Logo
×

Follow Us

বাংলাদেশ

পানি নামার সাথে সাথে বাড়ছে পানিবাহিত রোগ

Icon

সিলেট প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২৮ জুন ২০২২, ১১:৫৪

পানি নামার সাথে সাথে বাড়ছে পানিবাহিত রোগ

হাসপাতালে পানিবাহিত রোগে আক্রান্তদের ভিড়। ছবি : সিলেট প্রতিনিধি

বন্যা পরিস্থিতির ক্রমশ উন্নতি হচ্ছে সিলেটে। বন্যাকবলিত এলাকাগুলোয় পানি নামার সাথে সাথে ডায়রিয়া ও চর্মরোগসহ পানিবাহিত রোগ ছড়িয়ে পড়েছে। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্করা রয়েছেন চরম ঝুঁকিতে। 

স্বাস্থ্য বিভাগ সিলেটের তথ্যমতে, গত ২৪ ঘন্টায় সিলেট বিভাগে পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়েছেন ৬০৬ জন। এর মধ্যে ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়েছেন ৩৬২ জন। বাকিরা চর্মরোগসহ অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। 

গত ২৪ ঘন্টায় সিলেট জেলায় পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়েছেন ৬৮ জন। এর মধ্যে ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়েছেন ৪৮ জন, বাকিরা অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। এই সময়ে সুনামগঞ্জে পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়েছেন ১৬৬ জন। এরমধ্যে ৯২ জন ডায়রিয়ায়, বাকিরা অন্যান্য রোগে। হবিগঞ্জ জেলায় পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়েছেন ২০৩ জন। এর মধ্যে ৯৯ জন ডায়রিয়ায় ও বাকিরা অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। মৌলভীবাজার জেলায় পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়েছেন ১৬৯ জন। এর মধ্যে ৭৪ জন ডায়রিয়ায়, বাকিরা অন্যান্য রোগে আক্রান্ত।

এই এক সপ্তাহে সিলেট বিভাগে ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়েছেন এক হাজার ৮৮৫ জন। এর মধ্যে সিলেটে ৪৬৫ জন, সুনামগঞ্জে ৫৪৫ জন, হবিগঞ্জে ৪৮৭ জন ও মৌলভীবাজারের ৩৮৮ জন রয়েছেন। এই সময়ে ডায়রিয়া ছাড়াও অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হয়েছেন সহস্রাধিক বন্যা কবলিত মানুষ। স্বাস্থ্য বিভাগের হিসাবের বাইরে বিপুল সংখ্যা মানুষ পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়েছেন বলে মনে করছেন অনেকে। 


নগর থেকে শুরু করে জেলা, উপজেলা, বিভিন্ন বাজার, এমনকি পাড়া মহল্লার ওষুধের দোকানগুলোতে ডায়রিয়া, চর্মরোগসহ পানিবাহিত রোগের ওষুধ বিক্রি বেড়েছে কয়েকগুণ। 

সিলেটের বন্যাকবলিত প্রতিটি এলাকায় ভয়াবহ স্বাস্থ্য বিপর্যয় ঘটতে পারে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জানান, বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সাথে পাল্লা দিয়ে রোগব্যাধি বাড়বে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার সুযোগ না থাকায় বাড়তে পারে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা।  মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া ও চিকুনগুনিয়ার প্রকোপ মারাত্মক রূপ নিতে পারে। বিশেষ করে যেসব এলাকার সুষ্ঠু পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নেই সেখানে জলাবদ্ধতার কারণে স্বাস্থ্যসমস্যা প্রকট আকার ধারণ করবে।

স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টরা জানান, বন্যার কারণে বাথরুম ও সেনিটারি টয়লেট ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় অনেকেই নদীর আশপাশে খোলা জায়গায় মলমূত্র ত্যাগ করছে। মানুষের এ পয়োবর্জ্য ও ওই এলাকার বিভিন্ন ময়লা-আবর্জনা মিলে জলাশয়ের পানি দূষিত হয়ে পড়ছে। লোকজন তখন যদি এসব জলাশয়ের পানি বিশুদ্ধ না করে পান করে, খাবারের কাজে ব্যবহার কিংবা থালাবাসন ধোয়া, কাপড় কাচা ইত্যাদি কাজে ব্যবহার করে, তখন ডায়রিয়া বা পানিবাহিত রোগবালাই হতে পারে।


স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সাম্প্রতিক বন্যায় সিলেট বিভাগে পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়েছেন চার হাজার ৫৪১ জন। তারা ডায়রিয়া, চর্মরোগসহ বিভিন্ন ধরনের পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে সিলেটের দুই হাজার ২৫৭ জন, সুনামগঞ্জের ৫৪৭ জন, হবিগঞ্জের এক হাজার ৭ জন ও মৌলভীবাজারের ৭৩০ জন রয়েছেন।

স্বাস্থ্য বিভাগ সিলেটের বিভাগীয় সহকারী পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) ডা. নূরে আলম শামীম বলেন, বন্যার পানি কমার সাথে সাথে পানিবাহিত রোগ দেখা দিয়েছে। বন্যাকবলিত এলাকাগুলোয় ৪৩০টি মেডিকেল টিম কাজ করছে। আক্রান্ত রোগীদের তাৎক্ষণিক চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এখন পর্যন্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। পর্যাপ্ত ওষুধ আমাদের কাছে আছে।

স্বাস্থ্য বিভাগ সিলেটের পরিচালক ডা. হিমাংশু লাল রায় বলেন, বন্যাকবলিত এলাকায় পানিবাহিত রোগের পাশাপাশি চোখের প্রদাহ দেখা দিতে পারে। এজন্য আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। জেলা ও উপজেলা সদরে প্রয়োজনীয় ওষুধ এবং প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য উপকরণ পৌঁছে দেয়া হয়েছে।

সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান জানান, গতকাল পর্যন্ত সিলেটের ৫৩০টি আশ্রয়কেন্দ্রে ৪৫ হাজার ৭৯৬ বন্যার্ত ব্যক্তি অবস্থান করছে। ২১ লাখ ৯৬ হাজার ৬৬৫ ব্যক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে, যারা মাঠ পর্যায়ে কাজ করছেন।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫