কোরবানি ঈদে ঢাকা-বরিশাল লঞ্চে ‘স্পেশাল সার্ভিস’ অনিশ্চিত

বরিশাল প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৮ জুন ২০২২, ১২:৫০

ঈদুল ফিতরের সময় রাজধানীর সদরঘাটে ঢাকা-বরিশাল পথে যাত্রার জন্য লঞ্চগুলো অপেক্ষা করছে। ছবি: সংগৃহীত
পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় আসন্ন কোরবানির ঈদযাত্রায় বরিশাল-ঢাকা নৌপথে যাত্রী কম হবে এটাই স্বাভাবিক। যাত্রীর অভাবে এবারের ঈদে লঞ্চে ‘স্পেশাল সার্ভিস’ চালু করা হবে কিনা তা নিয়ে দ্বিধা দ্বন্দ্বে রয়েছেন লঞ্চ মালিকরা।
প্রত্যেক ঈদে বরাবরই এই নৌপথের লঞ্চ মালিকরা লঞ্চে ‘স্পেশাল সার্ভিস’ চালু করে থাকেন। কিন্তু এবার এই সার্ভিস চালানোর পরিকল্পনা চূড়ান্ত করতে পারেননি তারা।
পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পরদিন গত রবিবার (২৬ জুন) যান চলাচলের জন্য সেতু খুলে দেওয়া হয়েছে। আর ঈদুল আযহার সম্ভাব্য তারিখ ধরা হয়েছে আগামী ১০ জুলাই। অর্থাৎ দুই সপ্তাহেরও কম সময় পর কোরবানির ঈদ উদযাপন করবে দেশবাসী। অথচ আগে দুই ঈদের যেকোনো ঈদের ২০ থেকে ২৫ দিন আগেই এই নৌপথের লঞ্চ মালিকরা যাত্রীদের চাপ সামলাতে হিমশিম খেতেন। এবারের প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ ভিন্ন। এই নৌপথের লঞ্চ যাত্রীদের তেমন কোনো চাপ নেই।
পদ্মা সেতু চালুর পর আসন্ন কোরবানির ঈদই প্রথম ঈদ। এ কারণে লঞ্চে যাত্রীর চাপ থাকবেই না- এই বিষয়ে অনেকটাই নিশ্চিত লঞ্চ মালিকরা।
বরাবরই ঈদের আগে লঞ্চের ভিআইপি, সেমি ভিআইপি, প্রথম শ্রেণির কেবিন, দ্বিতীয় শ্রেণির সোফার টিকেট পেতে রীতিমতো ঘাম ছুটে যেত যাত্রীদের। লঞ্চের নির্ধারিত ডেকে বসার জায়গা না পেলেও ঝুঁকি নিয়েও যাত্রীরা পারাপার হয়েছেন বছরের পর বছর ধরে।
এবার পদ্মা সেতু সে চিত্র পাল্টে দেবে বলে ধারণা লঞ্চ মালিকদের। বরিশাল-ঢাকা নৌপথের বিলাসবহুল এমভি সুন্দরবন লঞ্চের নির্মাণ প্রতিষ্ঠান সুন্দরবন নেভিগেশনের চেয়ারম্যান এবং সদর উপজেলা চেয়ারম্যান ও মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, ‘সেতু চালু হওয়ার পর এটি প্রথম ঈদ। লঞ্চে যাত্রী কিছুটা কম আসবে তা নিশ্চিত। তবে কতটুকু কমে সেটি দেখার বিষয়। তাই আমরা সবকিছু পর্যবেক্ষণে রেখেছি। যে কারণে ‘ঈদ স্পেশাল সার্ভিসের’ বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়নি।’
ঈদযাত্রায় লঞ্চের বিশেষ সার্ভিসের পরিকল্পনা চূড়ান্ত না হলেও সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, ‘যদি ৯ জুলাই ঈদ হয়, তাহলে আগামী ৭ ও ৮ জুলাই দুই দিন ঢাকা-বরিশাল লঞ্চে বিশেষ সার্ভিস চলবে। আর ঈদ আগামী ১০ জুলাই হলে সার্ভিস চলবে ৯ জুলাই পর্যন্ত। তবে এর সবই নির্ভর করছে যাত্রী চাপের উপর।’
তবে নৌপথে ভাড়া কম হওয়ায় অনেক যাত্রী লঞ্চেই বাড়িমুখো হবেন বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।
বাস ও লঞ্চের ভাড়ার পার্থক্য টেনে তিনি বলেন, ‘বাসে ঢাকা থেকে বরিশাল আসতে একজন যাত্রীর সর্বনিম্ন ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা লাগে। সেখানে এই ভাড়া দিয়ে লঞ্চে দুজন যাত্রী বরিশাল আসতে পারবে। এছাড়া সাথে ছোট বাচ্চারাও ফ্রি আসতে পারছে। যেটা বাসে সম্ভব না।’
বরিশাল-ঢাকা নৌপথের সুরভী লঞ্চের ব্যবস্থাপক মো. বেল্লাল জানান, এবার এখনো বিশেষ সেবা নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত না হলেও আগাম টিকেট বিক্রি কার্যক্রম চলছে। তবে যাত্রীদের কাছ থেকে তেমন কোনো সাড়া মিলছে না।
ঢাকায় চাকরি করা বরিশালের খালেকুজ্জামান রাসেল জানান, প্রতি বছর দুই ঈদের সময়ে বাড়ি যেতে লঞ্চের কেবিন পেতে নানাজনের কাছে তাকে তদবির করতে হয়েছে। অগ্রিম টিকেট কিনে বাড়ি যাওয়ার দিন ঘাটে এসে দেখা গেছে, লঞ্চ ছেড়ে চলে গেছে। তখন বাধ্য হয়ে আবার টিকেট কাটতে হয়েছে। এবার তিনি পদ্মা সেতু দিয়েই বাড়ি যাবেন।
বিআইডব্লিউটিসির নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের পরিদর্শক মো. কবির হোসেন জানান, বরিশাল-ঢাকা নৌপথে চলাচলের জন্য ২৪টি লঞ্চের অনুমোদন আছে। দুই ঈদে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ ১৮টি লঞ্চ চলাচল করেছে।
তিনি আরো বলেন, দুই ঈদের আগের এবং পরের দুই-তিন দিন একেকটি লঞ্চ দুইবার করেও ট্রিপ দেয়। এবার তেমন না হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
গত রবিবার (২৬ জুন) বরিশাল থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া সাতটি লঞ্চে তেমন কোনো যাত্রী ছিল না।
বিআইডব্লিউটিসির নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের উপ-পরিচালক এবং বরিশাল নৌ বন্দরের যুগ্ম পরিচালক মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘পদ্মা সেতু এবার নৌপথে নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। কি ধরনের অভিজ্ঞতা হয়, তার জন্য অপেক্ষায় আছি।’