নেউরা সড়কে হাট হলে ভোগান্তি বাড়বে হাজারো মানুষের

কুমিল্লা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২২ জুন ২০২২, ২০:৩৪

কোরবানির গরু। ছবি: সংগৃহীত
কুমিল্লার নেউরা গরু বাজার। জেলার সর্ববৃহৎ কোরবানির পশু কেনা বেচার হাট হিসাবে পরিচিত। ঈদ-উল-আযহার পূর্বে ধারাবাহিক সাতদিন এ সড়কে গরুর বাজার বসে। এতে মানুষের ভোগান্তি চরমে উঠে। স্থানীয়দের দাবি পুরাতন বিমানবন্দর মাঠে পশুর হাট স্থানান্তর করা হোক। এতে দুর্ভোগ কমবে পাশের ১১ গ্রামের মানুষের।
স্থানীয় সূত্র মতে, কুমিল্লা শহরতলীর নেউরা দাখিল মাদ্রাসার মাঠ থেকে নব্বইয়ের দশক থেকে যাত্রা শুরু করে নেউরা বাজার। শহর সংলগ্ন ও যাতায়াত সুবিধা থাকায় অল্প সময়ে বাজারটি সুনাম লাভ করে। বাজারটি নেউরা ছেড়ে দক্ষিণ ঢুলিপাড়া এসে ঠাঁই নিয়েছে। বিশাল এ বাজার এখন সম্পূর্ণ সড়কের উপর বসে। বাজারের কারণে আশেপাশের ১১টি গ্রামের মানুষের যাতায়াতসহ নিয়মিত চলাচল সমস্যার সৃষ্টি হয়। সিটির দক্ষিণ অংশের মানুষের কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সদর হাসপাতাল, রাজগঞ্জ, কান্দিরপাড়, চকবাজার, টমছমব্রিজ,ইপিজেড, শহরের সকল স্কুল-কলেজে যাতায়াতের একমাত্র সড়ক ঢুলিপাড়া নেউরা ভায়া দিশাবন্দ সড়ক। এ সড়কে ঢুলিপাড়া, নেউরা, রসুলপুর, সৈয়দপুর, নোয়াপাড়া, রাজাপাড়া, দিশাবন্দ, লক্ষ্মীনগর, কাজীপাড়া, আবাসন প্রকল্প, লইপুরা গ্রামের মানুষের শহরে প্রবেশের পথ।
এছাড়া দক্ষিণ কুমিল্লার সাথে মহানগরী ও আদর্শ সদর থেকে সদর দক্ষিণে যাতায়াতের একমাত্র রাস্তা নেউরা সড়ক।
ইপিজেড কর্মী লায়লা পারভীন জানান, তিনি রাজাপাড়ায় ভাড়া বাসায় থাকেন। বাসা থেকে ইপিজেড পকেট গেইট আসতে ৫ টাকা ভাড়া লাগে। যখন এখানে গরু বাজার থাকে তখন দিশাবন্দ- উনাইশার হয়ে দিশাবন্দ-কাজীপাড়া-জাঙ্গালিয়া, টমছমব্রিজ হয়ে ১নং গেইটে আসতে হয়। দেখা যায় তখন ভাড়া ৩৫ টাকা চলে যায়। এতে প্রচুর সময় অপচয় হয়।
১৯নং ওয়ার্ড রাজাপাড়ার বাসিন্দা অ্যাডভোকেট শহীদুল হক স্বপন বলেন, গরু বাজারের সময় আবর্জনা, দুর্গন্ধের ফলে এলাকায় বসবাস ও এ রাস্তায় যাতায়াত করতে অনেক কষ্ট হয়। বাজার চলাকালীন সময়ে দুইদিকে বাজারের লাঠিয়াল বাহিনী থাকে যারা গাড়ি চলাচলে বাধা তৈরি করে, রাস্তা বন্ধ করে দেয়।
স্থানীয় ২০নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ নেতা মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কটিতে বাজার হওয়ার ফলে মানুষের অনেক কষ্ট হয়। গরু বাজার থেকে আধাকিলো দক্ষিণে পুরাতন বিমানবন্দর মাঠ খালি। এখানে বাজারটা করলে আরো জমজমাট হবে। মানুষও কষ্ট থেকে বাঁচবে। সেখানে ট্রাক ও প্রাইভেট কার রাখার অনেক খালি জায়গা আছে।
কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের (কুসিক) প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও বাজার বিষয়ক (ভারপ্রাপ্ত) কর্মকর্তা মো. হারুনুর রশিদ বলেন, কুসিক থেকে চৌয়ারা বাজার, চকবাজার পশুর হাটের জন্য বাৎসরিক ইজারা দেওয়া হয়। অস্থায়ীভাবে চাঙ্গিনী পশুর হাটের জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়। এ তিনটি বাজার ছাড়া কুসিক থেকে আর কোনো পশুর হাটের অনুমোদন নেই।
সদর দক্ষিণ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শুভাশিস ঘোষ বলেন, আমাদের ইজার দেওয়া বাজার তালিকায় নেউরা বাজার নেই। যদিও এ অংশটি সদর দক্ষিণে অবস্থিত।
সদর দক্ষিণ উপজেলা চেয়ারম্যান গোলাম সরওয়ার বলেন, এখানে বাজারটি এমনভাবে বসানো হয়। কেউ যে হসপিটাল যাবে, সে সুযোগ রাখে না। আর সড়কে তো বাজার হতে পারে না। আমি মানুষের পক্ষে। এ সমস্যার সমাধান নেই।
কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের প্রশাসক ড. সফিকুল ইসলাম জানান, সড়কে গরুর বাজার হতে পারে না। এতে মানুষের ভোগান্তি বাড়বে। এলাকাবাসী চাইলে সংশ্লিষ্টদের চিঠি দেওয়া হবে।
কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান বলেন, স্কুল ও রাস্তায় পশুর হাট বসানো সরকারি নিয়মের বিপরীত। বিষয়টি আমরা অবগত হয়েছি। মাসিক সভায় আলোচনার পর সমাধানের চেষ্টা করবো।