
ফাইল ছবি
রাজাকার, আল বদর, আল শামস বাহিনীর
পাশাপাশি ১৯৭০ সালে নির্বাচিত এমএনএ এবং এমপিএদের মধ্যে যারা পাকিস্তানের পক্ষ নিয়েছিলেন,
তাদের তালিকাও তৈরি হবে। ‘জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল বিল’ পরীক্ষা করে এক প্রতিবেদনে ওই তালিকা তৈরির বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত
করে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি সংসদে রিপোর্ট দিয়েছে।
আজ সোমবার (২৭ জুন) সংসদীয়
কমিটির সভাপতি শাজাহান খান সংসদে প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন।
গত ৬ জুন ‘জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা
কাউন্সিল বিল-২০২২’
সংসদে উত্থাপন করেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। পরে বিলটি পরীক্ষা
করে সংসদে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য সংসদীয় কমিটিতে পাঠানো হয়।
সংসদে তোলা বিলে বলা হয়, ‘১৯৭১
সালের ২৬ মার্চ হতে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত যারা মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজাকার, আল-বদর,
আল-শামস বাহিনীর সদস্য হিসেবে কর্মকাণ্ডে লিপ্ত ছিলেন বা আধা-সামরিক বাহিনীর সদস্য
হিসেবে কর্মকাণ্ডে লিপ্ত ছিলেন বা আধা-সামরিক বাহিনীর সদস্য হিসেবে সশস্ত্র যুদ্ধে
নিয়োজিত থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছেন বা খুন, ধর্ষণ,
লুট, অগ্নিসংযোগের অপরাধমূলক ঘৃণ্য কার্যকলাপের মাধ্যমে নিরীহ মানুষকে হত্যার মাধ্যমে
যুদ্ধাপরাধ সংঘটিত করেছেন, অথবা একক বা যৌথ বা দলীয় সিদ্ধান্তক্রমে প্রত্যক্ষভাবে,
সক্রিয়ভাবে বা পরোক্ষভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছেন, তাদের
তালিকা প্রণয়ন ও গেজেট প্রকাশের জন্য সরকারের কাছে সুপারিশ পাঠাবে।’
সংসদীয় কমিটি ‘মুজাহিদ বাহিনী’ ও ‘পিস কমিটির’ সদস্যদের তালিকা তৈরির বিধান রাখার সুপারিশ করেছে। একইসাথে
১৯৭০ সালের নির্বাচনে যারা এমএনএ এবং এমপিএ নির্বাচিত হয়ে পাকিস্তানের পক্ষ নিয়েছিল
এবং বাংলাদেশের পক্ষ নেওয়ার কারণে শূন্য ঘোষিত আসনে উপনির্বাচনে পাকিস্তান সরকার কর্তৃক
নির্বাচিত এমএনএ এবং এমপিএদের তালিকা তৈরির সুপারিশ করেছে।
সংসদে উত্থাপিত বিলে বলা আছে, মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট আইনের বীর মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা এই আইনে গৃহীত হবে। সংসদীয় কমিটি ওই সংজ্ঞা বিলের ধারায় যুক্ত করেছে।
কাউন্সিলের আট জন সদস্য প্রধান
উপদেষ্টা মনোনয়ন দেবেন, যারা বীর মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক কর্মকাণ্ডের সাথে
সংশ্লিষ্ট কোনো ব্যক্তি বা মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্য হবেন।
উপদেষ্টা পরিষদে মুক্তিযুদ্ধ
বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী থাকবেন। প্রধান উপদেষ্টার মনোনীত পাঁচ জন সদস্য মনোনয়নের
ক্ষেত্রে মুক্তিযুদ্ধের ফোর্স কমান্ডার, সাব-সেক্টর কমান্ডার অথবা কমান্ডারদের বিশিষ্ট
মুক্তিযোদ্ধা, এই বিষয়ক কর্মকাণ্ডে সংশ্লিষ্ট কোনো বিশিষ্ট ব্যক্তি বা মুক্তিযোদ্ধা
পরিবারের সদস্যদের রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া মন্ত্রণালয়ের সচিবও এই পরিষদে থাকবেন।
কাউন্সিল মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধা
সংশ্লিষ্ট সব সংগঠনের নিবন্ধন প্রদান, সাময়িকভাবে স্থগিত ও বাতিল করতে পারবে।
২০১৯ সালে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা
কাউন্সিল বিলের খসড়া তৈরি করে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। ওই বছর ২৯ ডিসেম্বর আন্তমন্ত্রণালয়
সভায় সুপারিশও নেওয়া হয়। ২০২০ সালের মার্চ মাসে আইনের ভাষা পরিমার্জনের জন্য জনপ্রশাসন
মন্ত্রণালয়ের বাংলা ভাষা বাস্তবায়ন কোষে পাঠানো হয়।
২০২০ সালের ডিসেম্বরে মন্ত্রিসভার
বৈঠকে দুটি সংশোধনী দিয়ে ওই খসড়ার নীতিগত অনুমোদন করা হয়। চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য তা
গত জুনে মন্ত্রিপরিষদ সভায় পাঠানো হয়।
এ বছরের জানুয়ারি মাসে খসড়া
আইনের চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়।
রাজাকারদের তালিকা তৈরি করতে
২০২০ সালে একটি উপ-কমিটি করে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী
কমিটি। কমিটি প্রথমে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল রাজাকারদের তালিকা প্রকাশ করবে। পরে খসড়া আইনটি
মন্ত্রিসভায় যাওয়ার পর তারা সিদ্ধান্ত পাল্টায়। গত এপ্রিল মাসে আগের কমিটি ভেঙে নতুন
করে উপ-কমিটি পুনর্গঠন করা হয়।