Logo
×

Follow Us

বাংলাদেশ

বরিশালে দুই দিনে সড়কে ঝরলো ১২ প্রাণ

Icon

বরিশাল প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২১ জুলাই ২০২২, ১৮:৪৯

বরিশালে দুই দিনে সড়কে ঝরলো ১২ প্রাণ

বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কের উজিরপুরে বাস-মাই‌ক্রোবা‌সের মুখোমুখি সংঘর্ষ। ছবি: বরিশাল প্রতিনিধি

গত দুই দিনে বরিশালে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ১২ জন। গতকাল বুধবার (২০ জুলাই) বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়কের বাকেরগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের সামনে বিআরটিসির বাস একটি ব্যাটারি চালিত ইজিবাইককে চাপা দিলে মা-মেয়েসহ ৬ জনের মৃত্যু হয়।

এই ঘটনার ২৪ ঘণ্টা না যেতেই বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কে আবারো সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন মাইক্রোবাসের ছয় যাত্রী। এদের মধ্যে চারজনের মৃত্যু হয় ঘটনাস্থলে। এই ঘটনায় আহত হয়েছেন মাইক্রোবাস চালক এবং বাসের যাত্রীসহ ১২ জন।

মহাসড়কের উজিরপুর উপজেলার নতুন শিকারপুর এলাকায় একটি মাইক্রোবাসের চাকা ফেটে গেলে, বিপরীত দিক থেকে আসা মোল্লা ট্রাভেলসের একটি বাস সেটিকে ধাক্কা দেয়। ঘটনার পর বাসের চালক ও হেলপার পালিয়ে গেলেও গৌরনদী হাইওয়ে থানা পুলিশ ঘাতক বাসটি আটক করেছে। এ নিয়ে দুদিনে বরিশালে পৃথক দুর্ঘটনায় ১২ জন নিহত হয়েছে।

নিহতরা হলেন- মাইক্রোবাসের যাত্রী গাজীপুর জেলার কৃষ্ণাপুর এলাকার উজির আলীর ছেলে রুহুল আমিন (৪৭), গাজীপুরের কোনাবাড়ী এলাকার আবদুর রহমান (৪৬), গাজীপুর জয়টেক কোনাবাড়ী ১১ নম্বর ওয়ার্ডের তমিজ উদ্দিনের ছেলে মো. হাসান (৩৬), টেলিনা মির্জাগঞ্জ বামরাইল এলাকার আবদুল মান্নান আকনের ছেলে নুরুল আমিন (৪৭), কোনাবাড়ি গাজীপুর এলাকার আবদুল জব্বার এর ছেলে শহীদুল ইসলাম (৪০) ও একই হারুন অর রশিদ (৪০)।

এদের মধ্যে দুপুর দুইটার দিকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর আহত শহিদুল ইসলাম এবং সন্ধ্যা পৌনে ৬টায় হারুন অর রশিদ নামের অপর একজনের মৃত্যু হয়।

বিষয়টি নিশ্চিত করে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ এসআই আব্দুর রহমান জানান, সড়ক দুঘর্টনায় বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শহীদুলের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার আবুল কালাম জানান, দুর্ঘটনায় আহত হারুন অর রশিদ সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। নিহত সবাই মাইক্রোবাসের যাত্রী ছিলেন বলে জানা গেছে।

দুঘর্টনায় আহতরা হলেন, গাজীপুর জয়টেক কোনাবাড়ী সিটি কর্পোরেশন ১১ নম্বর ওয়ার্ডের লিটন (৩০), নুরুল ইসলাম (৪০), লামিয়া ইসলাম (৩০), আনসার আলী খান (৬০), মাইক্রোবাস চালক আছুর উদ্দিন রানা (৫০)। মোল্লা ট্রাভেলস এর যাত্রী পটুয়াখালী মির্জাগঞ্জের লিমা (২০), রিমা আক্তার (১৭), ইমরান (২২), হামিদা বেগম (৪৮), সুফিয়া খানম (৫০)।

উজিরপুর মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মোমিন উদ্দিন জানান, বরিশাল থেকে মোল্লা পরিবহনের একটি বাস ঢাকার সায়েদাবাদের উদ্দেশ্যে যাচ্ছিলো। অপরদিকে ঢাকা থেকে যাত্রী নিয়ে একটি মাইক্রোবাস (ঢাকা-মেট্রো-চ-২৯-২৬৫৩) কুয়াকাটার উদ্দেশে যাচ্ছিলো। মাইক্রোবাসটি বৃহস্পতিবার বেলা ১২টার দিকে উজিরপুরের নতুন শিকারপুর সংলগ্ন মহাসড়ক অতিক্রমকালে একটি চাকা ফেটে গেলে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার মধ্যে বন্ধ হয়ে যায়।

ঠিক সেই মুহুর্তে দ্রুতগামী মোল্লা ট্রাভেল্স কোম্পানির বাসটি মাইক্রোবাসটিকে ধাক্কা দেয়। এতে মাইক্রোবাসটি দুমড়ে-মুচড়ে যায়। ঘটনাস্থলেই নিহত হয় মাইক্রোবাসের একজন যাত্রী। স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধার করে উজিরপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মাইক্রোবাসের আরো ৩ জন যাত্রীকে মৃত ঘোষণা করেন।

আহতদের মধ্যে ১০ জনকে শের-ই বাংলা মেডিকেল ও উজিরপুর স্বাস্থ্যকম্পেক্সে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেয়ার পর শহীদুল ইসলাম এবং হাসপাতালে ভর্তির পরে হারুন অর রশিদ নামের আরেকজন যাত্রীর মৃত্যু হয়। 

উজিরপুর উপজেলার শিকারপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ঢাকার গাজীপুর থেকে ১৫ জনের মতো যাত্রী নিয়ে একটি মাইক্রোবাস বরিশালের উদ্দেশে যাচ্ছিল। বেলা সোয়া ১২টার দিকে উজিরপুরের নতুন শিকারপুরে পৌঁছলে মাইক্রোবাসের চাকা ফেটে যায়। এতে চালক নিয়ন্ত্রণ হারান। এ সময় বিপরীত দিক থেকে আসা ঢাকাগামী মোল্লা পরিবহনের একটি বাসের সঙ্গে মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে মাইক্রোবাসটি দুমড়েমুচড়ে যায়। ঘটনাস্থলেই চারজন নিহত হন।

মাইক্রোবাসের আহত যাত্রীরা বলেন, যাত্রী নিয়ে বৃহস্পতিবার সকাল ৬টায় গাজীপুরের কোনাবাড়ী থেকে কুয়াকাটার উদ্দেশে রওনা দেয় মাইক্রোবাসটি। দুর্ঘটনাকবলিত স্থানে আসার পর মাইক্রোবাসের একটি চাকা পাংচার হলে চালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন। সে সময় বিপরীত দিক থেকে আসা যাত্রীবাহী বাসটির সঙ্গে মাইক্রোবাসের সংঘর্ষ হয়।

হতাহতদের প্রতিবেশী উজিরপুর উপজেলার জয়শ্রী গ্রামের গৃহবধূ ইয়াসমিন জানান, মাইক্রোবাসের যাত্রীরা সবাই একে অপরের স্বজন। তারা সম্পর্কে চাচাতো, মামাতো ও ফুফাতো ভাই। পদ্ম সেতু দেখে কুয়াকাটায় যাওয়ার উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলেন।

এদিকে, বুধবার বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়কের বাকেরগঞ্জে যাত্রীবাহী বিআরটিসি বাসের সঙ্গে ব্যাটারিচারিত তিনচাকার যানের মুখোমুখি সংঘর্ষে মা-মেয়ে এবং ব্যাটারি চালিত অটোরিক্সার চালকসহ ছয়জন নিহত হয়। ওই ঘটনায় বরিশালের জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দেন। এই ঘটনার ২৪ ঘণ্টা না যেতেই উজিরপুরে মহাসড়কে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় আরো ছয় জনের মৃত্যু হলো।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫