ে গেছে। স্থানীয় চেয়ারম্যান কিছুটা উদ্যোগ নিয়ে ঘাটে কিছু মাটির বস্তা ফেলেছেন। এখানে স্থায়ী সমাধান ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই।
ভাটিপাড়ার ফাহিম ইসলাম বলেন, আমার জানা মতে ৬ থেকে ৭ কিলোমিটারে ভাঙন শুরু হয়েছে। এখন আংশিক ভাঙছে। যখন পুরো বর্ষা শুরু হবে তখন দৈনিক ৫ থেকে ৭ হাত করে ভেঙে নদের ভেতরে ঢুকে যাবে। ভাঙনের কারণে আমরা জমিতে কোনো ফসল চাষ করতে পারি না। কবে যে আমাদের বাড়ি-ঘর চলে যায় সে চিন্তায় রয়েছি। বেড়িবাঁধ না হলে আমাদের কোনো রক্ষা নেই।
ভাংনামারী ইউনিয়ন পরিষদের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য জাহাঙ্গীর আলম বলেন, গত বছরের তুলনায় এ বছর ভাঙনের তীব্রতা অনেক বেশি। এ বছর ইতোমধ্যে ৫০ হাত ভেঙে নদের ভেতরে ঢুকেছে। আরও হয়তো ১০০ হাতের মতো ভাঙবে। আমরা প্রশাসনকে বারবার বলে আসছি বেড়িবাঁধ দেওয়ার জন্য; কিন্তু তাতে কাজ হচ্ছে না। বেড়িবাঁধ নির্মাণ না হলে আমাদের এলাকাকে বাঁচানো সম্ভব হবে না।
ভাংনামারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নেযামুল হক বলেন, ব্রহ্মপুত্র নদের দুই পাড় ভাঙার কারণে মানুষ আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে। অন্যান্য বছরের ন্যায় এবার ভাঙনের মাত্রা বেশি। পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে ভাঙন রোধে অবহিত করা হয়েছে।
গৌরীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হাসান মারুফ বলেন, ব্রহ্মপুত্র বড় নদ। তাই দ্ইু পাড় ভাঙে। আমরা এসব বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে অবহিত করেছি। তারা যদি উদ্যোগ না নেয়, তাহলে আমাদের বেশি কিছু করার থাকে না।
ময়মনসিংহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী ইউনুস আলী বলেন, ময়মনসিংহের পাঁচটি উপজেলার ১৬টি পয়েন্টে প্রতিবছর ভাঙন দেখা দেয়। গত বছরও গৌরীপুরে ব্যাপকহারে ভাঙন দেখা দিলে জরুরিভিত্তিতে কাজ করা হয়। ভাঙন রোধ স্থায়ীভাবে নিরসন করার জন্য ৫৪৩ কোটি টাকা প্রকল্প বরাদ্দের আবেদন করা হয়েছে। প্রকল্প মঞ্জুর হলে ভাঙন রোধে স্থায়ীভাবে কাজ করা হবে। এ ছাড়াও তাৎক্ষণিক ভাঙন রোধে সংসদ সদস্যের ডিও লেটারের মাধ্যমে বরাদ্দ মঞ্জুর করে কাজ করা হয়ে থাকে।