তারাগঞ্জে অস্তিত্ব সংকটে বাঁশ-বেত শিল্প

বাবলুর রহমান বারী, রংপুর
প্রকাশ: ৩১ জুলাই ২০২২, ১৫:২১

বাঁশ দিয়ে তৈরি পণ্য পরিবেশবান্ধব। ছবি: রংপুর প্রতিনিধি
বাড়ির পাশে সাজানো রয়েছে সারি সারি বাঁশ। সেই বাঁশগুলো থেকে বাছাই করা বাঁশটি সঠিক মাপে কাটা হচ্ছে। তারপর সেই বাঁশ থেকে তোলা হচ্ছে বেতি। সকাল থেকেই বাঁশ কাটা, বেতি তোলা আর সেই বেতি দিয়ে ডোল, খাঁচা, খাটি ডালি, টুকরি, কুলা, পলাইসহ বাঁশের জিনিসপত্র তৈরির কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন উপজেলার বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষরা।
রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার কুর্শা ইউনিয়নের ঘনিরামপুর পাটনীপাড়া গ্রামে গিয়ে এমন চিত্র দেখা যায়। বাঁশ দিয়ে তৈরি পণ্য পরিবেশবান্ধব হলেও বিকল্প প্লাস্টিক সামগ্রীর দাপটে অস্তিত্ব সংকটে রয়েছে এখানকার ঐতিহ্যবাহী বাঁশ-বেত শিল্প।
সরেজমিনে দেখা যায়, ওই গ্রামে প্রায় অর্ধ-শতাধিক পরিবার বাঁশ-বেত শিল্পের উপর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নির্ভরশীল। বাঁশ দিয়ে তৈরি কবুতর কাবু, খই চালা, চাউলোন, ভাড়কা জোড়া, হাতপাখা, দাঁড়িপাল্লা, চাঁই, ভোড়ং, জলেঙ্গা ডেরু, পাড়া, ডোল খাঁচা, খাটি ডালি, টুকরি ডালি, কুলা, পলাই, ঝুড়িসহ বিভিন্ন সামগ্রী বিক্রি করেই চলে তাদের জীবন সংসার। একটা সময় ছিল এই শিল্পে জড়িত ছিলেন ওই গ্রামের কয়েকশ শ্রমিক। সকাল হতেই বাঁশ কাটার আওয়াজ শোনা যেত ওই গ্রামের সর্বত্র। একদিকে বৈশ্বিক মহামারি করোনা, অন্যদিকে প্লাস্টিক পণ্যের ছড়াছড়িতে সেই চিরচেনা শব্দ অনেকটাই স্তব্ধ হয়ে গেছে। স্বাভাবিক নিয়মে সংসারে টান পড়েছে এই পেশায় জড়িতদের।
হাজারীহাট কালীবাড়ি সাহাপাড়ার জয় চন্দ্র হাজরা ও বকুল চন্দ্র দাস জানান, মাত্র কয়েক বছর আগেও এ অঞ্চলে বাঁশ সহজলভ্য ছিল। ৪০ থেকে ৫০ টাকায় একটি বাঁশ কেনা যেত। এখন একটি বাঁশের দাম দেড়শ থেকে দুইশ টাকা; কিন্তু সেই অনুপাতে বাঁশের তৈরি জিনিসপত্রের দাম বাড়েনি। বাঁশ দিয়ে একটি কুলা তৈরি করতে খরচ হয় ৫০ টাকা। অথচ বাজারে তা ৫০ টাকার বেশি বিক্রি করা যায় না। ৭০ বছর ধরে বংশ পরম্পরায় এই পেশা দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে আসছি।
করোনাকালে যৎসামান্য অনুদান দিলেও দুঃসময়ে কোনো সরকারি সাহায্য মেলেনি বলে অভিযোগ করেন। একটি বাঁশ থেকে ৮-১০টি ডোল তৈরি হয়। সব খরচ বাদ দিয়ে প্রতিটি পণ্য থেকে ১০-২০ টাকা লাভ হয়। তবে বর্তমানে আগের মতো বেশি লাভ হয় না। নিজেদেরই বিভিন্ন হাটে গিয়ে ফেরি করে এসব পণ্য বিক্রি করতে হয়। অতিকষ্টে তাদের বাপ-দাদার এই পেশা টিকিয়ে রাখতে ধারদেনা ও বিভিন্ন সমিতি থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে কাজ করছেন। শেকড় আঁকড়ে কোনো রকম জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন বলে জানান তারা।
উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান গোলাম সাইদেল কাওনাইন বাইজিদ বোস্তামী জানান, এটি একটি লাভজনক পেশা। বাঁশ শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে এ পেশার সঙ্গে জড়িতদের নিয়ে পরিকল্পনা করা দরকার।
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান লিটন জানান, এই উপজেলার কিছু মানুষ এখনো বাঁশ-বেত শিল্পের উপর নির্ভর করে জীবিকা নির্বাহ করে। এই কুটিরশিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।