
ছবি : সংগৃহীত
আফিমের বড় চালান এনে ঢাকায়
বাজারজাত করার চেষ্টা করছিলেন তারা। এরমধ্যেই গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে বিষয়টি জানতে
পেরে অভিযান চালায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। গ্রেপ্তার হন দুজন।
এইসব মুখোশধারী অপরাধীদের
কেউ জনশক্তি রপ্তানির ব্যবসা করেন, কেউ আবার একটি গ্রুপ অব কোম্পানির প্রকল্প ব্যবস্থাপক।
কিন্তু এসবের আড়ালে তারা চালিয়ে আসছিলেন মাদকের রমরমা কারবার।
দুইজনকে গ্রেপ্তার করার পর
তাদের কাছে পাওয়া যায় তিন কেজি আফিম। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত ১০ বছরে আফিমের এত বড় চালান
আর ধরা পড়েনি। এগুলো ওষুধের কাঁচামাল বলে আনা হয়েছিল ঢাকায়।
শুক্রবার (১ জুলাই) রাজধানীর
পুরান পল্টন লেন ও বনশ্রী আবাসিক এলাকায় এ অভিযান চালানো হয়। এরপর এব্যাপারে বিস্তারিত
জানাতে শনিবার (২ জুলাই) রাজধানীর তেজগাঁওয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ঢাকা
মহানগর (উত্তর) কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
এতে অধিদপ্তরের ঢাকা বিভাগীয়
কার্যালয়ের অতিরিক্ত পরিচালক জাফরুল্লাহ কাজল বলেন, ‘ক’ শ্রেণিভুক্ত মাদক আফিমের বড় চালান ঢাকায় আসার খবর পেয়ে গোয়েন্দা
নজরদারি বাড়ানো হয়। অধিদপ্তরের পরিদর্শক শাহীনুল কবীর ক্রেতার ছদ্মবেশে অভিযান চালান।
প্রথমে পুরান পল্টন লেন (ভিআইপি
রোড) থেকে দুই কেজি আফিমসহ আবুল মোতালেবকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তার দেওয়া তথ্যে বনশ্রী
থেকে জাহাঙ্গীর সিদ্দিক ভূঁইয়াকে গ্রেপ্তার করেন অভিযান সংশ্লিষ্টরা। তাদের মধ্যে মোতালেবের
বাড়ি নোয়াখালীতে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে জনশক্তি রপ্তানি ব্যবসায় জড়িত। আর জাহাঙ্গীরের
বাড়ি জামালপুরে। তিনি একটি গ্রুপ অব কোম্পানির প্রকল্প ব্যবস্থাপক। তাদের কাছে পাওয়া
আফিমের মধ্যে দুই কেজির চালানটি শপিং ব্যাগের ভেতর একটি প্লাস্টিকের বয়োমের মধ্যে পলিথিন
দিয়ে মোড়ানো ছিল। অপর চালানের এক কেজি আফিম ছিল পলিথিনে মোড়ানো। উদ্ধার আফিমের আনুমানিক
দাম পৌনে তিন কোটি টাকা।
এসব আসলেই আফিম কি-না, তা জানতে
রাসায়নিক পরীক্ষা করা হয়। সেখানে নিশ্চিত হওয়া যায়, এগুলো ওষুধের কাঁচামাল নয়, আফিম।
অতিরিক্ত পরিচালক আরো জানান, আফিম চালানের রুট ও জড়িতদের ব্যাপারে গ্রেপ্তার দুইজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তারা জানিয়েছেন, চালান এসেছে ভারত থেকে। ফেনী থেকে তা ঢাকায় পাঠানো হয়।
তবে ধারণা করা হচ্ছে, আফগানিস্তান
থেকে এসেছে এই চালান। পুরো বিশ্বে আফিমের সবচেয়ে বড় উৎস এই দেশটি। সেখান থেকে নানা
হাত ঘুরে ভারত হয়ে এই চালান ঢাকায় পৌঁছায়। এই চোরাচালানের সাথে জড়িত আরো দুইজনের নাম
পাওয়া গেছে। তাদের আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে। গ্রেপ্তারদের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ
করা হলে আফিমের উৎস, গন্তব্য এবং এই নেটওয়ার্কের ব্যাপারে আরো তথ্য পাওয়া যাবে বলে
আশা করা হচ্ছে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে
তিনি বলেন, আফিম সরাসরি সেবন করা হয়। অথবা প্রক্রিয়াজাত করে হেরোইন, ইয়াবা ও ফেনসিডিলের
মতো ভয়ংকর মাদক তৈরিতে ব্যবহার করা যায়। আফগানিস্তান ছাড়াও পাকিস্তান ও ইরানে এর চাষাবাদ
হয়। আফিম সেবনে শ্বাসকষ্ট হতে পারে, সেবনকারী অচেতন হয়ে পড়তে পারেন। মুখ ও নাক শুকিয়ে
যাওয়া, বমি ভাব, কোষ্ঠকাঠিন্য ইত্যাদির পাশাপাশি বেশি পরিমাণ সেবনে মৃত্যুও ঘটতে পারে।
২০২০ সাল থেকে আফগানিস্তানে
নতুন করে আফিম চাষ হচ্ছে। এর সাথে তালেবানের সংশ্লিষ্টতার কোনো তথ্য পাওয়া গেছে কি-না,
জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।