বন্যায় সুনামগঞ্জে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ২ কোটি টাকার বেশি ক্ষতি

জাহাঙ্গীর আলম ভুঁইয়া, সুনামগঞ্জ
প্রকাশ: ২৭ জুলাই ২০২২, ১৫:২৯

বন্যায় শতভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নষ্ট। ছবি: সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি
হাওরাঞ্চলে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার কারণে পেছানো হয়েছে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা। বন্যার পানিতে দুই সপ্তাহের বেশি সময় ডুবে ছিল সুনামগঞ্জ জেলার প্রায় সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এতে বইপত্রসহ শিক্ষা সামগ্রী পানিতে নষ্ট হওয়ায় অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে স্কুল ও কলেজপড়ুয়া শিক্ষার্থীরা। ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তালিকাসহ চাহিদাপত্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়।
শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকরা স্মরণকালের এ ভয়াবহ বন্যায় শতভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নষ্ট হওয়া শিক্ষা উপকরণ সরবরাহের পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো সংস্কারের জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, করোনার পর বন্যা থাবা বসিয়েছে সুনামগঞ্জের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে। বন্যার পানিতে জেলার আসবাবপত্র, পাঠ্যবই, গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্রসহ শিক্ষা খাতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দুই কোটি টাকা ছাড়িয়েছে।
সোহাগ মিয়া, আমিন উদ্দিনসহ অনেক শিক্ষার্থীই জানান, স্কুল বন্ধ থাকায় পাঠ্যদানও বন্ধ। ফলে আমাদের লেখাপড়ায় অনেক ক্ষতি হচ্ছে। বন্যায় বই-খাতা পানিতে ভিজে নষ্ট হয়েছে, স্কুলও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই বিষয়ে দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত।
এ দিকে রফিকুল ইসলাম, রুবেল আহমদসহ কয়েকজন অভিভাবক জানান, করোনার পর বন্যায় শিক্ষা খাতের যে ক্ষতি হয়েছে, তা সামাল দেওয়া কঠিন। যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো সংস্কার করে পাঠদান সচল করার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
বালিজুরী ইউনিয়নের নয়াহাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক এনামুল হক জানান, তার বিদ্যালয়ের ভেতরে পানি প্রবেশ করায় আসবাবপত্র, বিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নষ্ট হয়েছে।
তাহিরপুর উপজেলার দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলী আহমদ মুরাদ বলেন, এ ইউনিয়নের প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বসতবাড়ি বন্যায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো দ্রুত মেরামত ও পানিতে ভিজে নষ্ট হয়ে যাওয়া শিক্ষাসামগ্রী দেওয়া প্রয়োজন।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার এস এস আব্দুর রহমান জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ক্ষতির পরিমাণ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। বন্যায় জেলার ১৪৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এবারের বন্যায় শিক্ষা খাতের প্রায় সব প্রতিষ্ঠানের আসবাবপত্র, নথিপত্রের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এছাড়াও অনেক প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোর ক্ষতি হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির তালিকাসহ চাহিদাপত্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. জাহাঙ্গীর হোসেন জানিয়েছেন, বন্যায় সুনামগঞ্জের ২৩৩টি মাধ্যমিক স্কুল, ৯২টি মাদ্রাসা ও ৩৩টি কলেজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অবকাঠামো, আসবাবপত্র, শেখ রাসেল ল্যাবের ইলেকট্রনিক ডিভাইস ও সরঞ্জামের ক্ষতি হয়েছে। অন্যদিকে বন্যার পানিতে অনেক শিক্ষার্থীর বই নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে মন্ত্রণালয়ে ৫০ হাজার নতুন বইয়ের চাহিদা পাঠানো হয়েছে। বন্যার কারণে এসএসসি ও দাখিল পরীক্ষা পেছানো হয়েছে।