
গত ২৫ জুন বসানো হয়েছে রূপসা রেল সেতুর সর্বশেষ স্প্যান। ছবি: সংগৃহীত
দেশে একের পর একের উন্নয়নের রূপরেখা বাস্তবায়িত হতে চলেছে। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর থেকেই যেনো উন্নয়নের ছোঁয়ায় বইছে দক্ষিণা বাতাস। এরইমধ্যে সুখবর এলো- রূপসা নদীর উপর রেলসেতু নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ হয়েছে। এই বছরের সেপ্টেম্বরেই প্রকল্পের কাজ বুঝে নেবে রেল মন্ত্রণালয়। আর ডিসেম্বরে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। শিগগিরই খুলছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের খুলনা-মোংলা রেলপথ।
সরেজমিনে দেখা গেছে, গত ২৫ জুন রূপসা রেলসেতুর সপ্তম ও সর্বশেষ স্প্যান বসানো হয়েছে। এখন চলছে ‘ফিনিশিং ওয়ার্ক’। এই রেলপথ চালু হলে মোংলার সাথে খুলনার মানুষের যোগাযোগ সহজ এবং পণ্যবাহী ট্রেন চলাচলের কারণে আরো গতিশীল হবে মোংলা বন্দর।
রূপসা রেল সেতুর ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিলেশন ম্যানেজার সুব্রত জানান, রূপসা রেলসেতু নির্মাণ কাজের মেয়াদ ছিল চলতি বছরের জুন পর্যন্ত। ইতোমধ্যে কাজ প্রায় সম্পন্ন হয়েছে। সর্বশেষ স্প্যান বসানো হয়েছে গত ২৫ জুন। নদীর উপরে মোট সাতটি স্প্যান বসানো হয়েছে। আর নদীর দুই পাশে রেল সেতুর সংযোগে দুই কিলোমিটার করে চার কিলোমিটার সেতু তৈরি করা হয়েছে। এখন শুধু পেইন্টিং ও ফিনিশিং ওয়ার্ক বাকি রয়েছে।
রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. হুমায়ুন কবীর বলেন, আগামী সেপ্টেম্বরে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রেল সেতুর কাজ আমাদেরকে বুঝিয়ে দেবে। রূপসা সেতুর উপর দাঁড়ালে এখন সম্পূর্ণ রেল সেতু দেখা যাচ্ছে। ২০১৭ সালের ১৫ অক্টোবর রূপসা রেল সেতুর কাজ শুরু হয়েছিল।
রেল সচিব জানান, খুলনা-মোংলা রেল লাইন নির্মাণ কাজ দ্রুতগতিতে এগোচ্ছে। রেল লাইন বসাতে আর বেশি সময় লাগবে না। ছোটখাটো কয়েকটি সেতু এবং আন্ডারপাস নির্মাণের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। আগামী তিন/ চার মাসের মধ্যে এসব কাজ শেষ হয়ে যাবে। একইসাথে টেলিকমিউনিকেশন ও সিগন্যালিং এর কাজও সম্পন্ন করা হবে।
তিনি আরো জানান, প্রকল্পের নির্ধারিত মেয়াদ আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই সকল কাজ সম্পন্ন হবে। প্রকল্পের কাজ শেষ হলে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ট্রায়াল রান করার সম্ভাবনা রয়েছে। এরপর আলোচনা সাপেক্ষে এই রেললাইন উদ্বোধনের তারিখ নির্ধারণ করা হবে।
রেল মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১০ সালে খুলনা-মোংলা রেল লাইন নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। প্রকল্পটির কাজ ৩টি ভাগে বিভক্ত। এর মধ্যে রয়েছে রূপসা নদীর উপর রেল সেতু নির্মাণ, মূল রেললাইন স্থাপন এবং টেলিকমিউনিকেশন ও সিগন্যালিং স্থাপন। খুলনার ফুলতলা থেকে মোংলা পর্যন্ত এই রেলপথের দৈর্ঘ্য ৮৬ দশমিক ৮৭ কিলোমিটার।
রেলসেতুর দৈর্ঘ্য পাঁচ দশমিক ১৩ কিলোমিটার। সেতুটির উপরিভাগ তৈরি করা হয়েছে স্টিলের গার্ডার এবং আরসিসি ডেকের সমন্বয়ে। এছাড়া ২১টি ছোটখাটো সেতু ও ১১০টি কালভার্ট নির্মাণ এবং খুলনার ফুলতলা থেকে মোংলা পর্যন্ত আটটি স্টেশন নির্মাণ কাজ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান লারসেন অ্যান্ড টুব্রো রূপসা নদীর উপর রেল সেতু নির্মাণ কাজ করছে। বাকি কাজ করছে ভারতীয় প্রতিষ্ঠান ইরকন ইন্টারন্যাশনাল। জমি অধিগ্রহণ, রেললাইন ও রেল সেতু নির্মাণসহ প্রকল্পের সব কাজের ব্যয় ধরা হয় চার হাজার ২৬০ কোটি টাকা। এ রেল সেতুটি হবে হবে দেশের দীর্ঘতম রেলসেতু। ভারত সরকারের ঋণ সহায়তা চুক্তির আওতায় বাস্তবায়ন হচ্ছে প্রকল্পটি।
রেল সচিব বলেন, খুলনা-মোংলা রেল লাইন নির্মাণ হলে মোংলা বন্দরের সঙ্গে খুলনাসহ সারাদেশের রেল সংযোগ তৈরি হবে। একইসাথে পদ্মা রেল সেতু চালু হলে মোংলা থেকে মালামালবাহী ট্রেন খুলনা-যশোর হয়ে পদ্মা সেতু দিয়ে সরাসরি ঢাকায় যাবে। এতে মোংলা বন্দরের কার্যক্রম আরো গতিশীল হবে।