Logo
×

Follow Us

বাংলাদেশ

লোডশেডিংয়ে নাকাল মানুষ

Icon

মাহমুদ সালেহীন খান

প্রকাশ: ২৬ জুলাই ২০২২, ১২:২৬

লোডশেডিংয়ে নাকাল মানুষ

প্রতীকী ছবি

ষড় ঋতুর রূপ বৈচিত্র্যে আষাঢ় শেষ হয়ে শ্রাবণে পড়েছে। এখন যেখানে আকাশে কালো মেঘের খেলা এবং সেই সঙ্গে রিমঝিম বৃষ্টি হওয়ার কথা, সেখানে প্রকৃতিতে বিরাজ করছে তীব্র গরম। আর এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে লোডশেডিং। দুই-তিন ঘণ্টা করেও হচ্ছে লোডশেডিং। অথচ সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে ১ ঘণ্টার বেশি লোডশেডিং হবে না। 

জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একটি সিন্ডিকেট বিদ্যুৎ খাতকে তলাবিহীন ঝুড়িতে পরিণত করেছে। তাদের মতে, সামনে অপেক্ষা করছে আরও ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি।

রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলায় লোডশেডিংয়ে নাকাল মানুষ। সরকারের পক্ষ থেকে ১ ঘণ্টার বেশি লোডশেডিং হবে এমনটা জানানো হলেও বাস্তবতা ভিন্ন। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত লোডশেডিংয়ের মধ্যেই কাটাতে হচ্ছে সবাইকে। নির্দেশনা মানছে না খোদ সরকারেরই ৬টি বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি। ইচ্ছেমতো লোডশেডিংয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে দেশের মানুষ।

এক ঘণ্টার বদলে দীর্ঘ সময় লোডশেডিংয়ের ব্যাপারে পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, কারিগরি ত্রুটির কারণে কোথাও লোডশেডিং একটু বেশি হতে পারে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে ইতোমধ্যে সব ধরনের জ্বালানির দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। বাংলাদেশের বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো তেল, গ্যাসের উপর নির্ভরশীল। আর মূল সমস্যা ওখানেই। সরকার চাচ্ছে গ্রাহকরা যাতে কোনো ধরনের ভোগান্তিতে না পড়ে। সে অনুযায়ীই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

জানা গেছে, চলতি মৌসুমে বিদ্যুতের চাহিদা ১৫ হাজার মেগাওয়াট। সে হিসাবেও চাহিদার তুলনায় বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষমতা রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জ্বালানি সংকটের কারণে এই সক্ষমতা কাজে লাগানো যাচ্ছে না। 

বিদ্যুৎ বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ববাজারে সব ধরনের জ্বালানির দাম বাড়তি। গ্যাস না পেয়ে চালানো হচ্ছে চড়া দামের তেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র। এতে করে শহরের অংশে পুরোপুরি বিদ্যুৎ পেলেও গ্রামাঞ্চলে লোডশেডিং দিতে হচ্ছে।

এদিকে গত কয়েক দিন ধরেই বেড়ে চলেছে গরম। এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে লোডশেডিংও। অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে জনজীবন। গ্রাম-গঞ্জসহ পৌর এলাকায় সর্বত্রই ভ্যাপসা গরম ও ঘন ঘন বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে অস্বস্তিতে পড়েছে সাধারণ মানুষ। অনেক এলাকায় দিনের বেলা বিদ্যুৎ নেই বললেই চলে। সন্ধ্যায় বিদ্যুৎ এলেও কিছুক্ষণ পর চলে যাওয়ায় অতিষ্ঠ গ্রামের মানুষ।

অন্যদিকে প্রচণ্ড গরমের কারণে শিশু ও বৃদ্ধদের অনেকেই জ্বর, সর্দি, কাশি ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। ফলে স্থানীয় হাসপাতালে স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি সেবাগ্রহীতার ভিড় বাড়ছে। সব মিলিয়ে প্রচণ্ড গরম ও লোডশেডিংয়ে উপজেলার সর্বত্রই জনজীবনে নেমে এসেছে চরম অস্বস্তি ও দুঃসহ যন্ত্রণা। 

অসহনীয় লোডশেডিংয়ের কথা বলতে গিয়ে শান্তিনগরের বাসিন্দা কথা ইসলাম বলেন, ‘গত সোমবার সন্ধ্যায় একবার, রাত ১২টার দিকে একবার, এরপর রাত আড়াইটার দিকে আবারও বিদ্যুৎ চলে যায়।’ 

একই অভিযোগ করেন আজিমপুর এলাকার বাসিন্দা সৌরভ। তিনি বলেন, ‘রাত তিনটার দিকে একবার আবার ভোর ৫টার দিকে বিদ্যুৎ চলে যায়।’ রায়েরবাজার ও মোহাম্মদপুর এলাকা থেকেও একই ধরনের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

সূত্র অনুযায়ী, দেশে মোট ছয়টি বিদ্যুৎ কোম্পানি বিদ্যুৎ সরবরাহ করে থাকে। এর মধ্যে রয়েছে- বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি), ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ওজোপাডিকো), নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড (নেসকো), পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি), ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ডিপিডিসি) ও ঢাকা ইলেক্ট্রিসিটি পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (ডেসকো)। এর মধ্যে সবচেয়ে গ্রাহক সংখ্যা বেশি আরইবির। মোট ৪ কোটি ২২ লাখ গ্রাহকের মধ্যে ৩ কোটি ৩০ লাখ গ্রাহকই পল্লী বিদ্যুতের। দিনে যে পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়, তার অর্ধেকের বেশি ব্যবহার করেন এই গ্রাহকরা।

তথ্য মতে, সবচেয়ে বড় বিতরণ সংস্থা আরইবির গ্রাহকরাই বেশি লোডশেডিংয়ের মধ্যে পড়েছেন। সংস্থাটির বিদ্যুৎ সরবরাহ প্রতিবেদন অনুযায়ী, যেসব এলাকায় স্থানীয়ভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন কম হচ্ছে, এমন এলাকাগুলোতে লোডশেডিং বেশি হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে- নেত্রকোনা, জামালপুর, কিশোরগঞ্জ, শেরপুর ও টাঙ্গাইল। এ ছাড়াও লোডশেডিং হচ্ছে- বরিশাল, ঝালকাঠি, রাজশাহী, রংপুর ও সিলেটের প্রায় সব এলাকায়। এসব এলাকায় স্থানীয়ভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন কম। আবার জাতীয় গ্রিড থেকেও প্রয়োজনীয় সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে না। তবে চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগে তুলনামূলক লোডশেডিং কম হচ্ছে। বিতরণ সংস্থা আরইবি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রতিদিন যে পরিমাণ বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়, তার মধ্য থেকে ৫০০ থেকে ৮৫০ মেগাওয়াট পর্যন্ত ঘাটতি    থাকছে। যে কারণে দিনে তিন থেকে পাঁচ ঘণ্টা লোডশেডিং দিতে হচ্ছে। 

এ প্রসঙ্গে আরইবির চেয়ারম্যান মো. সেলিম উদ্দিন গণমাধ্যমকে জানান, মূলত যেসব স্থানে বিদ্যুৎ উৎপাদন কম হচ্ছে, সেসব জায়গায় কিছু সময় লোডশেডিং দিতে হচ্ছে। আমরা চেষ্টা করছি বিষয়টি সহনীয় পর্যায়ে রাখতে। জানা গেছে, ১৪ জুলাই বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা ছিল ১২ হাজার ৩০০ মেগাওয়াট, ১৫ জুলাই ১২ হাজার ৯০০ মেগাওয়াট, ১৬ জুলাই ১৩ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট। বিদ্যুতের চাহিদা ক্রমাগত বেড়ে যাওয়ায় লোডশেডিংয়ের মাত্রাও বাড়তে শুরু করেছে।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫