বাড়ছে সংক্রমণ, হাসপাতালে উপেক্ষিত স্বাস্থ্যবিধি

সাইমুন মুবিন পল্লব
প্রকাশ: ২৯ জুন ২০২২, ১৫:৫৩

শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। ছবি: সাম্প্রতিক দেশকাল
রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ঢুকতেই উপচে পড়া ভিড় চোখে পড়ে। নিচতলায় গিয়ে দেখা যায়, হুড়োহুড়ি করছেন কয়েকশ লোক। কেউ বহির্বিভাগের টিকেট নিচ্ছেন, কেউ এসেছেন রোগী দেখতে। হাতে গোনা কয়েক জনের মুখে মাস্ক থাকলেও অধিকাংশের মুখেই নেই মাস্ক। বিশেষজ্ঞরা বলছেন সংক্রমণের গতি যে হারে বাড়ছে আগামী কয়েক দিনের মধ্যে পরিস্থিতি ভয়ংকর অবস্থায় চলে যেতে পারে।
আজ বুধবার (২৯ জুন) সরেজমিনে গিয়ে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগ, জরুরি বিভাগ, মেডিসিন ওয়ার্ড এ চিত্র দেখা যায়। এমন কি হাসপাতালের প্রবেশ মুখে হাত ধোয়ার যে ব্যবস্থা ছিল তাও পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়।
সংক্রমণের এ সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ার পেছনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চলাকেই বেশি দায়ী করছেন ওই জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, গত কয়েক মাস ধরে মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কোনো তাগিদ নেই। শুধু তাই নয়, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত। ব্যক্তি পর্যায়ে কেউই স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করছেন না, মাস্ক পরা থেকে শুরু করে হাত ধোয়া কোনো কিছুই তোয়াক্কা করছেন না। এছাড়া স্থানীয় সরকার নির্বাচনসহ বিভিন্ন পর্যায়ে নির্বাচন চলছে। বাণিজ্য মেলাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে জনসমাগম হচ্ছে। এসব জায়গায় স্বাস্থ্যবিধি ব্যাপকভাবে উপেক্ষিত হচ্ছে। এসব কারণে সংক্রমণের গতি দ্রুত বাড়ছে।
এ বিষয়ে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ড. বিজন কুমার শীল বলেন, আমরা যেটা দেখছি সেটা হলো, করোনার গতি বাড়ার ক্ষেত্রে যতক্ষণ প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা না যায় ততদিন সেটা বাড়তেই থাকে। স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করা না হলে বাড়ার এ গতি অব্যাহত থাকবে। স্বাস্থ্যবিধি যত উপেক্ষিত হবে সংক্রমণের গতি ততই বাড়তে থাকবে। করোনার গতিবিধি যেটা দেখা গেছে তা বাড়তে বাড়তে এক পর্যায়ে চূড়ান্ত অবস্থানে চলে যায়। তারপর কিছু দিন স্থির থেকে কমতে থাকে। সেক্ষেত্রে মধ্য ফেব্রুয়ারির পর এই বাড়ার গতি হয় তো কমতে পারে। তবে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে প্রতিরোধের ব্যবস্থা নিতে হবে।
এদিকে দেশে করোনার সংক্রমণ বাড়তে থাকায় বিষয়টি নিয়ে কিছুটা চিন্তিত বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
তিনি বলেন, করোনা এখন ঊর্ধ্বমুখী। আমরা কিছুটা চিন্তিত তবে শঙ্কিত নই। আমরা প্রস্তুত আছি।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবকে মসজিদ-শপিংমলসহ সব ক্ষেত্রে মাস্ক পরা আবারও বাধ্যতামূলক করতে চিঠি পাঠিয়েছে সরকার।
চিঠিতে বলা হয়, সাম্প্রতিককালে সারাদেশে কোভিড-১৯ আক্রান্তের হার দ্রুত গতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে ও জনগণের মধ্যে মাস্ক পরিধান এবং স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণে যথেষ্ট শৈথিল্য পরিলক্ষিত হচ্ছে মর্মে সরকারের উচ্চ মহলে আলোচনা হচ্ছে। ১৪ জুন কোভিড-১৯ জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সভায় নেওয়া সুপারিশ প্রতিপালনের জন্য এবং কোভিড প্রতিরোধকল্পে নির্দেশনাগুলো বাস্তবায়নের জন্য অনুরোধ করা হলো—
১. স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য জনসাধারণকে উদ্বুদ্ধ করতে সব প্রকার গণমাধ্যমে অনুরোধ জানাতে হবে।
২. সব ক্ষেত্রে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা, ‘নো মাস্ক নো সার্ভিস’ নীতি প্রয়োগ করা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, জনসমাগম যথাসম্ভব বর্জন করতে হবে।
৩. ধর্মীয় প্রার্থনার স্থানসমূহে (যেমন-মসজিদ, মন্দির, গির্জা ইত্যাদি) মাস্ক পরা ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।
৪. জ্বর, সর্দি, কাশি বা কোভিড-১৯ এর উপসর্গ দেখা দিলে কোভিড টেস্ট করার জন্য উদ্বুদ্ধ করতে হবে।
৫. দোকান, শপিংমল, বাজার, ক্রেতা-বিক্রেতা, হোটেল-রেস্টুরেন্ট সবাইকে বাধ্যতামূলকভাবে মাস্ক পরিধান করতে হবে। অন্যথায় তাকে আইনানুগ শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে।
৬. স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন এবং মাস্ক পরিধানের বিষয়ে সব মসজিদে জুমার নামাজে খুতবায় ইমামরা সংশ্লিষ্টদের সচেতন করবেন।
উল্লিখিত বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য চিঠিতে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয় চিঠিতে।
গতকাল মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো করোনাবিষয়ক নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে, দেশে গতকাল করোনায় ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে দেশে করোনায় মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৯ হাজার ১৪৫ জনে।
এ সময়ে আক্রান্ত হয়েছেন ২ হাজার ৮৭ জন। মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৯ লাখ ৬৯ হাজার ৩৬১ জনে। শনাক্তের হার ১৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ।