ভালোবাসার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন মিজানুর

নাসিম আহমেদ, আনসারি
প্রকাশ: ২৭ জুন ২০২২, ১৪:১৮

মিজানুর রহমান। ছবি- সাম্প্রতিক দেশকাল
রাজা আর যাদব দুটি কবুতরের নাম। তাদের জন্ম যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের অভ্যন্তরে। ওই কারাগারে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত আসামি ছিলেন মিজানুর রহমান (৪৭) দীর্ঘ সময় ধরে। কারাবন্দি জীবনে মিজানুরের সঙ্গী ছিল কারাগারের একঝাঁক কবুতর।
তবে এর মধ্যে রাজা আর যাদবের সঙ্গে যেন মিজানুরের বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। মিজানুর মুক্তি পেয়ে বাড়ি ফিরেছেন, তখন তার সঙ্গে রাজা আর যাদবও চলে আসে কারাগার থেকে বাড়িতে। এ যেন এক ভালোবাসার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করল যাবজ্জীবন কারাভোগের মুক্ত আসামি কবুতর রাজাবাবু।
ঝিনাইদহ সদর উপজেলার হরিশংকরপুর ইউনিয়নের বাকড়ি গ্রামের মৃত আনোয়ার হোসেনের চার সন্তানের মধ্যে বড় ছেলে মিজানুর রহমান। সরেজমিনে তার বাড়িতে গিয়ে জানা যায়, একটি হত্যা মামলায় আসামি হয়েছিলেন তিনি। মামলার রায়ে তার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়। রায় হওয়ার সময় তার বয়স ছিল ২৫ বছর। এরপর দীর্ঘ ২২ বছর ১০ মাস পর ২ জুন তিনি মুক্তি পেয়েছেন। কারাজীবনে তিনি খুলনা, ঝিনাইদহ, যশোর ও ঢাকা কারাগারে থেকেছেন। সর্বশেষ তিনি মুক্তি পান যশোর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে। এরপর থেকে দুই কবুতর নিয়ে মিজানুর নতুন জীবন শুরু করেন। মিজানুর রহমান যে ঘরে ঘুমান, সেই ঘরেই কবুতরগুলো থাকত। তবে অপরিচিত জায়গা হওয়ার কারণে ৭ জুন যাদব উড়তে গিয়ে ঘরের ফ্যানের সঙ্গে ধাক্কা খায়। এতে কবুতরটি মারা যায়। এ মৃত্যুতে মিজানুরসহ তার পরিবারের লোকজন খুব কষ্ট পেয়েছেন। সঙ্গীর মৃত্যুতে রাজাও দুই দিন কিছুই খায়নি।
আরও জানা যায়, রাজাবাবু একাই ওই বাড়িতে থাকেন। গম ছাড়া সে কিছুই খায় না। প্রতিদিন তাকে গোসল করাতে হয়। একদিন পর পর শ্যাম্পু দিয়ে গোসল করাতে হয়। অন্য কবুতর তাদের জন্য বানানো ঘরে থাকলেও রাজাবাবু থাকে মিজানুরের শোবার ঘরে। বড় স্ট্যান্ড ফ্যানের বাতাস সে খুবই পছন্দ করে।
মিজানুরের ছোট ভাই রেজাউল করিম বলেন, দেশীয় প্রজাতির কবুতর রাজা। তাকে মগে করে পানি খাওয়াতে হয়। এমনকি সে নিজে নিজে খায়ও না। তাকে মুখে তুলে খাওয়াতে হয়। বাড়িতে দেশীয় প্রজাতির ৫০টিরও অধিক কুবতর থাকলেও সে আলাদা থাকে। সারা দিনই সে কারও না কারও ঘাড়ে, কোলে, হাতের উপর এমনকি মাথায় চড়ে দিন পার করে। তাকে পেয়ে আমরা সবাই খুশি। মানুষের সঙ্গে পাখির এমন সম্পর্ক হতে পারে এটাই প্রথম দেখলাম।
প্রতিবেশী রফিকুল বলেন, আমরা খুবই অবাক হয়েছি। এমন ঘটনা আসলেই বিরল। এর আগে কখনো দেখিনি, শুনিওনি। কবুতর মিজানুরের কথা শোনে। ডাকলে কাছে চলে আসে। কখনো তার পিঠে, কখনো মাথায় বা কখনো মোটরসাইকেলের মধ্যে ঘাড়ে বসে থাকে। এমন সম্পর্ক বিস্ময়কর। মানুষের সঙ্গে পাখির এমন বোঝাপড়া সত্যিই ব্যতিক্রম।