
প্রতীকী ছবি
একদিকে ভ্যাপসা গরম। অন্যদিকে বিদ্যুতের ক্রমাগত লোডশেডিং। সবমিলিয়ে গত কয়েকদিন ধরে অতিষ্ঠ ঢাকাবাসী। গত ৩-৪ দিন ধরে প্রায় সারাদিনই কয়েকবার লোডশেডিংয়ের কবলে পড়তে হচ্ছে রাজধানীর বাসিন্দাদের।
গতকাল মঙ্গলবার (৫ জুলাই) রাজধানীজুড়ে বেশ কয়েকবার লোডশেডিং হয়েছে। দীর্ঘ সময়ের লোডশেডিংয়ে স্বাভাবিক জীবন-যাপন কঠিন হয়ে পড়েছে।
বাংলামটর এলাকার বাসিন্দা রনি বলেন, কিছুক্ষণ পর পরই বিদ্যুত চলে যাচ্ছে। একবার বিদ্যুত গেলে দীর্ঘসময় পর আসে। গরমে ঘরে থাকা যাচ্ছে না। মোমবাতি জ্বালিয়ে ছেলে মেয়েদের পড়াশোনা করতে হচ্ছে। কয়েকদিন ধরেই এই অবস্থা। এভাবে আর কতোদিন ভুগতে হবে জানি না। আমরা এসব ভোগান্তি থেকে মুক্তি চাই।
এর আগে, ঢাকার মুদগা-মাণ্ডা এলাকায় গত রবিবার (৩ জুলাই) রাত ২টা থেকে ভোর ৪টা, মালিবাগ-গুলবাগ এলাকায় গত সোমবার (৪ জুলাই) সকাল ৯টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত এবং আজিমপুরে বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত লোডশেডিং হয়েছে। দেশের উত্তরাঞ্চলে লোডশেডিং হচ্ছে দিনে ৬ থেকে ৭ ঘণ্টা। কোথাও কোথাও ১০ থেকে ১২ ঘণ্টাও বিদ্যুৎ থাকছে না।
বলা হচ্ছে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির দাম হু হু করে বাড়ছে। তাই আপাতত এলএনজি আমদানি না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জ্বালানি মন্ত্রণালয়। এতে গ্যাস ঘাটতি বেড়ে যাওয়ায় লোডশেডিংয়ের কবলে পড়েছে সারা দেশ। কারণ দেশের সিংহভাগ বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয় গ্যাস থেকে। দুঃসংবাদ হচ্ছে, শিগগিরই এ ঘাটতি পূরণের কোনো সম্ভাবনা নেই। তবে দেশীয় উৎপাদন বাড়িয়ে ঘাটতি মেটানোর কথা জানিয়েছে পেট্রোবাংলা।
যদিও তা দ্রুত পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। বিপিডিবির এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সময়ের আলোকে জানান, সোমবার সারা দেশে বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১৪ হাজার মেগাওয়াট, সক্ষমতা ছিল ১২৮০০ মেগাওয়াট। আর রাজধানী ঢাকায় চাহিদা ছিল সাড়ে ৩ হাজার মেগাওয়াট। চাহিদার চেয়ে উৎপাদন ঘাটতি রয়েছে প্রায় ১২ হাজার ২০০ মেগাওয়াট। বড় শহর ছাড়া জেলা শহরগুলোতে বেশি লোডশেডিং হবে। এ ছাড়া ঢাকায় প্রায় ২০০ মেগাওয়াট লোডশেডিং হবে। গ্যাস সরবরাহ বাড়লে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়বে। তখন লোডশেডিং হবে না। তবে কবে নাগাদ সরবরাহ বাড়তে পারে তা বলতে পারেননি তিনি।
এ বিষয়ে রবিবার (৩ জুলাই) রাতে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ তার ভ্যারিফায়েড ফেসবুক পেজে লিখেছেন, গ্যাসস্বল্পতার কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এতে অনেক জায়গাতেই বিদ্যুৎ সরবরাহ বিঘ্নিত হচ্ছে। গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক হলে বিদ্যুৎ উৎপাদন পুনরায় স্বাভাবিক হবে। যুদ্ধের প্রভাবে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির উচ্চমূল্য ও সরবরাহ অন্যান্য সব দেশের মতো আমাদেরও সমস্যায় ফেলেছে। এ পরিস্থিতিতে আপনাদের সাময়িক অসুবিধার জন্য আন্তরিক দুঃখ প্রকাশ করছি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান বলেন, যুদ্ধের প্রভাবে জ্বালানির বাজার এখন অস্থির। বিশ্বের অন্যান্য দেশের চেয়ে আমাদের অবস্থা আলাদা নয়। সুতরাং পরিস্থিতি সামাল দিতে আমরা দেশীয় উৎপাদন বাড়ানোর চেষ্টা করছি।
কবে নাগাদ দেশীয় গ্যাস পাওয়া যাবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি রাতারাতি বাড়ানো সম্ভব নয়। আমরা কাজ করছি। শ্রীকাইলে সম্প্রতি কাজ শুরু করেছি। চলতি বছরের মধ্যে সেখান থেকে গ্যাস পাওয়া যাবে বলে আমরা আশা করছি। তিনি বলেন, সারাবিশ্বের মতো আমাদেরও এখন সাশ্রয়ী হতে হবে। যতটা সম্ভব অপচয় বন্ধ করতে হবে। প্রসঙ্গত, গ্যাস ঘাটতির এ প্রভাব শুধু বিদ্যুতে নয়- সার, শিল্পসহ অন্য খাতেও পড়বে বলে শঙ্কা সংশ্লিষ্টদের।